Advertisement
E-Paper

মৃণালের টানেই পদাতিক কলকাতা

মৃণাল সেন তাঁর শেষ ছবি করেছেন প্রায় দেড় যুগ আগে। সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিজগতের বিশিষ্টদের মাঝে শেষ কয়েক বছর কার্যত দেখা যায়নি তাঁকে। তবু তাঁর দীর্ঘ ছায়াটি যে বিদগ্ধ বাঙালি মননে ছাতা হয়ে রয়েছে, তা বুঝিয়ে দিল ২০১৯-এর প্রথম দিনটি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৫১
অন্তিম: বন্ধু মৃণাল সেনকে শেষ বার দেখে গেলেন শঙ্খ ঘোষ। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

অন্তিম: বন্ধু মৃণাল সেনকে শেষ বার দেখে গেলেন শঙ্খ ঘোষ। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

মৃণাল সেন তাঁর শেষ ছবি করেছেন প্রায় দেড় যুগ আগে। সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিজগতের বিশিষ্টদের মাঝে শেষ কয়েক বছর কার্যত দেখা যায়নি তাঁকে। তবু তাঁর দীর্ঘ ছায়াটি যে বিদগ্ধ বাঙালি মননে ছাতা হয়ে রয়েছে, তা বুঝিয়ে দিল ২০১৯-এর প্রথম দিনটি। মঙ্গলবার বিকেল সওয়া চারটে নাগাদ মৃণালের দেহ কেওড়াতলার বৈদ্যুতিন চুল্লিতে ঢুকে গিয়েছে। তার আগে শোকযাত্রায় বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে অখ্যাত চলচ্চিত্র-রসিকেরাও একাকার।

রবিবার প্রয়াত ৯৫ বছরের প্রবীণ চলচ্চিত্রকারের শেষকৃত্যে থাকবেন বলে কয়েক ঘণ্টার জন্য বিমানে কলকাতায় উড়ে এসেছিলেন পরিচালক-অভিনেত্রী নন্দিতা দাশ। শ্মশানযাত্রী পদাতিকদের ভিড়ে শামিল হতে লাঠি ধরে হাজির প্রবীণ মাধবী মুখোপাধ্যায়। অঞ্জন দত্তরা বেশ বকেঝকেই ‘বাইশে শ্রাবণ’-এর নায়িকাকে গাড়িতে চড়ে আসতে বললেন। মধ্য আশির শঙ্খ ঘোষকে পথে নামা থেকে বিরত করা গেল না। রাসবিহারী মোড়ের কিছুটা আগেই গাড়ি থেকে নেমে মৃণালপুত্র কুণালের হাত ধরে হাঁটতে থাকলেন তিনি।

দেশপ্রিয় পার্ক থেকে রাসবিহারী অ্যাভিনিউ হয়ে কেওড়াতলা— কিলোমিটার দেড়েকের শোক-যাত্রা। ওই তল্লাট তখন দৃশ্যতই মৃণাল সেন সরণি। কুণালবাবু বলছিলেন, ‘‘এই জায়গাটা আমাদের পদ্মপুকুর রোডের বাড়ি থেকে এত কাছে, অনেক ছবির জন্যই শুটিং এখানে হয়েছে।’’

মৃণালের ছেলে-বৌমা সোমবার রাত দু’টোয় শিকাগো থেকে দোহা হয়ে কলকাতায় নেমেছেন। কুণালের কথায়, ‘‘মা চলে যাওয়ার পরে একলা হয়ে গেলেও বাবার শরীর তুলনায় নীরোগ ছিল। বার্ধক্যযন্ত্রণার ক্লেদ থেকে খানিক রেহাই পেয়েছেন,

এটাই সান্ত্বনা।’’

মৃণালের ইচ্ছা অনুযায়ী, সরকারি তরফে সম্মাননা এড়িয়ে যায় তাঁর পরিবার। তবে প্রিয়জন হিসেবে শোকযাত্রায় শামিল হন সিপিএমের বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তীরা। ফুলমালার বাহুল্য নেই। অপর্ণা সেন ‘মৃণালদা’কে সাদা গোলাপের একটা তোড়া দিলেন। এসেছিলেন, মৃণালের প্রথম যৌবনের বন্ধু, চলচ্চিত্র পরিচালক নৃপেন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়। মৃণালের শেষ দিনগুলির সঙ্গীরা, ডাক্তার-বন্ধু অধৃষ্য কুমারও ছিলেন শেষ পর্যন্ত। কুণালকে জড়িয়ে ধরলেন সত্যজিৎ-পুত্র, চিত্রপরিচালক সন্দীপ রায়। শোক-মিছিলে ছিলেন প্রসেনজিৎ, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অনীক দত্ত, কৌশিক সেন ও ঋদ্ধি সেন। শ্মশানে এলেন মমতা শঙ্কর, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়রাও।

গত নভেম্বরেই নিজের ৮ বছরের ছেলেকে মৃণালদার সঙ্গে ভাব করাতে পদ্মপুকুরের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন নন্দিতা। বললেন, ‘‘পরিচালক ও মানুষ মৃণালদাকে দেখে অজান্তেই কত কী শিখেছি!’’

শোকের মুহূর্ত তখন এক পরিপূর্ণ জীবন উদ্‌যাপনেরও লগ্ন হয়ে উঠেছে।

Mrinal Sen Last Journey
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy