Advertisement
E-Paper

‘ওদের সঙ্গে বসে চোলাই খেয়েছিলাম, বাঁচলাম কী করে, জানি না!’

কাঁপতে-কাঁপতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন মিশিলাল— ‘আমিও ওদের সঙ্গে বসে চোলাই খেয়েছিলাম। বাঁচলাম কী করে, জানি না। ভাইটা মরে গেল। এই আমি কান ধরছি, ভুল করেছি। আজ থেকে ওই বিষ ছোঁব না। সবাইকে বারণ করব!’’

সম্রাট চন্দ

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:০৮

আতঙ্ক আর শোকে থরথর করে কাঁপছিলেন বছর তেইশের মিশিলাল মাহাতো। নিজে যে এখনও বেঁচে রয়েছেন, সেটা যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না। আর মঙ্গলবার রাতে যে ভাইয়ের সঙ্গে বসে চোলাই খেয়েছিলেন সেই ভুটান যে বেঁচে নেই সেটাও মানতে পারছেন না!

কাঁপতে-কাঁপতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন মিশিলাল— ‘আমিও ওদের সঙ্গে বসে চোলাই খেয়েছিলাম। বাঁচলাম কী করে, জানি না। ভাইটা মরে গেল। এই আমি কান ধরছি, ভুল করেছি। আজ থেকে ওই বিষ ছোঁব না। সবাইকে বারণ করব!’’

বুধবার সকাল থেকেই থমথম করছে শান্তিপুরে হরিপুর পঞ্চায়েতের চৌধুরীপাড়া। মূলত নিম্নবিত্ত, খেটে খাওয়া মানুষের বাস এখানে। কাজ শেষে সন্ধ্যায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বেশির ভাগেরই গন্তব্য স্থানীয় চোলাই মদের ঠেক। তার উপর বুধবার স্থানীয় ইটভাটার ছুটির দিন। ফলে মঙ্গলবার আরও বেশি লোক জমা হয়েছিলেন। ঠেক থেকে ফিরেই একের পর এক অসুস্থ হতে থাকেন। বাড়ি-বাড়ি কান্নার রোল পড়ে যায়। এখনও হাসপাতালে ভর্তি অনেকে। সিঁটিয়ে রয়েছেন সকলে, আবার কার মৃত্যুর খবর আসে।

আরও পড়ুন: তিন বার ধরা পড়েও বেপরোয়া চোলাই-চাঁইরা

মিশিলালের ভাই ভুটান মাহাতো মার্বেলের কাজ করতেন। দু’বছর আগে বিয়ে করেছেন। কাজ থেকে বাড়ি ফিরে অভ্যাস ছিল এলাকারই চন্দন ওরফে গুলবার মাহাতোর বাড়ির চোলাইয়ের ঠেকে চলে যাওয়া। সঙ্গে চাট হিসেবে কোনও দিন নিয়ে যেতেন রুটি, কখনও ছোলা, কখনও বাড়িতে রাঁধা মাছ-মাংস। দোকানের খাবারও নিতেন অনেক সময়ে। সে দিনও কাজ সেরে ফিরে ভুটান চলে গিয়েছিলেন চোলাইয়ের আস্তানায়।

আরও পড়ুন: ক্রেতা সেজে বাজেয়াপ্ত ৮০০০ লিটার ‘র’ স্পিরিট

তাঁর স্ত্রী মেনকা মাহাতোর কথায়, “রোজই মদ খেতে যায়। কালও গিয়েছিল। রাতে বাড়ি ফিরে রুটি চাইল। করে দিলাম। রাত ৩টে থেকে শুরু হল বমি। শুধু বলছিল, ‘পেটে জ্বালা করছে। সহ্য করতে পারছি না।’ সকালে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। কিন্তু বাঁচানো গেল না।” একই ভাবে ঠেক থেকে ফিরে বমি করতে-করতে মারা গিয়েছেন ভ্যানচালক দুলাচাঁদ মাহাতো, দিনমজুর সুনীল মাহাতো, কাশীনাথ মাহাতোরা।

ওই পাড়াতেই অনেক দিন ধরে থাকেন ভালোয়া মাহাতো। স্বামী মারা যাওয়া ইস্তক ট্রেনে আনাজ বিক্রি করে তিন ছেলেমেয়েকে বড় করেছেন তিনি। চোলাই খেয়ে বালি বাজারে যাবেন বলে ট্রেনে উঠেছিলেন বছর ষাটের ভালোয়া। ট্রেনেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।

ঝাড়খণ্ড থেকে আসা মুন্না রায় ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতেন। আর ওই পাড়াতেই আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে এসেছিলেন রাঁচীর গৌতম শর্মা। তাঁরাও গিয়েছিলেন চোলাইয়ের ঠেকে। কেউই বাঁচেননি।

Death Adulterated Hooch Oath
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy