শিক্ষকদের বিক্ষোভে চড়াও পুলিশ। মঙ্গলবার মিন্টো পার্কে। নিজস্ব চিত্র
ভোটের উত্তাপ বাড়ছে উত্তরোত্তর। তার পাশাপাশি নিয়োগ, বেতন বৃদ্ধি-সহ নানান দাবিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রের শিক্ষক-বিক্ষোভ চলেছে লাগাতার।
স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ অনশন কাটতে না-কাটতে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে শুরু হয়েছিল বিক্ষোভ। সেই বিক্ষোভ চলাকালীন রবিবার বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ দেখান শিশু শিক্ষা কেন্দ্র (এসএসকে) ও মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র (এমএসকে)-এর শিক্ষক-শিক্ষিকারা। স্থায়ীকরণ এবং বেতন বৃদ্ধির দাবিতে মঙ্গলবার বিক্ষোভ দেখান সরকারি স্কুলের চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার শিক্ষকেরা। বিক্ষোভ সামলাতে লাঠি চালায় পুলিশ। জখম হন কয়েক জন শিক্ষক।
কম্পিউটার শিক্ষকেরা জানান, একটি বেসরকারি কম্পিউটার সংস্থার মাধ্যমে সরকার বিভিন্ন স্কুলে তাঁদের নিয়োগ করেছে। ওই সংস্থার মাধ্যমে যে-বেতন দেওয়া হয়, তা খুব কম। ওয়েস্ট বেঙ্গল স্কুল কম্পিউটার টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের অভিযোগ, তাঁদের জন্য সরকার যে-বেতন বরাদ্দ করেছে, ওই কম্পিউটার সংস্থা তা দিচ্ছে না। ‘‘আমরা প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা মিন্টো পার্কে ওই সংস্থার অফিসের সামনে বেতন বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলাম। হঠাৎ পুলিশ এসে লাঠি চালায়। পুলিশের লাঠিতে ১০-১২ জন শিক্ষক আহত হয়েছেন। কিছু শিক্ষিকার গায়েও হাত তুলেছে পুলিশ,’’ বলেন ওই সংগঠনের সহ-সম্পাদক ভূপেশ খেস।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ছয় বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করে লালবাজারে নিয়ে যায় পুলিশ। লাঠি চালানোর কথা স্বীকার করে এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘বিক্ষোভকারীরা হঠাৎ ব্যারিকেড ভেঙে ওই কম্পিউটার সংস্থার অফিসে ঢুকে যান। সেখানে ভাঙচুর শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মৃদু লাঠি চার্জ করতে হয়।’’
পুলিশের লাঠির ঘায়ে জখম শিক্ষক।
কম্পিউটার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপরে লাঠি চালানোর প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহকারী সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘শিক্ষকেরা নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। তাঁদের উপরে পুলিশের লাঠি চালানোর ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি আমরা।’’ এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, সরকার তো শিক্ষক-পিছু ওয়েবেল সংস্থাকে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা দিচ্ছে বলে খবর। তা হলে শিক্ষকদের প্রতি বঞ্চনা কেন? তদন্ত হোক। ‘‘শিক্ষকদের উপরে লাঠি চালানোর তীব্র নিন্দা করছি আমরা। নির্যাতনকারী পুলিশকে শাস্তি দেওয়া হোক,’’ বলেন চণ্ডীবাবু।
মিন্টো পার্কে বিক্ষোভের পরে আন্দোলনকারীরা বিকেলে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে গিয়ে ধর্নায় বসেন। ওই ধর্নামঞ্চে যোগ দেন শিশু শিক্ষা কেন্দ্র ও মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক সংগঠন শিক্ষা ঐক্য মুক্ত মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মইদুল ইসলামও। পার্থবাবু তখন বাড়িতে ছিলেন না। ভূপেশবাবু বলেন, ‘‘পার্থবাবু আমাদের অভিযোগ শুনে সমস্যার সুরাহা করার আগে পর্যন্ত আমরা ওঁর বাড়ির সামনে বসে থাকব। উঠব না।’’
সন্ধ্যার পরে পার্থবাবু বাড়ি ফিরলে ধর্নামঞ্চ থেকে সাত প্রতিনিধি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান। পরে শুভজিৎ অধিকারী নামে প্রতিনিধিদলের এক নেতা বলেন, ‘‘পার্থবাবু জানান, উনি খুব পরিশ্রান্ত। অভিযোগ জানানোর জন্য তিনি দু’দিন পরে দেখা করতে বলেছেন আমাদের।’’
এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সরকারি স্কুলের কম্পিউটার শিক্ষকদের উপর নির্মম ভাবে পুলিশি লাঠিচার্জের আমরা তীব্র নিন্দা করছি। সরকার যেখানে ওয়েবেল সংস্থাকে শিক্ষক প্রতি বছরে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা দিচ্ছে বলে খবর, তখন শিক্ষকদের প্রতি এই বঞ্চনা কেন, তার তদন্ত হোক। পাশাপাশি, নির্যাতনকারী পুলিশ অফিসারদের শাস্তি দেওয়া হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy