খুনের আগে সুমিতা ঘোষকে বর্ধমানের সমুদ্রগড়ে তাঁর প্রাক্তন স্বামীর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন ধৃত আরতি এবং ফাল্গুনী। যাঁরা সম্পর্কে মা এবং মেয়ে। ট্রলি-কাণ্ডের তদন্তে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ এ কথা জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ সূত্রে এই তথ্য মেলার পরেই সুমিতার প্রাক্তন স্বামী সুদীপ্ত ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। সুদীপ্ত সে কথা স্বীকারও করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘হ্যাঁ, সুমিতা এসেছিল। ওর সঙ্গে এক মহিলা আর এক পুরুষ ছিল। রাস্তায় দেখা হয়েছিল। স্রেফ হাই, হ্যালো হয়েছে। এর বেশি কিছু না।’’ প্রাক্তন স্ত্রী খুন হওয়ার পরেই সুদীপ্ত প্রকাশ্যে যা বিবৃতি দিয়েছিলেন, তাতে অবশ্য সেই সাক্ষাতের কথা তিনি উল্লেখ করেননি। সেই সময় কেন সুদীপ্ত সে কথা বলেননি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মধ্যমগ্রামে খুন হন সুমিতা। তদন্তে উঠে এসেছে, খুনের পর তাঁর দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে কুমোরটুলির গঙ্গার ঘাটে ফেলে দিয়ে আসতে গিয়েছিলেন আরতি এবং ফাল্গুনী। সেখানেই তাঁরা ধরা পড়ে যান এবং গ্রেফতার হন। পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় উঠে এসেছে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি মধ্যমগ্রামে বীরেশপল্লিতে ফাল্গুনীদের বাড়িতে এসে উঠেছিলেন সুমিতা। এর পরেই সুমিতাকে নিয়ে বর্ধমানের সমুদ্রগড়ে তাঁর প্রাক্তন স্বামীর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন আরতি এবং ফাল্গুনী। কেন তাঁকে সুদীপ্তের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তার এখনও যথাযথ উত্তর মেলেনি ধৃতদের কাছ থেকে। শুধু সুদীপ্তই নয়, সুমিতাকে কলকাতা হাই কোর্টের এক আইনজীবীর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেটার কারণও স্পষ্ট নয় এখনও। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, সুদীপ্ত এবং সেই আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে সেই সাক্ষাতের কারণ জানার চেষ্টা হবে।
মঙ্গলবার রাতে আরতি এবং ফাল্গুনীকে মধ্যমগ্রাম থানা থেকে বারাসত মহিলা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার দু’জনকে সারা দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তদের বয়ানে নানা অসঙ্গতি রয়েছে। ফাল্গুনী ও তাঁর মা আরতি— দু’জন দু’রকম কথা বলছেন। আদালতের নির্দেশে ধৃতদের হেফাজতে নেওয়ার পর থেকেই দু’জনকে টানা জেরা করতে শুরু করেন তদন্তকারীরা। পুরো ঘটনা পুনর্নির্মাণের জন্য দুই অভিযুক্তকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তার পর ফাল্গুনী ও আরতির বয়ান অনুযায়ী ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে একটি পুকুরে ডুবুরি নামিয়ে শুরু হয় তল্লাশি। ঘণ্টাখানেকের তল্লাশির শেষে সেখান থেকেই খুনে ব্যবহৃত বঁটির খোঁজ মেলে। একই সঙ্গে পাওয়া গিয়েছে একটি হাতুড়ি এবং দা, যা খুনে ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান তদন্তকারীদের।