Advertisement
E-Paper

রেল অবরোধে পুলিশকে ইট, সামলাতে লাঠি

ট্রেন লেটের অসুখ তো আছেই। সেই সঙ্গে চেপে বসেছে স্টেশনের মাইকে ট্রেনের গতিবিধির কথা ঘোষণা না-করার ব্যাধি। এই দুই রোগে জেরবার যাত্রিসাধারণের ক্ষোভ ফেটে পড়ায় এ দিন সকালে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে বেলঘরিয়া স্টেশনে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:১১
মার: বেলঘরিয়া স্টেশনে রেল অবরোধ সরাতে পুলিশের লাঠিচার্জ। শুক্রবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

মার: বেলঘরিয়া স্টেশনে রেল অবরোধ সরাতে পুলিশের লাঠিচার্জ। শুক্রবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

হাজারো হুঁশিয়ারি, এমনকী মন্ত্রী-বদল পর্যন্ত কোনও দাওয়াইয়েই যে রেলের গয়ংগচ্ছ মনোভাব বদলানোর নয়, শুক্রবার ফের তার জব্বর প্রমাণ মিলল বেলঘরিয়া স্টেশনে।

ট্রেন লেটের অসুখ তো আছেই। সেই সঙ্গে চেপে বসেছে স্টেশনের মাইকে ট্রেনের গতিবিধির কথা ঘোষণা না-করার ব্যাধি। এই দুই রোগে জেরবার যাত্রিসাধারণের ক্ষোভ ফেটে পড়ায় এ দিন সকালে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে বেলঘরিয়া স্টেশনে। পরিষেবায় ঘাটতির অভিযোগ তুলে প্রথমে শুরু হয় রেল অবরোধ। পুলিশ আসতেই তাদের লক্ষ করে শুরু হয় ইটবৃষ্টি। ইটের ঘায়ে দুই পুলিশকর্মী-সহ ছ’জন জখম হন। পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকায় জিআরপি ও ব্যারাকপুর কমিশনারেট থেকে বড় বাহিনী এসে লাঠি চালিয়ে অবরোধ হটিয়ে দেয়। শিয়ালদহ মেন লাইনে আড়াই ঘণ্টা ট্রেন বন্ধ থাকে। হাঙ্গামার অভিযোগে চার জনকে আটক করে পুলিশ।

ট্রেনের দেরি কেন? কেনই বা ঘোষণা হচ্ছিল না বেলঘরিয়ায়?

রেল সূত্রের খবর, এ দিন সকালে পলতা আর ব্যারাকপুরের মাঝখানে একটি মালবোঝাই ছোট ভ্যান লেভেল ক্রসিংয়ের গেটের বুমে (লোহার দণ্ড) ধাক্কা মারায় সেটি বেঁকে গিয়ে উপরের দিকে উঠে যায়। ছিঁড়ে যায় ওভারহেড তার। সেই জন্য সকাল থেকেই ওই লাইনে আপ ও ডাউন ট্রেনগুলি দেরিতে চলছিল। তার উপরে বেলঘরিয়ায় মাইকে গোলমাল থাকায় সেখানে ঘোষণার ক্ষেত্রেও কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল। ফলে কোন প্ল্যাটফর্মে ট্রেন আসছে, সেটাই বুঝতে পারছিলেন না যাত্রীরা।

আরও পড়ুন: বিজেপি-সঙ্গ, দলের কড়া নজরে মুকুল

বেলঘরিয়ার বহু নিত্যযাত্রীর অভিযোগ, সকাল-সন্ধ্যায় কোনও ট্রেনেই ওঠা যাচ্ছে না। কাজের তাগিদে প্রাণ হাতে করে কোনও মতে ঝুলে ঝুলে যাতায়াত করতে হচ্ছে। যাত্রী বাড়লেও ট্রেন তো বাড়েইনি। যে-ক’টি ট্রেন আছে, সেগুলিও সময় মেনে চলছে না। তাঁদের প্রশ্ন, সাধারণ পরিষেবাগুলো যদি না-মেলে, চলবে কী করে? রেলকে বারবার বলা সত্ত্বেও সমস্যার সুরাহা হচ্ছে না।

ক্ষোভ থাকলেও এ দিন যে-ভাবে পুলিশকে নিশানা করে ইট ছোড়া হয়েছে, অনেক যাত্রীই সেটা ভাল চোখে দেখছেন না। তাঁদের অভিযোগ, এ দিন যাত্রীদের অসন্তোষ ও অবরোধের সুযোগ নিয়েছে কিছু দুষ্কৃতী। তাদের দাপটে অবরোধের মূল উদ্দেশ্যটাই পিছনে চলে যায়।

সুমন্ত্র সেনগুপ্ত নামে বেলঘরিয়ার এক নিত্যযাত্রী বলেন, ‘‘পুলিশকে লক্ষ করে যে-ভাবে ইট মারা হয়েছে, সেটা মানা যাচ্ছে না। তবে রেল-কর্তৃপক্ষকেও বেলঘরিয়ার যাত্রীদের কথা শুনতে হবে। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তো দূরের কথা। তাঁরা এই স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের পুরো অংশে ছাউনির কাজটাও শেষ করতে পারেননি।’’ অন্য এক যাত্রী জানান, ট্রেনের দেরিতে জেরবার তো হতেই হচ্ছে। তার উপরে ঘোষণা না-করায় কেউ বুঝতেই পারছে না, কোন প্ল্যাটফর্ম দিয়ে ‘থ্রু’ ট্রেন যাবে। ফলে যে-কোনও সময়েই বিপদ ঘটতে পারে। বারবার বলার সত্ত্বেও ১২ কামরার লোকাল ট্রেন চালু হয়নি।

অভিযোগ অনেকটাই মেনে নেন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র। তিনি বলেন, ‘‘বেলঘরিয়ায় কেন ঘোষণা হচ্ছিল না, সেটা দেখছি। যন্ত্র খারাপ হয়ে থাকলে শীঘ্রই সেটা বদলে দেওয়া হবে।’’ শিয়ালদহের রেল পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্রের বক্তব্য, যান্ত্রিক সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু পুজোর মুখে অফিসটাইমে রেল অবরোধ করা ঠিক নয়। ‘‘বারবার বারণ করা সত্ত্বেও ইট ছোড়া হচ্ছিল। তাই জোর করেই অবরোধ তুলে দেওয়া হয়েছে,’’ বলেন মিশ্র। তিনি জানান, মাইক ঠিক করার ব্যাপারে রেলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

সকালে বেলঘরিয়ার ধুন্ধুমার কাণ্ডের পরে রাতেও শিয়ালদহে প্রায় সব ট্রেনই চলে ৩০-৪৫ মিনিট দেরিতে। যাত্রীরা জানান, কখন ট্রেন মিলবে, মাইকে তা জানানো হয়নি।

Police lathicharge Train Blockade
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy