Advertisement
E-Paper

প্রধানমন্ত্রীর দফতর ‘কড়া কথা’ শুনিয়েছে? বাবুল-দিলীপ প্রকাশ্য বচসা ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে

নরেন্দ্র মোদী সভা সেরে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা কাটতেই জল্পনা বাড়তে শুরু করেছে সভাস্থলে দিলীপ-বাবুল বচসার ছবিটাকে ঘিরে।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৮ ১৬:৫২
দ্বৈরথের জল কত দূর গড়াবে, সে দিকেই তাকিয়ে রাজনৈকিত মহল। নিজস্ব চিত্র।

দ্বৈরথের জল কত দূর গড়াবে, সে দিকেই তাকিয়ে রাজনৈকিত মহল। নিজস্ব চিত্র।

তীব্র আক্রমণ করবেন মোদী, ব্যাকফুটে দাঁড়িয়ে জবাব দেবে তৃণমূল— মোদীর সভার আগে রাজ্যের বিজেপি কর্মীদের আশা ছিল এমনই। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ গড়াল অন্য পথে। সভা চলাকালীনই ভাষণের দিক থেকে নজর অনেকখানি ঘুরে গেল সভাস্থলের বিপর্যয়ের দিকে। আর সভার পরের দিন জল্পনা বাড়তে শুরু করল দিলীপ ঘোষ ও বাবুল সুপ্রিয়র প্রকাশ্য বাদানুবাদ ঘিরে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর (পিএমও) থেকে ‘কড়া কথা’ শুনতে হয়েছিল বলেই বাবুলের উপরে খাপ্পা ছিলেন দিলীপ, খবর বিজেপি সূত্রের। তার জেরেই সোমবার মোদীর সভাস্থলে দিলীপ-বাবুল বচসা দেখা গিয়েছে বলে বিজেপি-র একটি অংশের দাবি।

মোদীর সভাস্থলে দাঁড়িয়ে রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মধ্যে যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলছে, তা স্পষ্টই দেখা গিয়েছিল সোমবার। মেদিনীপুর কলেজ গ্রাউন্ডের সেই ঘটনা নিয়ে সোমবার খুব বেশি হইচই হয়নি। প্রথমত, প্রধানমন্ত্রী যে রকম তীব্র স্বরে আক্রমণ করেছেন রাজ্যর মুখ্যমন্ত্রীকে, সোমবার তা নিয়েই বেশি আলোচনা ছিল সর্বত্র। দ্বিতীয়ত, ছিল উদ্বেগ। সভাস্থলে দর্শকাসনের ছাউনি ভেঙে পড়ে যে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সোমবার তা নিয়েই উদ্বিগ্ন ছিল বিভিন্ন শিবির। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী সভা সেরে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা কাটতেই জল্পনা বাড়তে শুরু করেছে সভাস্থলে দিলীপ-বাবুল বচসার ছবিটাকে ঘিরে।

কেন বচসা? রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ সোমবারই বলেছিলেন, ‘‘বাবুল সুপ্রিয় কিছু প্রশ্ন তুলছিলেন, ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কিছু অভিযোগ করছিলেন। আমি বলেছি, আপনি আর একটু আগে এলে ভাল করতেন। এসে নিজেই দেখভাল করে নিতে পারতেন।’’

আরও পড়ুন: গাফিলতিতেই বিপত্তি প্রধানমন্ত্রীর সভায়, দায় কি শুধু ডেকরেটরের?

বাবুল সুপ্রিয় অবশ্য মন্তব্য এড়ানোর চেষ্টা করেছেন। বাদানুবাদ যে হয়েছে, তা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অস্বীকার করেননি। কিন্তু বলেছেন, ‘‘বড় কাজে ও রকম হয়ে থাকে। এ নিয়ে দলের বাইরে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’’

বাবুল সুপ্রিয় নিজে বিষয়টা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও, রাজ্য বিজেপিতে তাঁর ঘনিষ্ঠরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। দিলীপ ঘোষ তথা রাজ্য বিজেপি-র নেতৃত্বের বিরুদ্ধেই ক্ষোভ তাঁদের। সভার আগের রাতে পিএমও থেকে বেশ কয়েকটা ‘কড়া কথা’ শোনানো হয়েছে দিলীপ ঘোষকে, দাবি বিজেপি-র ওই অংশের। তার জেরেই দিলীপ ঘোষ চটে ছিলেন বলে খবর। ফলে কলেজ গ্রাউন্ডে পৌঁছে বাবুল তাঁকে প্রশ্ন করতেই দিলীপ কড়া প্রতিক্রিয়া দেখান। দাবি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের।

কিন্তু পিএমও থেকে কেন ‘কড়া কথা’ শুনতে হল দিলীপ ঘোষকে? বিজেপি সূত্রের খবর, এ রাজ্যের যে দুই সাংসদ মোদী ক্যাবিনেটের সদস্য, সেই এস এস অহলুওয়ালিয়া এবং বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে ঠিক মতো যোগাযোগ রাখা হয়নি বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্বের তরফ থেকে। কখন প্রধানমন্ত্রী পৌঁছচ্ছেন, কখন তিনি সভাস্থলে যাচ্ছেন, অন্যদের ক’টার মধ্যে পৌঁছতে হবে— সে সব বিষয়ে রাজ্য নেতৃত্ব বাবুল এবং অহলুওয়ালিয়াকে প্রথমে তেমন কিছুই জানাননি বলে বিজেপির ওই অংশের দাবি। পিএমও-র আধিকারিক সঞ্জয় ভাবসারকে ফোন করে বাবুল এবং অহলুওয়ালিয়া সে বিষয়ে জানতে চান বলে খবর। ভাবসার তার পরেই দিলীপ ঘোষকে ফোন করে জানতে চান, প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ঠিক মতো অবহিত করা হয়নি কেন? জানা যাচ্ছে বিজেপি সূত্রে।

আরও পড়ুন: বাংলায় শুধু সিন্ডিকেট, তোপ দাগলেন প্রধানমন্ত্রী

পিএমও-র তরফে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে বলেই দিলীপ ঘোষ বেজায় খাপ্পা ছিলেন বাবুল সুপ্রিয়র উপরে। দাবি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের। সেই কারণেই সভাস্থলে বাবুলের সঙ্গে তিনি বচসায় জড়ান বলে কেউ কেউ মনে করছেন। বাদানুবাদের সময়ে বেশ জোরেই কথা বলছিলেন দিলীপ ঘোষ। আপনি আমার নামে অমিত শাহের কাছে অভিযোগ করুন, পিএমও-তে অভিযোগ করুন— বাবুলের উদ্দেশে এমন কথাও বলতে শোনা গিয়েছে দিলীপকে। পিএমও থেকে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন বলেই দিলীপ ওই কথা বলেছেন, ব্যাখ্যা একাংশের।

শুধু বাবুল-অহলুওয়ালিয়া নন, লকেট-রূপাও চর্চায়। সোমবার মোদীর সভায় দেখা যায়নি রাজ্য বিজেপি-র মহিলার মোর্চার সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়কে। দেখা যায়নি সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কেও। লকেট এ প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘আমার অনুপস্থিতি নিয়ে বিতর্কের কোনও অবকাশ নেই। আমি গোটা প্রক্রিয়াটার মধ্যেই ছিলাম, নিজে গিয়ে সভার প্রস্তুতি দেখে এসেছি। কিন্তু ছেলের কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এই সময়টায় আমাকে যে রাজ্যের বাইরে থাকতে হবে, তা অনেক আগেই জানতাম। দিলীপদাকে সে কথা জানিয়েও রেখেছিলাম।’’ কিন্তু রূপা গঙ্গোপাধ্যায়? তিনি কেন অনুপস্থিত? পুরুলিয়ায় অমিত শাহের সভাতেও তো তাঁকে দেখা যায়নি। লকেট বললেন, ‘‘ওঁর বিষয়টা আমি ঠিক জানি না। ওঁকেই জিজ্ঞাসা করুন।’’

Politics BJP Dilip Ghosh Babul Supriyo State Politics PMO
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy