Advertisement
E-Paper

মোদের গহিন দহ কী দোষ করল

তার কালো জলের দিকে ঠায় চেয়ে বিড় বিড় করে  চলেছেন, ‘‘এতগুলো মানুষকে গিলে খেলি!’’ ভাণ্ডারদহের এমন প্রাণখাকি ইতিহাস অবশ্য নতুন নয়।  গত ২০১১ সালের ১৪ এপ্রিল হরিহরপাড়ার লালনগর হাইস্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ৫ ছাত্রছাত্রী ডুবে মারা যায়।

অনল আবেদিন

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:০৫
তখনও চলছে দেহের খোঁজ। মঙ্গলবার দৌলতাবাদে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

তখনও চলছে দেহের খোঁজ। মঙ্গলবার দৌলতাবাদে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

বেশ একটা খানদানি চেহারা ছিল তার। কূল-কিনারাহীন বিলের স্রোত যেন নদীর কথা মনে পড়িয়ে দিত, জলের গভীরতা আদায় করে নিত গহিন সম্মোহন। সেই ভাণ্ডারদহ বিল তার পুরনো রূপ হারিয়ে ছিল অনেক দিনই। তা বলে, এমন রাক্ষুসী আখ্যা? না তেমন দুর্ভাগ্য হয়নি তার।

সোমবারের দুর্ঘটনার পরে এখন সেই বিলের কিনার ঘেঁষে হাটার ফাঁকে পড়শিরা বলছেন, ‘এতগুলো মানুষকে গিলে খেল ভান্ডারদহ!’ কিন্তু তার কি দোষ? একদা যে ভাণ্ডারদহে জমিদারেরা মুক্তো চাষ করতেন, সেই বিলের দু’পাড়ে বসে গত দু’দিন ধরে আঁচলের খুট দিয়ে চোখ মুছে চলেছে স্বজনের ভিড়। তার কালো জলের দিকে ঠায় চেয়ে বিড় বিড় করে চলেছেন, ‘‘এতগুলো মানুষকে গিলে খেলি!’’ ভাণ্ডারদহের এমন প্রাণখাকি ইতিহাস অবশ্য নতুন নয়। গত ২০১১ সালের ১৪ এপ্রিল হরিহরপাড়ার লালনগর হাইস্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ৫ ছাত্রছাত্রী ডুবে মারা যায়।

বিলের অদূরেই বাড়ির এক্রামূল আলির। মানুষের ভিড় আর তাঁদের হা-হুতাশের বহর দেখে বলছিলেন, ‘‘কী এমন দোষ করল বল দেখি আমাদের দহ! সকালে কোনও কুয়াশা ছিল না, কানে ফোন নিয়ে কেরামতি করতে গিয়ে বাস ডোবাল এক জন আর তার খেসারত গুনবে আমাদের ভাণ্ডারদহ!’’ পোশাকি নাম ভাণ্ডারদহ বিল হলেও স্থান বিশেষে নবাবি আমলের ওই নদী সদৃশ বিলের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নাম রয়েছে। ভগবানগোলা থানার পদ্মা এলাকা থেকে ও পরে ভৈরব থেকে উৎপত্তি হয়ে ৮-১০টি থানা এলাকার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিলটি মিশেছে নওদা থানার ত্রিমোহিনীতে। ওই খানে ভাণ্ডরদহ বিলের মতো আরও দু’টি নদী মিলিত হওায় নাম হয়ছে ত্রিমোহিনী। ওই মিলিত হওয়ার পর প্রবাহিত হয়ে নদিয়ার দিকে বয়ে গিয়েছে সে। তার আগে নানা জায়গা থেকে বয়ে আসার সময় ভাণ্ডারদহে নানা নাম— গোবরানালা, তোপখানা, পলাশবাটি, মথুরা বিল, বালির ঘাট, খাডিয়া, ভাণ্ডারদহ ত্রিমোহনী, আরও‘ অনেক নাম রয়েছে। তবে গত সোমবার ভোরে বাস ডুবে যাওয়া এলাকার নাম বালির ঘাট। নবাবি আমলে এই বিলটি ছিল নৌবাণিজ্যের অন্যতম পথ। ওই বিলের পাশেই রয়েছে কাটরা মসজিদ ও ঐতিহাসিক জাহানকোষা কামান। পদ্মা পার হয়ে ওই বিল দিয়েই ঢাকা থেকে ঐতিহাসিক জাহানকোষা কামান মুর্শিদাবাদে আনা হয়েছে এক সময়ে। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশির যুদ্ধে ইংরেজের কাছে নবাব সিরাজ হেরে যায়। তার পরে নদীপথে নবাব সপরিবার গোপনে রাজমহলে পালিয়ে যাওয়ার পথে ভগবানগোলার কাছে ইংরেজদের হাতে তাঁরা ধরা পড়ে যান।

ইতিহাসের ধুলোটুকু ঝেড়ে ফেললে ভান্ডারদহের সামাজিক কদরও কম নয়। এই বিলে পুজার পর সব সম্প্রদায়ের মিলিত সম্মেলন হয় ফি বছর। হয় বিজয়া সম্মিলনীর বাইচ উৎসবে। এ বিলের সংস্কার করা নিয়ে তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে তুমুল পাল্লা শুরু হয়েছিল বছর খানেকে আগে। সেই বিল সংস্কারের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে রানিতলা থানা এলায়াকায় বিলপাড়ে তৃণমূলের সভা থেকে ঘোষণাও করা হয়। সেই বিল দ্রুত সংস্কারের দাবিতে ভগবানগোলা বিলপাড় থেকে কয়েক দিনের পদযাত্রা শুরু করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভপতি অধীর চৌধুরী। তার পরে সবই এখন নীরব।

চুপ করে আছে ভাণ্ডারদহও।

Murshidabad Bus Accident Deep Canal Death Dead Bodies ভান্ডারদহ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy