পাড়ায় পাড়ায় ফুটবল প্রতিযোগিতা, রক্তদানের আসর থেকে নানা সভা-সমিতি, বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজনে যোগ দিতে হয়েছে আগেই। এ বার ফের নতুন ভূমিকায় পুলিশ। জনসংযোগ বাড়াতে পুলিশকে রাজ্য জুড়ে গাছ লাগাতে এবং তার যত্ন করতে বলছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতর।
১৯ জুলাই সব জেলা ও পুলিশ কমিশনারেটের কর্তাদের কাছে এই লিখিত নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। বন দফতরের কর্তাদের পরামর্শমাফিক কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শুরু করতে হবে এই কাজ। রাজ্য জুড়ে পুলিশের ‘নোডাল অফিসার’ হিসেবে কর্মসূচি রূপায়ণের দায়িত্বে থাকবেন এডিজি পদমর্যাদার কোনও অফিসার। জেলায় জেলায় বন আধিকারিক, পুলিশ সুপার ও কমিশনারেটের কর্তাদের মধ্যে সেতু বাঁধার কাজটা করবেন তিনিই। সম্প্রতি ওই নোডাল অফিসারের তরফেও জেলার পুলিশ সুপার ও কমিশনারেটের কর্তাদের কাছেও এই ‘গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন’ কর্মসূচির নির্দেশ পাঠানো হয়েছে।
এ ভাবে সবুজের অভিযানে জোর দেওয়ার বিষয়টি উৎসাহব্যঞ্জক বলেই মনে করছেন পরিবেশকর্মীরা। তবে খটকাও থাকছে! প্রশ্ন জাগছে, এত কাজের মধ্যে ফের গাছ লাগানোর হ্যাপা পুলিশ কী করে সামলাবে? এমনিতেই কোনও দরকারে থানায় সাধারণ নাগরিকদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। কোথাও কোনও ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ সময়মতো পৌঁছয় না বলেও অভিযোগ। কর্মী বা গাড়ির অভাবে নাকাল হয় পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে গাছ লাগানোর বাড়তি বোঝা সামলানো তাদের পক্ষে কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে পুলিশের অন্দরমহলেই প্রশ্ন উঠছে।
সরকারি নির্দেশে বিস্তারিত ভাবে বলা হয়েছে, কী ভাবে কী কী করতে হবে পুলিশকে। এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে চারাগাছ পোঁতা থেকে নাগাড়ে নজরদারি— সবই এখন ‘কেয়ার অব পুলিশ’! কী ভাবে কাজটা সারতে হবে, তা-ও থানা স্তরে পাখি-পড়া করে শেখাচ্ছে সরকার। যেমন, কবে গাছ পোঁতা হয়েছে, কে পুঁতেছেন— সব নির্দিষ্ট তারিখ অনুযায়ী থানায় ‘জিডি’ করে রাখতে হবে। সেই সব নথি নিয়মিত যাচাই করবেন পুলিশ সুপারের অফিস বা কমিশনারেটের বড় কর্তারা। থানার চত্বরে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে সপ্তাহে একাধিক বার ব্লিচিং পাউডার, কীটনাশক ছড়ানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশেকে। তারও ফিরিস্তি রক্ষায় জিডি-র আলাদা জাবদা খাতা থাকছে। স্থানীয় পুরসভা অথবা পঞ্চায়েতের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে এই কাজ করতে হবে।
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘বিশ্বের উষ্ণায়ন ঠেকাতে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা তো ভালই! তবে নানা কাজে ব্যস্ত পুলিশকে দিয়ে এই উদ্যোগ সফল হবে কি না, বলতে পারছি না।’’ পুলিশকর্তারাও কেউ কেউ বলছেন, পুলিশের আসল কাজ তো আইনশৃঙ্খলা সামলানো। জেলায় সীমিত লোকবল ও পরিকাঠামো নিয়ে অন্য কাজ করতে গেলে আদৌ সামলানো যাবে তো! কলকাতার লাগোয়া এক পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তার আশঙ্কা, ‘‘জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে নিজেদের কাজ ঠিকঠাক না-করলে কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে!’’