শুনশান শহরের রাস্তা। ছবি: রণজিত্ নন্দী।
অন্য দিনের চেনা ছবিটা সাতসকাল থেকেই যেন উধাও! শুশান রাস্তায় যানবাহন নেই। যেটুকু যান আছে, তাতে যাত্রী নেই। দোকানপাট বন্ধ। সরকার এবং বিরোধীদের হুঙ্কার এবং পাল্টা হুঙ্কারে মানুষ বাড়িতেই বসে থাকল। এতো গেল শহর কলকাতার কথা।
রাজ্যের ছবিটা কিন্তু ভিন্ন। কোথাও রাস্তায় ফেলে পেটানো হল ধর্মঘটীদের। কোথাও দেখা গেল তৃণমূলের বাইক বাহিনীর দাপট। কোথাও আবার বোমাবাজি। অনেক জায়গাতেই এ সব হল, ‘নিষ্ক্রিয়’ পুলিশের সামনে। সব মিলিয়ে বুধবারের সাধারণ ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি হল প্রায় গোটা রাজ্যে।
যে ১৭টি বামপন্থী দল এ রাজ্যে এ দিনের ধর্মঘট সমর্থন করেছিল। তাদের তরফে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘‘যে ভাবে আজ রাজ্য জুড়ে ধর্মঘট সমর্থনকারীদের উপর শাসক দল এবং পুলিশের হামলা হয়েছে, প্রাক্তন সাংসদ, বিধায়ক থেকে শুরু করে প্রচুর বামপন্থী নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ দিবস পালন করা হবে।’’সকাল থেকে কোথাও পথ অবরোধ, তো কোথাও বা ট্রেনের তারে কলা পাতা ফেলা। সব মিলিয়ে যে অল্প সংখ্যক মানুষ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন, তাঁদের নাজেহালের আর অন্ত ছিল না। ধর্মঘট সফল করতে রীতিমতো পথে নামলেন বন্ধ সমর্থকারীরা। তাদের পাল্টা হিসেবে আবার শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদেরও দেখা যাচ্ছে রাস্তায়। কোথাও কোথাও ধর্মঘটীদের উপর চড়াও হতেও দেখা গিয়েছে তাদের। বহরমপুরে রীতিমতো ধর্মঘটীদের বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
ধর্মঘটের দিনে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার পথচিত্র
ধর্মঘটের দিন কাজে যোগ না-দিলে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের এক দিনের বেতন কাটা যাবে। চাকরি জীবন থেকেও এক দিন বাদ দিয়ে দেওয়া হবে বলে আগেই নির্দেশ জারি করেছে সরকার। সেই পরিস্থিতি এড়াতে সরকারি কর্মচারীদের একাংশ মঙ্গলবার রাতে অফিসেই থেকে গিয়েছেন। বাকিদের অনেকেই এ দিন ভোর বেলাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। ট্রেন বা বাসে করে শহরের উদ্দেশে রওনা দেন। ছ’টার আগেই তাঁরা পৌঁছে যান শিয়ালদহ বা হাওড়া স্টেশনে। ওই সময় দুই স্টেশনের বাইরেই অনেক ট্যাক্সি বা সরকারি-বেসরকারি বাস ছিল। কিন্তু, বেলা যত বেড়েছে ততই তার সংখ্যা কমতে শুরু করে।
ধর্মঘট শুরু হওয়ার কথা সকাল ছ’টা থেকে। অথচ, এ দিন সকাল পৌনে পাঁচটা থেকে ধর্মঘটের সমর্থকরা রামপুরহাট স্টেশনে রেল অবরোধ শুরু করেন। পরে সকাল ছ’টা নাগাদ রামপুরহাট থানার পুলিশ এবং রেল পুলিশ এসে সেই অবরোধ তুলে দেয়। দু’তরফের মধ্যে ধ্বস্তাধ্বস্তি হয় বলেও খবর পাওয়া গিয়েছে। সল্টলেকের করুণাময়ীতে ধর্মঘট সমর্থনকারীদের সঙ্গে বচসা বাধে পুলিশকর্মীদের। ধর্মঘটীদের দাবি, রাস্তার এক দিক থেকে তাঁরা মিছিল করে আসছিলেন। সেই সময় পুলিশ তাঁদের আটকায়। এর পর তাঁদের গ্রেফতার করা হলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়।
মেদিনীপুর শহরে তৃণমূলের বাইক বাহিনী। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
সকাল থেকে শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও সোদপুর স্টেশনে ওভারহেডের তারে কলাপাতা ফেলে দেওয়ায় শিয়ালদহ মেন শাখায় ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়। ঘণ্টাখানেক পর ওই শাখায় ফের ট্রেন চলাচল শুরু হয়, তবে তা নৈহাটি পর্যন্ত। এর পর ধর্মঘটের সমর্থকরা ওই স্টেশনে রেল অবরোধ করেন। কিছু ক্ষণ পর নিত্যযাত্রীদের সঙ্গে তাঁদের বচসা বাধে। এর পর পুলিশ এসে তাঁদের রেললাইন থেকে তুলে দেয়। সেই সময় অবরোধকারীদের উদ্দেশে পাথর ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। পাথরের আঘাতে আহত হন এক মহিলা অবরোধকারী।
বন্ধে ব্যাঙ্ক-ডাক-বিমা-পরিবহনে সাড়া, অন্যত্র প্রভাব কম
অন্য দিকে, শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার বিভিন্ন স্টেশনে ওভারহেডের তারে কলাপাতা ফেলে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ক্যানিং, লক্ষ্মীকান্তপুর, ডায়মন্ডহারবার এবং বজবজ শাখার বিভিন্ন স্টেশনে প্রচুর যাত্রী আটকে পড়েন। হাওড়া শাখার বর্ধমান মেন লাইনে অবরোধের জেরে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সকাল সওয়া ছ’টা নাগাদ ডাউন অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস আটকানো হয় দুর্গাপুর স্টেশনে। অবরোধকারীরা লাইনের উপর বসে পড়লে রেলপুলিশ এবং আরপিএফ তাঁদের সেখান থেকে তুলে দিলে ফের ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
রেলের পাশাপাশি সড়ক পথও আটকে দিয়েছেন ধর্মঘটকারীরা। দিন সকাল সওয়া ৬টা নাগাদ যশোহর রোডের উপর লেকটাউন-বাঙুর অ্যাভিনিউ এলাকায় পথ অবরোধ করেন তাঁরা। সেখানে বাস থেকে যাত্রী নামিয়ে দেওয়ার মতো অভিযোগও ওঠে। পরে পুলিশ এসে অবরোধ তুলতে গেলে তাদের সঙ্গে বচসা বাধে অবরোধকারীদের। মেদিনীপুর শহরে যেমন পথে নামতে দেখা গিয়েছে তৃণমূলকর্মীদের। কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড থেকে যাতে স্বাভাবিক ভাবে বাস চলাচল করতে পারে সে জন্য সকাল থেকেই সেখানে হাজির ছিলেন তৃণমূল জেলা সভাপতি দীনেন রায়।
শহর কলকাতার অন্যতম লাইফলাইন মেট্রো চলাচল এ দিন সকাল থেক স্বাভাবিক থাকলেও সেখানে যাত্রী সংখ্যা অন্য দিনের তুলনায় বেশ কম। একই অবস্থা সড়ক পথেও। সরকারি-বেসরকারি বাস এবং ট্যাক্সি চলাচল করলেও তাতেও যাত্রী সংখ্যা হাতেগোনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy