Advertisement
E-Paper

খুলে বেরিয়ে আসছে দরজা, শৌচালয় নিয়ে ক্ষোভ

এ বছর গঙ্গাসাগর মেলায় প্লাস্টিকের ব্যবহার চলবে না বলে প্রশাসনের নির্দেশ ছিল। শুধু তাই নয়, মেলা পরিষ্কার রাখারও কথা বলা হয়েছিল। আসলে এ বছর জেলা প্রশাসন থেকে উন্মুক্ত শৌচাগার এবং প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বন্ধ করে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল।

শান্তশ্রী মজুমদার

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:৩৫
এই হাল দরজার।—নিজস্ব চিত্র।

এই হাল দরজার।—নিজস্ব চিত্র।

এ বছর গঙ্গাসাগর মেলায় প্লাস্টিকের ব্যবহার চলবে না বলে প্রশাসনের নির্দেশ ছিল। শুধু তাই নয়, মেলা পরিষ্কার রাখারও কথা বলা হয়েছিল। আসলে এ বছর জেলা প্রশাসন থেকে উন্মুক্ত শৌচাগার এবং প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বন্ধ করে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু মেলা ঘুরে দেখা গেল কয়েকশো অস্থায়ী শৌচাগারের কী ভয়ানক অবস্থা। একই সঙ্গে, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগও বন্ধ হয়নি। তবে মেলা কর্তাদের দাবি, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নজরদারিও চলছে।

সাগর ব্লকে কচুবেড়িয়া ঘাট থেকে শুরু করে টানা গঙ্গাসাগর পর্যন্ত রাস্তার ধার দিয়ে প্রচুর টাকার পোস্টার, ব্যানার লাগানো হয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে ‘উন্মুক্ত জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করবেন না।’ ‘প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করবেন না।’ কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রচারের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকেই পুণ্যার্থীদের সমস্যায় প়ড়তে হচ্ছে। যেমন কয়েক লক্ষ‌ টাকা খরচা করে মেলায় বেশ কিছু সরকারি শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার বেশির ভাগেরই গুণমান খারাপ। মেলা শুরুর আগেই তা ভাঙতে শুরু করেছে।

মেলায় জলের ব্যবস্থা রয়েছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তরফে চারিদিকে পাইপ দিয়ে জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু বেশ কিছু জায়গায় পাইপ ফুটো হয়ে জল চুঁইয়ে পড়ে যাচ্ছে। অনেক শৌচাগারেই জল পৌঁছচ্ছে না। মধ্যপ্রদেশ থেকে এসেছিলেন বীররাজ সিংহ চৌহান। ওই প্রবীণের কথায়, ‘‘অনেক জায়গায় জলের সমস্যা রয়েছে। বাথরুমের দরজাও ঠিকমতো লাগছে না।’’ কিছু শৌচাগারে বাঁশের সঙ্গে লোহার কব্জা লাগিয় দরজা তৈরি করা হয়েছে। দু’একবার টানাটানি করতে গিয়েই খুলে ভেঙে আসছে সেগুলি। গঙ্গাসাগর বাসস্ট্যান্ডের কাছে রয়েছে এ রকমই প্রায় ৫০টি শৌচাগার। সেগুলিরও একই অবস্থা। তা ছাড়া বাথরুমগুলি অপরিষ্কার। ফলে মানুষ সেগুলি ব্যবহার করতে পারছেন না। বুক সমান উঁচু ওই শৌচাগারগুলিতে লজ্জা ঢাকছে না, অভিযোগ এমনও। ৫ নম্বর রাস্তার ধারের শৌচাগারেরও একই হাল।

মেলার এক প্রান্তে ৩ ও ৪ নম্বর রাস্তা-সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তৈরি শৌচাগারগুলি। যা তুলনায় উন্নতমানের। কিন্তু যে শৌচাগারগুলি পঞ্চায়েত সমিতি এবং প্রশাসন থেকে তৈরি করা হয়েছে, সেগুলির মান খুবই খারাপ। টাকা খরচ করা হয়েছে বটে, কিন্তু কোনও রকমে দায়সারা ভাবে কাজ সারা হয়েছে। কোচবিহার থেকে মেলায় এসেছিলেন অনুপ বৈরাগী ও তাঁর স্ত্রী। তাঁদের কথায়, ‘‘মহিলারা এই বাথরুম ব্যবহার করতে পারছেন না। দীর্ঘ সময় লাইন দিতে হচ্ছে।’’ পঞ্চায়েত সমিতি থেকে প্রায় হাজার দু’য়েক এ রকম শৌচালয় তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু তা বেশিরভাগই ঠিকঠাক নয়।

সমস্যার কথা অস্বীকার করছেন না মেলা কমিটির সভাপতি তথা সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা। তাঁর কথায়, ‘‘জেলা প্রশাসনের সহায়তায় আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, এ বার মেলাটিকে অন্য রকম তৈরি করতে। তবে কিছু খামতি রয়েই গিয়েছে। সেগুলি মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে বাথরুমে জল না থাকার যে সমস্যা ছিল, তা কিছুটা মিটেছে।’’ এ বছর গঙ্গাসাগর মেলাতেও উন্মুক্ত শৌচাগারবিহীন মেলা আয়োজনের অভিনব প্রয়াস নিয়েছিলেন জেলাশাসক পিবি সালিম। কিন্তু ঠিকাদার সংস্থার কাজের জেরে তার বেশ খানিকটাই পণ্ড হচ্ছে বলে দাবি করছেন মেলা কমিটির অনেকেই।

মেলার বিভিন্ন জায়গায় হোগলা পাতার ছাউনি দিয়ে তৈরি করা ঘর দেওয়া হয়েছে কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে। সেগুলির সঙ্গে লাগোয়া বাথরুম রয়েছে, কিন্তু তা সাধারণ মানুষ ব্যবহার করতে পারছেন না। হলুদ রঙের পতাকা লাগানো হয়েছে সেখানে। সংস্থার বাইরে ওই বাথরুমে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। আবার বিভিন্ন জায়গার ব্যারিকেড পেরিয়ে বাথরুমে যাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়ছেন অনেকে। যদিও সমুদ্র সৈকতে দেওয়া হয়েছে উন্নতমানের ভ্রাম্যমান শৌচাগার। কিন্তু সেগুলির সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম।

আর প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে একদমই কড়াকড়ি চোখে পড়েনি। মেলা ঘুরে দেখা গেল, লুকিয়ে অনেকেই প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ রাখছেন ও ব্যবহার করছেন। যদিও সর্বক্ষণই মাইকে প্রচার চলছে। বঙ্কিমবাবুরা জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত সমিতি এবং ব্লকের তরফেও মেলায় প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তা ছাড়াও, জেলাশাসকের নেতৃত্বে রোজ মেলায় চলছে নজরদারি অভিযান।

gangasagar toilet santasree majumdar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy