E-Paper

অনুজেরা ঘুরছেন, প্রভাব নিয়েই সংশয় স্থানীয়দের

লালগড়ের পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত পুনরুদ্ধারে অনুজের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কিত ভাই ডালিম পাণ্ডে এবং আরও তিন জামিনপ্রাপ্ত নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছে সিপিএম। দল বলছে, অনুজরা ঘরে ফেরায় কর্মীরা উজ্জীবিত।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৩ ০৬:৫৩
Anuj Pandey

ধরমপুরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুজ পাণ্ডে। —নিজস্ব চিত্র।

এ লড়াই শুধু ব্যালটের নয়, অতীত মোছারও বটে!

ভোটের লালগড়ে জনসংযোগে ব্যস্ত নেতাই-গণহত্যায় জামিনপ্রাপ্ত সিপিএম নেতা অনুজ পাণ্ডে। লালগড়ের পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত পুনরুদ্ধারে অনুজের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কিত ভাই ডালিম পাণ্ডে এবং আরও তিন জামিনপ্রাপ্ত নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছে সিপিএম। দল বলছে, অনুজরা ঘরে ফেরায় কর্মীরা উজ্জীবিত। স্থানীয়দের কেউ কেউ প্রকাশ্যে বলছেন, এলাকাবাসীর ভরসা ফিরছে। তবে লালগড়বাসীর একটা অংশ নিশ্চিত, অতীত মুছে অনুজদের সাম্রাজ্য ফিরে পাওয়া কার্যত অসম্ভব।

শুক্রবার সকাল থেকেই বৃষ্টি। লালগড়ের ধরমপুরে সিপিএমের শাখা কার্যালয়ের সামনে বসে গুটিকয় কর্মী। মাঠে ম্যারাপ বাঁধা চলছে। আজ, শনিবার মাওবাদী পর্বে নিহত দলের নেতা-কর্মীদের স্মরণসভা হবে। উত্তর গোহমিতে জনসংযোগ সেরে খানিক পরে মোটরবাইক চালিয়ে এলেন অনুজ। চেয়ার পেতে বসে গোলমরিচ মেশানো চায়ে তৃপ্তির চুমুক দিয়ে বললেন, ‘‘তৃণমূলের সংগঠিত চুরি-ডাকাতির বিরুদ্ধে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ জানাবেন। জনসংযোগে গিয়ে সেটা বেশ বুঝছি। রোজ ঘুরছি তো।’’

বিচারাধীন মামলায় অভিযুক্ত সিপিএম নেতারা প্রকাশ্যে প্রচারে নেই। তবে কর্মীরা জানালেন, এলাকা পুনরুদ্ধারে ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্কে’র মাথা অনুজই। ফোনে খবরাখবর নিচ্ছিলেন। তারই ফাঁকে জানালেন, শনিবারের স্মরণসভাটি কার্যত ভোটের কর্মিসভাই হয়ে যাবে।

ধরমপুরের চা দোকানি, তরুণ মিঠুন মাহাতো বললেন, ‘‘উনি (অনুজ) ফেরায় এলাকার মানুষ খুশি। পঞ্চায়েতের পরিষেবা প্রকৃত উপভোক্তারা পাননি। ক্ষোভ রয়েছে। এ বার মানুষ প্রতিবাদের ভরসাটা পাচ্ছেন।’’ প্রবল বৃষ্টিতেই মাঠে কাজ করছিলেন উত্তর গোহমির স্বপন বেজ। প্রশ্ন শুনে চারপাশটা দেখে নিলেন। তার পরে বললেন, ‘‘কে এল গেল, তাতে আমাদের মতো গরিবের কী আসে যায়!’’

শিমলাডাঙার বিনয় সিংহ গোহমিডাঙা চকে পানগুমটি চালান। বললেন, ‘‘অনুজ পাণ্ডে এলাকার বিভিন্ন জনের সঙ্গে দেখা করছেন। তবে মানুষের মনে কী আছে, কী করে বলব!’’ মধ্যমকুমারী গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবকের মতে, ‘‘এক সময় অনুজ ছিলেন এলাকার বাঘ। কিন্তু এখন তিনি জেল ফেরত। এটা ঠিক পঞ্চায়েতের সীমাহীন চুরির বিরুদ্ধে মানুষ জবাব দিতে চান। কিন্তু অনুজকে দেখে মানুষ বদলে দেবেন, এমন কথা হলফ করে বলা সম্ভব নয়।’’ স্থানীয় এক শিক্ষকও জানালেন, অনুজ গ্রামে গ্রামে গিয়ে লোকজনের সঙ্গে দেখা করছেন। মনে হচ্ছে ভোটে জোর লড়াই হবে। বেলাটিকরি অঞ্চলের যুবক পেশায় রাজমিস্ত্রি লক্ষ্মণ দিগার, দীপক সরকারদের কথায়, ‘‘অনুজ, ডালিম, খলিলুদ্দিন, চণ্ডী করণের মতো নেতারা ফেরায় এলাকার মানুষ নির্ভয়ে ভোটটা অন্তত দিতে পারবে।’’

প্রাক্তন উপপ্রধান জয়ন্তী মাঝিকে এ বার ধরমপুর পঞ্চায়েতের ৩ নম্বর আসনে প্রার্থী করেছে সিপিএম। পেশায় আশাকর্মী জয়ন্তী বলছেন, ‘‘অনুজদাকে সবাই সমীহ করে। উনি এলাকায় ফেরায় পঞ্চায়েতের চুরি-ডাকাতির বিরুদ্ধে এ বার মানুষ রায় দেবেন।’’ তৃণমূল অবশ্য এ সবে আমল দিচ্ছে না। ব্লক সভাপতি তারাচাঁদ হেমব্রমের দাবি, ‘‘সিপিএমের লোকজন নেই। আর ১২ বছর পরে এলাকায় ফিরে অনুজও কিছু করতে পারবেন না।’’ জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুরও মত, ‘‘অনুজ-ডালিমদের দিন শেষ। আর তৃণমূলেরও বিদায়বেলা ঘনিয়ে এসেছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

WB Panchayat Election 2023 CPIM lalgarh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy