সৈকতে মাইকিং করে প্রচার প্রশাসনের।ছবি: সোহম গুহ।
মন্দারমণির সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়া তিন যুবকের মধ্যে একজনের দেহ মিলেছিল শনিবার বিকেলেই। রবিবার ভোরের মধ্যে পাওয়া গেল বাকি দু’জনের দেহও। পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার রাত দু’টো নাগাদ সরপাই মৎস্য খটির কাছে লোকেশ মেহরোত্র (৩৬) ও রবিবার ভোরে মন্দারমণির সৈকতে বিনয় চৌধুরীর (২৮) দেহ ভেসে ওঠে।
কলকাতার রাজারহাটের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার জনা বারো কর্মী দল বেঁধে গাড়ি নিয়ে শনিবার সকালে মন্দারমণি গিয়েছিলেন। দুপুরে স্নানে নেমে সেই দলেরই তিন জন সুমন্ত্র বন্দ্যোপাধ্যায়, লোকেশ মেহরোত্রা ও বিনয় চৌধুরী তলিয়ে যান। ঘটনার পরই পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া দাবি করেছিলেন, মত্ত অবস্থায় স্নানে নেমেই বিপত্তি ঘটেছে। স্থানীয় সূত্রেও জানা গিয়েছে, সৈকতের একটি ঝুপড়ি দোকান থেকে মদ কিনেছিলেন সুমন্ত্ররা।
বস্তুত, গত কয়েক মাসে মন্দারমণিতে যে ক’টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, প্রায় সব ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মদ্যপ ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তা সে সমুদ্রস্নানে নেমে মৃত্যু হোক বা বালুতটে দুরন্ত গতিতে গাড়ি ছোটাতে গিয়ে দুর্ঘটনা। সৈকতে মদ বিক্রির কোনও নিয়ম নেই। তা ছাড়া, মন্দারমণির হোটেল-রিসর্টগুলিতেও ‘বার’ চালানোর অনুমতি নেই। তবে নিয়মের তোয়াক্কা না করেই সৈকতের ঝুপড়ি দোকানগুলিতে দেদার মদ বিক্রি চলছে। এমনকী চায়ের দোকানের আড়ালে অবৈধভাবে মদ বিক্রি হয় এখানে। রকমারি মদ মেলে হোটেল-রিসর্টগুলিতেও। পুলিশ-প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাতেই এই কারবার চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। মন্দারমণির বাসিন্দা শেখ রাজেশউদ্দিন বলেন, ‘‘মন্দারমণিতে লোকে আর এখন শুধু বেড়াতে আসে না। আসে নেশা করতে। হাতের নাগালে মদ পাওয়াও যায়। পুলিশ সব জেনে চুপ করে থাকে।’’ স্থানীয় ট্রেকার চালক তাপস পাণিগ্রাহীর অভিজ্ঞতা, ‘‘সৈকতে মদ্যপ যুবকরা বসে থাকে। অনেকে মত্ত অবস্থায় অন্য পর্যটকদের হেনস্থা পর্যন্ত করে।’’
রবিবারও মন্দারমণির সৈকতে এ ভাবেই চলল প্রকাশ্য মদ্যপান।
রবিবার সকালে অবশ্য জেলা আবগারি দফতর মন্দারমণি সৈকতে গজিয়ে ওঠা ঝুপড়ি দোকানগুলিতে অভিযান চালায়। বিলিতি মদ বাজেয়াপ্তের পাশাপাশি চলে ধরপাকড়। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘মোট ৯৩ বোতল মদ উদ্ধার করা হয়েছে। অবৈধভাবে মদ বিক্রির অভিযোগে সুজয় জানা নামে একজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।’’ মন্দারমণি কোস্টাল থানার ওসি পার্থ বিশ্বাসের নেতৃত্বে এ দিন মদ্যপ অবস্থায় সমুদ্রস্নানে না নামার জন্য মাইকে প্রচারও চালানো হয়। তবে এই অভিযানের সুফল নিয়ে খুব একটা আশাবাদী নন স্থানীয়রা। তাঁদের অভিজ্ঞতা, প্রতি বার দুর্ঘটনার পরই দিন কয়েক কড়া নজরদারি থাকে। তারপর যে-কে সেই। এ দিন মৃত বিনয় চৌধুরীর দেহ শনাক্ত করতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর বাবা সন্তোষ চৌধুরী। তিনি জানান, তথ্য প্রযুক্তি সংস্থার কর্মী বিনয় শনিবার সকাল ন’টা নাগাদ বাড়ি থেকে একাই বেরিয়েছিলেন। পরে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে মন্দারমণি রওনা দেন। দুপুরে মন্দারমণি পৌঁছে বাড়িতে খবর দিয়েছিলেন। সন্তোষবাবু বলছিলেন, ‘‘বিনয়ের স্ত্রী এখনও কিছু জানে না। বাড়িতে দেড় বছরের নাতি। ওদের সামনে কী করে দাঁড়াব জানি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy