Advertisement
E-Paper

কাজ হবে তো, সংশয়ে পঞ্চপীঠ

আগের দিনই মুখ্যমন্ত্রী জেলার পাঁচ সতীপীঠকে কেন্দ্র করে একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যটনকেন্দ্র গড়ার কথা ঘোষণা করে গিয়েছেন। প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। কিন্তু, এরই মধ্যে কেউ কেউ পর্যটন দফতরের গড়িমসি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:১২
ফেরা। বোলপুর থেকে ফিরতি কপ্টার ধরার আগে হেলিপ্যাডে মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার ছবিটি তুলেছেন বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

ফেরা। বোলপুর থেকে ফিরতি কপ্টার ধরার আগে হেলিপ্যাডে মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার ছবিটি তুলেছেন বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

আগের দিনই মুখ্যমন্ত্রী জেলার পাঁচ সতীপীঠকে কেন্দ্র করে একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যটনকেন্দ্র গড়ার কথা ঘোষণা করে গিয়েছেন। প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। কিন্তু, এরই মধ্যে কেউ কেউ পর্যটন দফতরের গড়িমসি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। তাঁদের যুক্তি, আগেও রাজ্য সরকারের তরফে সতীপীঠগুলির উন্নতির কথা শোনা গিয়েছে। কিন্তু পর্যটন দফতরের ঢিলেমিতে কাজ তেমন এগোয়নি।

বক্রেশ্বর, নন্দীকেশ্বরী, নলাটেশ্বরী, ফুল্লরা ও কঙ্কালীতলা— এই পীঠগুলি নিয়েই জেলার পাঁচ সতীপীঠ। স্থানীয় সূত্রেরই খবর, এর সবক’টিই কমবেশি অবহেলার শিকার। নলাটেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত অরুণ চক্রবর্তী, কোষাধ্যক্ষ বিনোদ মস্করা, সভাপতি গোপাল ভট্টদের অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার সফরে এসে জেলার পাঁচটি সতীপীঠ ঘিরে পর্যটন ব্যবস্থা জোরদার কথা বলছেন। অথচ পর্যটন দফতরের আধিকারিকদের কোনও উদ্যোগই চোখে পড়েনি।’’ একধাপ এগিয়ে তাঁদের অভিযোগ, রচপাল সিংহ পর্যটন মন্ত্রী থাকাকালীন পঞ্চপীঠ ঘিরে বাস চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েও চালু করে যাননি। পরে পর্যটনমন্ত্রী হয়ে কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীও তারাপীঠে এসে জেলার পর্যটন নিয়ে উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিলেও রাখেননি। তবে অনেকেই এখনই নিরাশ হতে চান না। তাঁদের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যখন বলেছেন তখন কাজ কিছু হবেই।’’

নলাটেশ্বরী মন্দির কমিটির যেমন দাবি, পর্যটনের স্বার্থে অনেক কিছুই করার ছিল। এলাকার বাসিন্দা লাল্টু ভট্টাচার্য, বাপি ভট্টাচার্য, মৃন্ময় মজুমদারদের প্রস্তাব, নলাটেশ্বরী মন্দির, বৈধরা জলাধার, আকালিপুরের গুহ্যকালীকা মাতা, মহারাজ নন্দকুমারের স্মৃতি বিজড়িত ভদ্রপুর গ্রাম, পাল আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশনের জন্যে নলহাটির বারা গ্রামকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে। মুরারই থানার বাসিন্দা অর্নিবাণ জ্যোতি সিংহ, রূপনাথ রায়, দীনবন্ধু মণ্ডলদের আবার অভিযোগ, সরকার নতুন কর্মসূচির কথা বলছে, কিন্তু সেন-যুগের প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন পাইকর ধ্বংসের মুখে। তা ছাড়া পাইকর, জাজিগ্রাম, ভাদিশ্বর ও কনকপুরকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ার দাবিও দীর্ঘ দিনের। কিন্তু আজ পর্যন্ত পর্যটন দফতরের কোনও ভূমিকা দেখা যায়নি।

বক্রেশ্বর শুধু শৈব তীর্থক্ষেত্র নয়, সতীপীঠ বা শক্তিপীঠ বলেও পরিচিত। প্রচলিত মতে, সতীর দুই ভ্রু-র মধ্যস্থল বা মন পড়েছিল বক্রেশ্বরে। পর্যটকরা ছুটে আসেন এই সতীপীঠের টানেই। কিছু সমস্যা রয়েছে এখানেও। অনেকের আবার অভিযোগ, রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে তারাপীঠ বা বক্রেশ্বরের থেকে পিছিয়ে সাঁইথিয়ার নন্দীকেশ্বরী মন্দির। প্রশাসনের ওয়েবসাইটে পর্যটন কেন্দ্রের তালিকায় নন্দীকেশ্বরী মন্দিরের নাম না থাকাতেও ক্ষোভ রয়েছে। সেই ছবিটা পাল্টাতে সম্প্রতি কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে সাঁইথিয়া পুরসভা। বসানো হয়েছে নজর-তোরণ। আধুনিক শৌচালয় গড়ার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে।

এ দিকে, ফুল্লরা, কঙ্কালীতলা এলাকায় পর্যটনে উন্নয়নের প্রশ্নে অসন্তোষ রয়েছে। ফুল্লরায় একটি সরকারি গেস্ট হাউস বাম আমলেই তৈরি হয়েছিল। সেটি চালু রয়েছে। এই সরকারের আমলেই লাভপুরে তারাশঙ্করের ধাত্রীদেবতা ও কাছাড়িবাড়ি সংস্কার করা হয়েছে। রাস্তাঘাটের উন্নতিও হয়েছে। এলাকাবাসীর অবশ্য অভিযোগ, কিছু কাজ হলেও সুসংহত পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। এক অবস্থা কঙ্কালীতলাতেও। রাস্তাঘাট, পানীয় জলের উন্নতি হলেও সার্বিক পরিকল্পনার অভাবে ক্ষোভ রয়েছে।

আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে বক্রেশ্বরেও। যুব আবাসের সংস্কার হয়েছে। উষ্ণ প্রস্রবণ এলাকায় ঘাট বাঁধানো হয়েছে। রাস্তার উন্নতি ছাড়াও বক্রেশ্বর-পাথরচাপুড়ি উন্নয়ন পর্ষদ হয়েছে। কিন্তু, এখনও পর্যটকদের থাকা এবং যাতায়াত ব্যবস্থা এবং বক্রেশ্বরকে ঘিরে পর্যটন ক্ষেত্র সেই অর্থে উন্নত হয়নি। নন্দীকেশ্বরী তলাতেও কোনও সরকারি গেস্ট হাউস তৈরি হয়নি। ফলে পর্যটকেরা ইচ্ছে করলেও এখানে থাকতে পারেন না। সে নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে।

একই অবস্থা নলাটেশ্বরীতেও। নলহাটিতে বেশ কিছু এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপ নেই। নলাটেশ্বরী মন্দিরে আসার জন্য সরকারি বাস নেই। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলেই পর্যটকেরা তারাপীঠের মতো নলাটেশ্বরী মন্দির দর্শন সহজে আসতে পারতেন। অনেকের আবার দাবি, নলহাটিকেও তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের আওতায় আনা হোক। জেলার পর্যটন ব্যবস্থা উন্নয়নে ক্ষোভ শুনে অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) রঞ্জন ঝা বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী জেলার পর্যটন ব্যবস্থার উন্নতির নির্দেশ দিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত কোথাও কোথাও কিছু সমস্যা থাকতে পারে। সে সব জেনে, বুঝে নিয়েই কাজ হবে।’’

CM Tourist place
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy