Advertisement
E-Paper

পিসিশাশুড়ির দেহ কাটা, ট্রলিতে ভরা থেকে রিকশা ডাকা, ফাল্গুনীকে সাহায্য ‘প্রেমিকের’? খোঁজে পুলিশ

ট্রলি-কাণ্ডে ভ্যানরিকশার চালক হারাধনের দাবি, মঙ্গলবার ভোরে একটি লোক তাঁর রিকশা ভাড়া করতে যান। তিনি জানান, লোকটির বয়স আন্দাজ ৪০ থেকে ৪৫ বছর হবে। পরনে ছিল সাদা জামা এবং ট্রাউজার্স।

প্রণয় ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:২৫
আত্মীয়ার দেহ টুকরো টুকরো করে ট্রলিতে ভরে গঙ্গায় ফেলতে গিয়ে ধরা পড়েন ফাল্গুনী ঘোষ এবং মা আরতি ঘোষ। এখন তাঁরা জেল হেফাজতে।

আত্মীয়ার দেহ টুকরো টুকরো করে ট্রলিতে ভরে গঙ্গায় ফেলতে গিয়ে ধরা পড়েন ফাল্গুনী ঘোষ এবং মা আরতি ঘোষ। এখন তাঁরা জেল হেফাজতে। —ফাইল চিত্র।

নিত্যনতুন অচেনা মুখের ভিড় লেগে থাকত মধ্যমগ্রামের বীরেশপল্লিতে আরতি ঘোষের বাড়িতে। গত মঙ্গলবার কাকভোরে তাঁদেরই এক জন ফাল্গুনী ঘোষ এবং তাঁর মা আরতির বেরোনোর জন্য ভ্যানরিকশা ভাড়া করতে গিয়েছিলেন। পিসিশাশুড়ির খণ্ড খণ্ড দেহভর্তি ট্রলি ব্যাগ নিয়ে সেই ভ্যানরিকশায় উঠেছিলেন ফাল্গুনী। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মা আরতি। কিন্তু ওই ব্যক্তি কে? পুলিশ সূত্রের খবর, গ্রেফতারির পর মা-মেয়ে দু’জনেই ওই ব্যক্তিকে নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য দেননি। এলাকাবাসীর দাবি, লোকটিকে ভাল করেই চেনেন মা-মেয়ে। পড়শিরা জানাচ্ছেন, ফাল্গুনীর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। যিনি ভ্যানরিকশা ডাকতে গিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গেই ফাল্গুনীর পরকীয়ার সম্পর্ক বলে দাবি করেছেন কেউ কেউ। সেই ‘রহস্যময়’ যুবকের খোঁজে রয়েছে পুলিশও।

ফাল্গুনীর স্বামী শুভঙ্কর ঘোষ থাকেন শিলিগুড়িতে। তাঁর দাবি, অতিরিক্ত মদ্যপান করতেন তাঁর স্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘শিলিগুড়িতে পাড়ার পুজো উপলক্ষে এক বার ও এত মদ খেয়েছিল যে, ওকে কাঁধে তুলে বাড়ি নিয়ে যেতে হয়েছিল।’’ স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈবাহিক সম্পর্ক ভাল ছিল না বলে দাবি করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে স্ত্রীর জীবনযাত্রা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ তাঁর। ভ্যানরিকশার চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে সন্দেহভাজন এক ব্যক্তির কথা জানতে পারে পুলিশ। পরে এলাকার দু’টি সিসিটিভি ফুটেজ এবং ভ্যানরিকশা চালকের কথাবার্তা মিলিয়ে দেখা হয়। জানা যায়, ট্রলি কেনা থেকে লাশ কাটা, দেহ লোপাটের চেষ্টা— সবেতেই ফাল্গুনী-আরতিকে সাহায্য করেছিলেন ‘সহৃদয় ব্যক্তিটি’।

ভ্যানরিকশা চালকের দাবি, মঙ্গলবার ভোরে একটি লোক তাঁর রিকশা ভাড়া করতে যান। তাঁর কথামতো, লোকটির বয়স আন্দাজ ৪০ থেকে ৪৫ বছর। পরনে ছিল সাদা জামা এবং ট্রাউজ়ার্স। আরতিদের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে তিনি চলে যান। এ-ও জানান, ভাড়া ফাল্গুনীরাই দিয়ে দেবেন। রিকশাচালকের কথায়, ‘‘এলাকায় অনেক বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছি। ওই লোকটাকে আগে কখনও দেখিনি।’’ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশীর দাবি, ফাল্গুনী এবং তাঁর মা আরতি ঘোষের সঙ্গে পড়শিদের সম্পর্ক ভাল নয়। তাই প্রতিবেশীদের কেউ তাঁদের জন্য ওই কাকভোরে রিকশা ভাড়া করতে যাবে বলে মনে হয় না। ওই ব্যক্তির কথায়, ‘‘আমাদের সঙ্গে ফাল্গুনী এবং ওর মায়ের কথাবার্তা হত না। সব সময় ওদের বাড়িতে যে লোকটা আসত, বোধ হয় রিকশা সে-ই ডেকে দিয়েছে। ওই ব্যক্তির সঙ্গে ফাল্গুনীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে আমাদের অনুমান।’’

গত মঙ্গলবার সকালে উত্তর কলকাতার কুমোরটুলি গঙ্গার ঘাটের কাছে ধরা পড়েন অভিযুক্ত ফাল্গুনী এবং আরতি। মা-মেয়ের কাছে একটি ট্রলি ব্যাগ ছিল। তার ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয় টুকরো টুকরো দেহ। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, ওই দেহ ফাল্গুনীর পিসিশাশুড়ি সুমিতার। মধ্যমগ্রামের ভাড়াবাড়িতে তাঁকে খুন করে দেহ টুকরো টুকরো করে ট্রলিতে ভরেছিলেন মা-মেয়ে। দেহ গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য ট্যাক্সি ভাড়া করে কুমোরটুলি এসেছিলেন তাঁরা।

গত বৃহস্পতিবার ফাল্গুনী, আরতিকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে বারাসত আদালত। আগামী ১৩ মার্চ পর্যন্ত তাঁদের জেল হেফাজতে থাকতে হবে। অভিযুক্তদের আইনজীবী জামিনের আবেদন করেছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, আরতি অসুস্থ। তাঁর মধুমেহ এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে। আরতিকে নিয়ম করে ইঞ্জেকশন ব্যবহার করতে হয়। শুনানি চলাকালীনও অসুস্থও হয়ে পড়েন আরতি। দুই অভিযুক্তের আইনজীবীদের আরও দাবি, যে ট্রলি ব্যাগ থেকে সুমিতার দেহ উদ্ধার হয়েছে, তার চাবি মা-মেয়ের কাছে ছিল না। সুতরাং তাঁদের জামিন দেওয়া হোক। এখন ওই খুনের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কি না, তারও তদন্ত চলছে। বারাসত পুলিশ জেলার সুপার প্রতীক্ষা ঝরখড়িয়া বলেন, ‘‘এই মামলার তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বেশ কয়েক জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ভ্যানরিকশার চালকের বয়ান অনুযায়ী ওই ব্যক্তিটিরও খোঁজ চলছে।’’

Madhyamgram Murder Trolley arrest police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy