Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

মুখ্যমন্ত্রী-ব্যূহে ফাঁক কেন, শুরু ময়না-তদন্ত

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র, মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার প্রধান দায়িত্বে থাকা ডিরেক্টর (সিকিয়োরিটি)-সহ পুলিশকর্তারা উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও ওই ঘটনা কেন আটকানো গেল না, তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

নৈহাটিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।— ছবি পিটিআই।

নৈহাটিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।— ছবি পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৯ ০৪:৫২
Share: Save:

নিরাপত্তায় ছিলেন পুলিশকর্তারা। তা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার নৈহাটিতে মুখ্যমন্ত্রীকে অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হল কেন, তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। ওখানে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রীকে যে-ভাবে বারবার ‘সমস্যা’য় পড়তে হয়েছে, তাতে এই বিশ্লেষণ অবধারিত ছিল বলে মনে করছেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের অনেকেই।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র, মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার প্রধান দায়িত্বে থাকা ডিরেক্টর (সিকিয়োরিটি)-সহ পুলিশকর্তারা উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও ওই ঘটনা কেন আটকানো গেল না, তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। প্রধানত সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই শুরু হয়েছে পরিস্থিতির বিশ্লেষণ। বছর চারেক আগে নদিয়ায় সন্ন্যাসিনী ধর্ষণের ঘটনার পরে সেখানে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ফেরার পথে তাঁর গাড়ি দীর্ঘ ক্ষণ আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। তার পরেও মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা এবং স্থানীয় স্তরে গোয়েন্দা-তথ্য নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠেছিল। সেই ঘটনার সঙ্গে চরিত্রগত মিল না-থাকলেও বৃহস্পতিবার নৈহাটির ঘটনার গুরুত্ব আরও গভীর বলেই মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তারা। সেই জন্য এ বারের পরিস্থিতি পর্যালোচনা আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।

সাধারণ ভাবে মুখ্যমন্ত্রী যে-পথে গন্তব্যে যান, সেই পথের নিরাপত্তা আগে থেকে যাচাই করা হয়। সম্ভাব্য অপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে গোয়েন্দা-তথ্য সংগ্রহ করা হয় স্থানীয় স্তরে। সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর নৈহাটি সফর আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। লোকসভা ভোটের পর থেকে ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলার সমস্যা ছিল। নৈহাটি পুরসভার বেশির ভাগ কাউন্সিলর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে নাম লেখানোয় উত্তাপ আরও কিছুটা বেড়ে গিয়েছিল। তার পরেও এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আগাম আঁচ করা গেল না কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকে।

ওই দিন মুখ্যমন্ত্রীর যাত্রাপথে ভাটপাড়া রিলায়্যান্স জুটমিলের সামনে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান ওঠে। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী গাড়ি থামিয়ে সেখানে নামলেও পরিস্থিতির বদল ঘটেনি। তিনি গাড়িতে উঠলে ফের একই স্লোগান দেওয়া হয়। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীর পাশে ডিজি-সহ পুলিশের কয়েক জন কর্তা উপস্থিত ছিলেন। সেই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী আবার গাড়ি থেকে নেমে পড়েন। তার পরে ভাটপাড়া ও নৈহাটি সীমানায় নদিয়া জুটমিলের কিছুটা আগে ফের একই ঘটনা ঘটে। সেখানেও গাড়ি থেকে নেমে তেড়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর গাড়ির উপরে হামলার চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মমতা।

প্রশাসনের অন্দরের খবর, ওই ঘটনার বিশ্লেষণে করবেন কয়েক জন পুলিশকর্তা। তাঁদের রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘সিদ্ধান্ত নেবে পুলিশ ডিরেক্টরেট।

কী ভাবে, কারা ঘটনার অনুসন্ধান করবেন, তা তারাই স্থির করবে।’’ অন্য এক কর্তা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর যাত্রাপথের সুরক্ষার পর্যালোচনা করা খুব জরুরি। ভবিষ্যতে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা কী ভাবে আটকানো যায়, তার সুসংহত রূপরেখা তৈরি করা দরকার।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রের দাবি, প্রথমে স্থির ছিল, মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে যাবেন। সেই সম্ভাবনার পাশাপাশি বিকল্প পথ হিসেবে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে এবং জগদ্দল-ভাটপাড়ার ঘোষপাড়া রোড নিয়েও জল্পনা ছিল। তবে সড়কপথে সম্ভাবনা বেশি ছিল কল্যাণী একপ্রেসওয়ের। সেই জন্য তুলনায় বেশি সংখ্যায় নিরাপত্তা ছিল সেই রাস্তায়। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষপাড়া রোডই ধরেন। তিনি যখন যাচ্ছিলেন, সেই সময়েই ঘোষপাড়া রোডের লাগোয়া কয়েকটি জুটমিলের ছুটি হয়। সেই জন্য প্রশাসনের দুশ্চিন্তা ছিল বেশি। পুলিশকর্তাদের তা জানানোও হয়েছিল।

অন্য দিকে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ শুক্রবার বলেছেন, ‘‘জয় শ্রীরাম শুনলে উনি অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছেন। এর পরে উনি যেখানেই যাবেন, জনগণ ওঁকে জয় শ্রীরাম বলে স্বাগত জানাবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee DG Virendra Naihati
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE