Advertisement
E-Paper

‘জানি না, জল নামলে কোথায় মাথা গুঁজব!’

শনিবার সকালে ঘাটালের প্রতাপপুরে পৌঁছে দেখা গেল, ভাঙা বাঁধে দু’তিনটি ত্রাণ শিবির। স্কুলঘরে উঠেছেন ঘরছাড়ারা। বড় হাঁড়িতে চড়েছে রান্না। স্থানীয় যুবকেরা জানালেন, তাঁরাই চাঁদা তুলে সমস্ত ব্যবস্থা করছেন। ত্রাণ বলতে পানীয় জলের পাউচটুকুই আসছে নিয়মিত।

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৭ ০৩:৪৬
বিপর্যয়: বন্যার তোড়ে ধসে পড়েছে তিনতলা বাড়ি। ঘাটালের প্রতাপপুরে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

বিপর্যয়: বন্যার তোড়ে ধসে পড়েছে তিনতলা বাড়ি। ঘাটালের প্রতাপপুরে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

বন্যার সঙ্গেই ওঁদের বসবাস। প্রতি বছর দুর্গাপুজোর আনন্দে মাতার আগে বন্যায় ঘরহারা হওয়াটাই যেন অভ্যাস ঘাটালবাসীর। কিন্তু তাঁরাই বলছেন, এত বছরের বন্যার ইতিহাসকে ছাপিয়ে গিয়েছে এ বছরের তাণ্ডব। ভেঙেছে শিলাই নদীর বাঁধ। এই প্রথম বাঁধের পূর্ব কূলও প্লাবিত। জলেই গিয়েছে অজস্র ঘর।

শনিবার সকালে ঘাটালের প্রতাপপুরে পৌঁছে দেখা গেল, ভাঙা বাঁধে দু’তিনটি ত্রাণ শিবির। স্কুলঘরে উঠেছেন ঘরছাড়ারা। বড় হাঁড়িতে চড়েছে রান্না। স্থানীয় যুবকেরা জানালেন, তাঁরাই চাঁদা তুলে সমস্ত ব্যবস্থা করছেন। ত্রাণ বলতে পানীয় জলের পাউচটুকুই আসছে নিয়মিত।

শিবিরের আশ্রয়ে এক মাসের শিশু থেকে শতায়ু বৃদ্ধও। ‘‘ছেচল্লিশ সাল থেকে বন্যা দেখছি। আটাত্তরের কথা স্পষ্ট মনে আছে। সে বার সব হারিয়েছিলাম, ঘরটা দাঁড়িয়ে ছিল। এ বার তা-ও নেই। জানি না, জল নামলে কোথায় মাথা গুঁজব!’’ বললেন একশো বছরের যজ্ঞেশ্বর পাত্র। তাঁর নাতি আশিস বললেন, ‘‘মঙ্গলবার থেকেই জল বাড়ছিল। ভেবেছিলাম, বড় বিপদ হওয়ার আগে নেমে যাবে জল। কিন্তু নামা দূরের কথা, বাঁধ গেল ভেঙে।’’ তার পরে গোটা পরিবার অসহায়ের মতো দেখেছে কষ্টের বাড়িটাকে ভেঙে পড়তে। শুক্রবার সকালে উদ্ধারকারী দলের স্পিডবোটে সকলে উঠে বসেছেন এক কাপড়ে।

এক মাসের শিশুকন্যাকে বুকে নিয়ে বসে বছর বাইশের আশ্রিতা বেরা। ত্রাণশিবিরের বাসিন্দারাই তাঁর মেয়ের নাম দিয়েছেন বন্যা। ‘‘ঘরে এক ফোঁটা পরিষ্কার জল ছিল না বাচ্চাটাকে খাওয়ানোর মতো। এ ঘরে বসে টের পাচ্ছিলাম, পাশের ঘরের দেওয়াল ধসে যাচ্ছে,’’ বলতে বলতে চোখ মোছেন আশ্রিতা। জানা যায়, কাজলি, কমলির মতো ছ’টা গরুকে ফেলে এসেছেন ঘরে।

সব বাড়ির একতলা জলের নীচে। বড় বড় গাছগুলোর মাথা শুধু জেগে। আর তেমনই জলের ঘূর্ণিস্রোত! সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ এনডিআরএফ-এর স্পিডবোটে চড়ে বসা গেল। শুরু হল উদ্ধারকাজ। মাঝে মাঝেই আগাছা জড়িয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ইঞ্জিন। কখনও ডুবে থাকা গাছে ধাক্কা খেয়ে বোট উল্টে যাওয়ার দশা। আবার স্রোতের টানে নৌকা থামানোও মুশকিল।

প্রতাপপুরের মণ্ডলপাড়ায় বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো জেগে চার-পাঁচটা মাটির বাড়ি। অনেকটা উঁচুতে হওয়ায় চারপাশ ভেসে গেলেও ভেতরে জল ঢোকেনি এখনও। শুক্রবার থেকে তেমন ভারী বৃষ্টিও হয়নি অবশ্য। বাড়িগুলোয় রয়েছেন ১২টি শিশু-সহ ৩২ জন। বোটে উঠতে বলায় গৃহকর্তা শক্তি মণ্ডল, সুভাষ জানারা বলে দিলেন, ‘‘যা হয় হবে, ঘর ছেড়ে যাব না।’’ মহিলাদেরও একই জেদ, ‘‘১৯৮৫-র বন্যা দেখেছি। জানি, কিছু হবে না। জল নামতেও শুরু করেছে।’’ এ-ও দাবি করলেন, বাড়িতে নাকি খাবার জমানো আছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত পানীয় জল পৌঁছে দিচ্ছে। তাই অসুবিধে হচ্ছে না! একাধিক বাড়ির কাছে বোট নিয়ে গিয়েও ফিরতে হল এ ভাবেই। নির্দেশ, অনুরোধ, মিনতি— কাজ হল না কিছুতেই।

এনডিআরএফ-এর এক কর্তা বললেন, উদ্ধারকাজ শুরুর পর থেকেই তাঁরা এ রকম বাধা পাচ্ছেন বিভিন্ন জায়গায়। জোর করতে গিয়ে ক্ষোভের মুখেও পড়তে হয়েছে। ঘর ভাঙছে দেখে মানুষ পাশের বাড়িতে গিয়ে উঠেছেন, তবু নৌকা করে শিবিরে যেতে চাননি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, এই বিপর্যয়েও রাতের বেলায় ডিঙি নৌকা নিয়ে ফাঁকা ঘরে চুরিচামারি চলছে। সেই ভয়েই বাড়ি ছাড়তে চাইছেন না অনেকে।

Flood Ghatal বন্যা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy