অপরাধীরা যে ছাড় পেয়ে যাবে না, এই আশা প্রায় সকলেরই ছিল। এ বার অপরাধীরা কী সাজা পায়, সে দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে গাংনাপুরের ডন বস্কো পাড়া। আজ, বুধবারই সাজা শোনাবে কলকাতার নগর দায়রা আদালত।
বাইরে থেকে অবশ্য সবই আপাত স্বাভাবিক। গাংনাপুরের কনভেন্ট অব জেসাস অ্যান্ড মেরি-তে যথারীতি পুরো সময় ক্লাস হয়েছে। রুটিনের কোনও হেরফের হয়নি। মঙ্গলবার দুপুরে আদালত যখন ছ’জনকে দোষী সাব্যস্ত করে, স্কুল ছুটি হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু স্কুলের শিক্ষক-কর্মী থেকে ডন বস্কো পাড়ার সাধারণ মানুষের মনে যে প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিল তা হল, সত্তরোর্ধ্ব ‘মাদার সুপিরিয়র’কে ধর্ষণের অভিযোগে কত জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে? কত জন যুক্ত ছিল? এ কি ধর্ষণ না গণধর্ষণ? কত জনের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ হল?
আইনমাফিক, সরাসরি ধর্ষণ না করলেও তাতে সাহায্য করা, এমনকী ধর্ষণের সময়ে ঘটনাস্থলে থেকেও বাধা না দিলে তা গণধর্ষণ বলে গণ্য হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কী ঘটেছিল, তার একটা আভাস ছিলই। সিআইডি তদন্তেই উঠে এসেছিল, সরাসরি ধর্ষণ এক জনই করেছে। কিন্তু এত দিন আদালতের সিলমোহর ছিল না। এ দিন কলকাতার নগর দায়রা আদালতের বিচারক কুসুম সিংহ তাঁর রায়ে জানান, বাংলাদেশি নাগরিক নজরুল ইসলাম ওরফে নজু একাই ধর্ষণ করেছিল। তাই তাকেই অপরাধী সাব্যস্ত করা হল। আইন মতে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন, সর্বনিম্ন সাত বছর জেল হতে পারে তার। সেই সঙ্গে জরিমানা।
২০১৫ সালের ১৩ মার্চ গভীর রাতে কয়েক জন পাঁচিল টপকে ঢোকে ওই কনভেন্টে। ওই ঘটনায় যুক্ত সন্দেহে ছ’জনকে পরে ধরা হয়। এক জন আজও ধরা পড়েনি। নজু ছাড়া চার জন— মহম্মদ সালিম শেখ, খেলাদুর রহমান, মিলন সরকার এবং ওহিদুল ইসলামকে ডাকাতি ও ষড়যন্ত্রের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এরা সকলেই বাংলাদেশি। তাদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, সর্বনিম্ন দশ বছর জেল হতে পারে। এদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে ডাকাতির ষড়যন্ত্র করার দায়ে গোপাল সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তার সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে সাত বছরের জেল।
রানাঘাট স্টেশন থেকে দুই কিমি দূরে মিশন রেল গেটের কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে রানাঘাট কনভেন্ট অব জেসাস অ্যান্ড মেরি। এ দিন বেলা গড়াতেই সামনে জড়ো হতে থাকে সংবাদমাধ্যমের গাড়ি। ছেলেমেয়েকে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্কুলে এসেছিলেন অভিভাবকরাও। দুপুর দেড়টা নাগাদ স্কুল ছুটি হয়।
ছ’জন দোষীসাব্যস্ত হয়েছে খবর আসার পরে স্বস্তির হাওয়া বয় গোটা গাংনাপুরে। কনভেন্টের প্রাক্তন ছাত্রী মেধা চক্রবর্তীর মনে পড়ে, ‘‘ঘটনার সময়ে উচ্চ মাধ্যমিক চলছিল। এর দু’দিন পরে আমরা যখন ঘরে পরীক্ষা দিচ্ছি, বাইরে তাকিয়ে দেখি হাজার হাজার মানুষ। শুনলাম, মুখ্যমন্ত্রী আসছেন। তিনি এসেওছিলেন, কিন্তু তাঁর পথ আটকে দেওয়া হয়।”
মেধার মতো অনেকেই বলেছেন, ‘‘ওই সময়ে দিনগুলো যে কী ভাবে কেটেছিল, তা বোঝানো শক্ত। যাদের জন্য এই অবস্থা হয়েছিল, তাদের যেন কঠিন শাস্তি দেওয়া হয়।” কনভেন্টের কোনও শিক্ষক বা কর্মী এ নিয়ে কথাও বলতে চাননি। এক শিক্ষক বলেন, “আমাদের প্রায় দেড় হাজার পড়ুয়ার মধ্যে ছাত্রী কমবেশি ছ’শো। তাই দুশ্চিন্তা থাকে। অপরাধী কঠোর সাজা পেলে আমাদের মনোবল বাড়বে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy