প্রতিবাদে মাথা কামানোর পরে গ্রামের বাড়িতে রাসমণি। —নিজস্ব চিত্র।
স্কুলে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক পদে চাকরিপ্রার্থীদের ধর্না-আন্দোলনের এক হাজার দিন পূর্তি ছিল শনিবার। সে দিন কলকাতার জমায়েতে মাথার চুল কামিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন অনেক আন্দোলনকারী। তাঁদের অন্যতম কোলাঘাটের রাসমণি পাত্র কার্যত হয়ে উঠেছেন প্রতিবাদের মুখ। গতকাল ধর্না মঞ্চে কেঁদেও ফেলেছিলেন তিনি। সেই রাসমণির সমর্থনে তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তাঁর নিজের গ্রাম ভোগপুর পঞ্চায়েতের কোদালিয়ার মানুষ।
রাসমণির ভাই কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখাশোনার দায়িত্ব রাসমণির উপরেই। পড়াশোনায় প্রথম থেকেই তিনি ভাল। এডুকেশনে এমএ পাশের পরে বিএড করেছেন। ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় একাদশ-দ্বাদশ বিভাগে উত্তীর্ণ হন রাসমণি। প্রথম দফার ইন্টারভিউয়ে ডাক পান। কিন্তু চূড়ান্ত মেধা তালিকায় ঠাঁই হয়নি। নাম প্রকাশ হয় অপেক্ষমাণের তালিকায়।
নিয়োগে দুর্নীতি-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরে রাসমণিও ২০২০ সালে যোগ দেন ধর্মতলার ধর্নামঞ্চে। তাঁর ছেলের বয়স তখন মাত্র ৩ বছর। বাবা-মায়ের কাছে ছেলেকে রেখে রোজ কলকাতায় আসতেন। ফিরতেন রাতে। এই ভাবে কেটেছে তিনটি বছর। আশা ছিল, সরকার হয়তো তাঁদের দাবি মেনে নেবে। কিন্তু এক হাজার দিন পার হওয়ায় ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে রাসমণির। অন্য বেশ কয়েক জন আন্দোলনকারীর সঙ্গে মাথা কামিয়ে প্রতিবাদ জানান তিনি।
শনিবার রাতে কোদালিয়ায় গ্রামের বাড়িতে ফিরেছেন রাসমণি। টিভিতে তাঁকে মাথা কামাতে দেখেছেন গ্রামের মানুষজন। তাই এ দিন সকাল থেকে রাসমণির বাড়িতে ভিড় জমান তাঁর প্রতিবেশীরা। কাজল সাঁতরা নামে এক প্রতিবেশী বলেন, “টিভিতে ওকে মাথা কামাতে দেখে কেঁদে ফেলেছি। রাসমণি পড়াশোনায় খুবই ভাল। ও চাকরির জন্য সব করতে রাজি।” শ্রীকান্ত মাকড় নামে রাসমণির আর এক প্রতিবেশী বলেন, “মেয়েটি মাথা ন্যাড়া করেছে দেখে খুব খারাপ লাগছে। সরকার যোগ্য প্রার্থীদের চাকরির ব্যবস্থা করুক। ওর প্রতিবাদকে কুর্নিশ জানাই। আমরা সবাই ওর পাশে রয়েছি।”
আর রাসমণির স্বামী অমিত মাইতির কথায়, “করোনা-কালে আমরা দু’জনেই করোনায় আক্রান্ত হই। ১৫ দিন বিচ্ছিন্নবাসে থাকার পরে ও ফের ধর্নায় গিয়ে বসে। তিন বছর ধরে এটাই ওর রুটিন। ওর মারাত্মক জেদ। নিজের ইচ্ছাতেই ও এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই প্রতিবাদকে স্যালুট না করে থাকা যায় না।”
সোমবার ফের ধর্নামঞ্চে যাবেন রাসমণি। মাথা কামিয়ে প্রতিবাদ প্রসঙ্গে রাসমণি বলেন, “এটা আমার ব্যক্তিগত বিষয় নয়। সমস্ত যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগের দাবিতে আমার এই পদক্ষেপ। সোমবারও ধর্নামঞ্চে যাব। সেখানে বৈঠকও রয়েছে। তার পর যা বলার বলব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy