Advertisement
E-Paper

‘খুনি’ রাজাকে দেখে তেড়ে এলেন মহিলারা

মাইশোরায় নিহত তৃণমূল নেতা কুরবানের শা’য়ের অফিসে বৃহস্পতিবার নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওই হত্যাকাণ্ডের শ্যুটার তসলিম আরিফ ওরফে রাজাকে। ঘটনার পুনর্নিমানের জন্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৫৯
রাজাকে দেখেই বিক্ষোভ মহিলাদের (বাঁদিকে)। খামারবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রাজাকে। নিজস্ব চিত্র

রাজাকে দেখেই বিক্ষোভ মহিলাদের (বাঁদিকে)। খামারবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রাজাকে। নিজস্ব চিত্র

হেমন্তের পড়ন্ত দুপুর। পাঁশকুড়ার মাইশোরা বাজারে এসে দাঁড়াল প্রিজন ভ্যান-সহ পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ি। অন্য দিন দুপুরে যখন মাইশোরা বাজার থাকে ফাঁকা, তখন এ দিন ওই এলাকা থিকথিক করছে ভিড়ে।

মাইশোরায় নিহত তৃণমূল নেতা কুরবানের শা’য়ের অফিসে বৃহস্পতিবার নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওই হত্যাকাণ্ডের শ্যুটার তসলিম আরিফ ওরফে রাজাকে। ঘটনার পুনর্নিমানের জন্য। ওই খবর পেয়ে আশেপাশের প্রায় ৫০০ বাসিন্দা এ দিন জড়ো হন বাজার এলাকায়। রাজাকে দেখে সেখানে থাকা মহিলাদের একাংশ ইট নিয়ে তেড়ে আসেন। পুলিশের কাছে দাবি করেন, রাজাকে তুলে দিতে হবে তাঁদের হাতে।

এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে মাইশোরার রাজশহর বাজার এলাকায় পৌঁছন ঘটনার তদন্তকারী অফিসার অজয় কুমার মিশ্র এবং সার্কেল ইনস্পেক্টর স্বরূপ বসাক। সেখানে গাড়ি থেকে নেমে রাজা একটি বড় দোকানের দিকে এগিয়ে যায়। দোকানের পাশের সিঁড়ি দিয়ে নেমে গিয়ে রাজা একটি বন্ধ গুদাম ঘর পুলিশকে দেখায়। রাজা জানায়, কুরবানকে খুন করার দিন পনেরো আগে সে এবং তার তিন সঙ্গীকে ওই গুদামে রাত কাটিয়েছিল। পুলিশ তখন স্থানীয় এক বাসিন্দাকে ডেকে নিয়ে ওই দোকান ঘর এবং গুদামের মালিকের নাম জানতে চায়। ওই ব্যক্তি জানান, বন্ধ থাকা দোকানটি রাজশহর গ্রামের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য শীতল মান্নার। তিনি বর্তমানে ফেরার।

এর পরে পুলিশ রাজাকে নিয়ে রওনা দেয় মাইশোরায় তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের দিকে। দুপুর ১টা ৪৮ মিনিটে তারা মাইশোরা বাজারে পৌঁছয়। ততক্ষণে মাইশোরা বাজারে জড়ো হয়েছেন শ’পাঁচেক মানুষ। যাঁদের অধিকাংশই মহিলা। যে ঘরে কুরবান খুন হয়েছিলেন, পুলিশ প্রথমেই সেই ঘরের সামনের রাস্তা দড়ি দিয়ে ঘিরে দেয়। দুপুর ১টা ৫৩ মিনিটে রাজাকে গাড়ি থেকে নামায় পুলিশ। গাড়ি থেকে নেমেই রাজা পুলিশকে দেখায়, ঘটনার দিন কোন জায়গায় তারা মোটরবাইক থেকে নেমেছিল।

পুলিশের সামনে রাজা জানায়, দুর্গাপুজোর নবমীর রাতে কুরবানের অফিসের কিছুটা দূরে দু’টি মোটবাইকে করে তারা পাঁচজন এসেছিল। সে এবং তিনজন বাইক থেকে নেমে কুরবানের অফিসের দিকে হেঁটে রওনা দেয়। অন্য দু’জন বাইক দু’টি ঘুরিয়ে নিয়ে পাঁশকুড়ার দিকে মুখ করে দাঁড়ায়। রাজার সঙ্গে থাকা দু’জনের একজন কুরবানের অফিসের দরজার সামনে দাঁড়ায়। বাকিরা ঢুকে যায় অফিসে। রাজা এ দিন পুলিশকে জানায়, কুরবানের অফিসের ঠিক উল্টো দিকে তখন কয়েকজন তাস খেলছিলেন। গুলির শব্দ শুনে তাঁরা রাজাদের লক্ষ্য করে ইঁটও ছোড়ে।

মাইশোরা বাজারে ঘটনার পুনর্নির্মাণের পর রাজাকে গাড়ি তোলার সময় ধেয়ে আসেন মহিলারা। তাঁদের হাতে রাজাকে তুলে দেওয়ার দাবিও জানান তাঁরা। বেশ কয়েকজন মহিলার হাতে পাথরও ছিল। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে পুলিশ ছোট্ট জায়গাতেই কোনওক্রমে গাড়ি ঘুরিয়ে রাজাকে নিয়ে মাইশোরা ছাড়ে।

মাইশোরা থেকে পুলিশ যায় রাজশহর গ্রামের ফেরার প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য শীতল মান্নার বাড়ির পাশের একটি খামারবাড়িতে। পুলিশের দাবি, ওই খামারবাড়িতে রাজা এবং তার দলবল এক রাত, একদিন কাটিয়েছিল বলে অভিযোগ। খামারবাড়িতে রাজার সঙ্গে আনা হয় আর এক ধৃত দীপক চক্রবর্তীকে। পুলিশের দাবি, দীপক ফেরার শীতলের ডান হাত। খামার বাড়িতে রাজা এবং দীপককে মুখোমুখি জেরা করে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রের খবর, জেরার মুখে দীপক জানায় যে, সে ওই খামার বাড়িতে রাজাদের সঙ্গে দেখা করতে আসত। রাজাও স্বীকার করে খামার বাড়িতে তাদের থাকাকালীন দীপকের আসা যাওয়ার কথা। দীপক আরও জানায়, রাজাদের খামার বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিল শ্যামবল্লভপুর গ্রামের এক নেতা গোলাম মেহেন্দি ওরফে কালু। কালুই তাদের খাবার এনে দিত বলে দীপক পুলিশকে জানায়।

খামারবাড়ির পরিচারককেও এ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। যে ঘরে রাজা এবং তার সঙ্গীরা রাত কাটিয়েছিল, রাজাকে নিয়ে পুলিশ সেই ঘরগুলিও ঘুরে দেখে। পুলিশ জানিয়েছে, আপাতত তারা শীতল মান্না এবং গোলাম মেহেন্দি ওরফে কালুর খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে।

TMC Panskura Qurban Sha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy