ছুটির বিকেলে গিজগিজে ভিড়ের বেশিটাই তখন বাগান থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। কারণ, হাওড়া শিবপুরের বটানিক্যাল গার্ডেন বন্ধ করার সময় হয়ে গিয়েছিল। কেউ রয়ে গেল কি না, তা দেখার জন্য শেষ পর্বের টহলের সময়েই গ্লাসহাউসের পাশের ঝোপে চোখ গেল এক নিরাপত্তারক্ষীর। তিনি দেখলেন, সালোয়ার-কামিজ পরা এক কিশোরী শুয়ে আছে। কাছে যেতেই বুঝলেন, ইচ্ছে করে নয়, মেয়েটি আসলে জ্ঞান হারিয়েই পড়ে আছে ঝোপে!
পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, বটানিক্যাল গার্ডেন (সরকারি নাম ‘আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান বটানিক গার্ডেন’) কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে খবর যায় স্থানীয় থানায়। সেখানকার কর্মীরা গিয়ে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে প্রথমে দক্ষিণ হাওড়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতাল সূত্রের খবর, কিশোরীর গোপনাঙ্গ থেকে রক্তপাত হচ্ছিল। তা থেকে সন্দেহ করা হচ্ছে, তার উপরে যৌন নির্যাতন চালানো হয়ে থাকতে পারে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সন্ধ্যায় তাকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, মেয়েটির উপরে কী ধরনের নির্যাতন চালানো হয়েছে, ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পরেই সেটা নিশ্চিত ভাবে বলা যেতে পারে। তবে কী ভাবে মেয়েটির ওই অবস্থা হল, কী ভাবেই বা সে জ্ঞান হারাল, তার তদন্ত শুরু হয়েছে।
ওই কিশোরীর বাড়ি মুর্শিদাবাদে বলে প্রাথমিক তদন্তে জেনেছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে একটি স্কুলব্যাগ পাওয়া গিয়েছে। তাতে জামাকাপড় এবং কিছু সোনার গয়না ছিল। কিশোরীর উপরে নির্যাতনের ঘটনায় তার পরিচিত কেউ জড়িত বলেই তদন্তকারীদের সন্দেহ। তবে কে বা কারা তাকে বটানিক্যালে নিয়ে গিয়েছিল, তা জানা যায়নি। পুলিশ জানায়, জেলা হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগে মেয়েটিকে ভর্তি করানো হয়েছে। রাতে জ্ঞান ফেরার পরে তদন্তকারীরা তার সঙ্গে কিছু কিছু কথাও বলেন। তবে তার সঙ্গে কতটা কী কথা বলা গিয়েছে, বেশি রাত পর্যন্ত তা জানা যায়নি। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘কিশোরীর পূর্ণ বয়ান নিতে পারলেই অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।’’
এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে বটানিক্যাল গার্ডেনের নিরাপত্তা। শনিবার একই সঙ্গে ছিল ইদ ও রথযাত্রা। একে উৎসবের মরসুম। তার উপরে এ দিন ছিল রবিবার। বটানিক্যাল গার্ডেন সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, উৎসবের মরসুম আর ছুটির দিন বলে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও এমনটা ঘ়টল কী ভাবে?
বটানিক্যাল গার্ডেনের অধিকর্তা অরবিন্দ প্রামাণিকের বক্তব্য, ঘটনাটি ঘটেছে বাগানের একটি নির্জন জায়গায়। এই বিরাট বাগানের প্রতিটি কোণে নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া সম্ভব নয়। তবে সোমবার থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও আঁটোসাঁটো হবে। বিশেষ ভাবে নজর রাখা হবে নির্জন জায়গাগুলোয়।
গার্ডেন সূত্রের খবর, ওই কিশোরীর কোনও চিৎকারও শুনতে পাননি রক্ষীরা। প্রশ্ন উঠেছে, যখন মেয়েটির উপরে নির্যাতন চালানো হচ্ছিল, সে নিশ্চয়ই চিৎকার-চেঁচামেচি করছিল। ছুটির দিনের ভিড় এবং রক্ষীদের টহল সত্ত্বেও সেই চিৎকার কারও কানে গেল না কেন?
পুলিশের একাংশ বলছেন, মেয়েটি আদৌ চিৎকার করার অবস্থায় ছিল কি না, সেটা নিশ্চিত নয়। অনেক সময়েই তো মাদক মেশানো খাবার বা পানীয় খাইয়ে মহিলাদের উপরে নির্যাতন চালানো হয়। আর সেই সব ক্ষেত্রে মহিলারা সাধারণত চিৎকার করার মতো অবস্থায় থাকেন না। এ দিন ওই কিশোরীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তার ক্ষেত্রেও এই ধরনের কিছু ঘটে থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন অনেকে। পুলিশের বক্তব্য, ঠিক কী ঘটেছিল, ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট এবং কিশোরীর পূর্ণ বয়ান পাওয়ার পরেই সেটা নিশ্চিত ভাবে বলা যেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy