Advertisement
E-Paper

সারদা নিয়ে মুখ খুলেছি, তাই হুমকি দিচ্ছে পুলিশ: আসিফ

সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে মুখ খোলায় তাঁকে রাজ্য পুলিশ চোখ রাঙাচ্ছে বলে ফের অভিযোগ করলেন প্রাক্তন তৃণমূল নেতা আসিফ খান। আসিফের বিরুদ্ধে একটি প্রতারণার মামলার তদন্ত চলছে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের অধীনে। গত বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর কমিশনারেটে আসিফের হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল। আসিফ ওই দিন নির্দিষ্ট সময়ে হাজির হন।

শুভাশিস ঘটক ও কাজল গুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১২
১৫ এপ্রিল ২০১৩। সুদীপ্ত সেন পালিয়ে যাওয়ার পরে কলকাতায় কলম পত্রিকার দফতরে সারদার হাতে থাকা সংবাদমাধ্যম নিয়ে বৈঠকে (ডান দিক থেকে) মুকুল রায়, আসিফ খান, তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ নাদিমুল হক ও মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু।   নিজস্ব চিত্র

১৫ এপ্রিল ২০১৩। সুদীপ্ত সেন পালিয়ে যাওয়ার পরে কলকাতায় কলম পত্রিকার দফতরে সারদার হাতে থাকা সংবাদমাধ্যম নিয়ে বৈঠকে (ডান দিক থেকে) মুকুল রায়, আসিফ খান, তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ নাদিমুল হক ও মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু। নিজস্ব চিত্র

সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে মুখ খোলায় তাঁকে রাজ্য পুলিশ চোখ রাঙাচ্ছে বলে ফের অভিযোগ করলেন প্রাক্তন তৃণমূল নেতা আসিফ খান।

আসিফের বিরুদ্ধে একটি প্রতারণার মামলার তদন্ত চলছে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের অধীনে। গত বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর কমিশনারেটে আসিফের হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল। আসিফ ওই দিন নির্দিষ্ট সময়ে হাজির হন। কিন্তু তাঁর দাবি, সে দিন তাঁকে কোনও জিজ্ঞাসাবাদই করা হয়নি। এর পরে শুক্র ও শনিবার তিনি ফের কমিশনারেটে হাজির হন। কিন্তু সে দু’দিনও তাঁকে ওই মামলা নিয়ে কোনও জেরা করা হয়নি বলে আসিফের দাবি। শনিবার, ৪ অক্টোবর কমিশনারেট থেকে বেরিয়ে আসিফ সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, পুলিশ তাঁকে জেরা করছে না। বরং সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে মুখ বন্ধ রাখার জন্য চাপ দিচ্ছে।

আসিফের দাবি, সারদা নিয়ে চাপে রাখার জন্যই তাঁকে প্রতারণার মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। ওই মামলায় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পাওয়া সত্ত্বেও তাঁকে হয়রানি করা হচ্ছে। বিধাননগর পুলিশ এখন ওই আগাম জামিন খারিজ করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে। আসিফ বলেন, “জামিন নাকচ হলে গ্রেফতার করা হবে। পুলিশ হুমকি দিচ্ছে। আমাকে চুপ করে থাকতে বলে শাসানো হচ্ছে।”

এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বরই আসিফ আনন্দবাজারের কাছে অভিযোগ করেছিলেন, সারদা মামলায় সিবিআই তদন্তের পক্ষে সওয়াল করার ফলেই শাসক দল তাঁর বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে। তাঁকে পুলিশি হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। মুকুলের প্রাক্তন সহচরের বিস্ফোরক দাবি ছিল, “সারদা মামলায় রাজ্য পুলিশের সিট যে তদন্ত করছিল, খাতায়কলমে তার দায়িত্বে ছিলেন বিধাননগরের কমিশনার রাজীব কুমার। আসল তদন্তটা চালাচ্ছিলেন মুকুল রায়।” এখনও আসিফের দাবি, রাজ্য পুলিশ সারদা তদন্ত প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। তাই তাঁকে মুখ বন্ধ করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান রবিবার এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন, “শাসক দলের নির্দেশে সারদা কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেওয়াই পুলিশের কাজ। সারদা নিয়ে কেউ মুখ খুললেই তাঁকে জেলবন্দি করতে চাইছে পুলিশ।”

কেন আসিফকে এত ‘ভয়’ পাচ্ছে প্রশাসন? সিবিআই সূত্রের খবর, তৃণমূলে একদা মুকুল রায়ের ছায়াসঙ্গী বলে পরিচিত আসিফ বেশ কিছু দিন ধরেই সারদা নিয়ে তদন্তকারীদের নানা তথ্য দিয়ে আসছেন। সংবাদমাধ্যমেও একাধিক বার মুখ খুলেছেন তিনি। প্রকাশ্যে দাবি করেছেন, কলকাতা ছেড়ে পালানোর আগে নিজাম প্যালেসে মুকুল রায়ের সঙ্গে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকে সাংসদ কুণাল ঘোষ, প্রাক্তন ডিজি রজত মজুমদার এবং সারদার পদস্থ কর্তা সোমনাথ দত্তও ছিলেন।

সিবিআই আসিফের কাছ থেকে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পেয়েছে বলে খবর। কী রকম?

সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে দিন কয়েক আগে সিঙ্গাপুর থেকে ঘুরে এসেছে সিবিআইয়ের একটি দল। তদন্তকারীদের দাবি, ২০১২ সালে এক ভারতীয় এজেন্টের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে কয়েকটি বিলাসবহুল হোটেল কেনা হয়েছিল। তদন্তকারীদের অনুমান সারদার যে টাকা বিদেশে পাচার হয়েছিল, সেই টাকাতেই কেনা হয়েছিল ওই সব হোটেল। কে বা কারা ওই এজেন্টকে নিয়োগ করেছিল, সেই রহস্য উদ্ঘাটন করতেই সিঙ্গাপুরে গিয়েছিল সিবিআই।

ঘটনাচক্রে সিবিআইয়ের প্রায় কাছাকাছি সময়ে আসিফও সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন। সিবিআইয়ের সঙ্গেই গিয়েছিলেন কি না, সেই প্রশ্ন যথারীতি উঠছে। আসিফের অবশ্য দাবি, তিনি চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। ধোঁয়াশা পুরোপুরি না কাটলেও সিবিআই সূত্রের খবর, সারদার টাকা বিদেশে পাচার নিয়ে অনেক তথ্যই তদন্তকারীদের দিয়েছেন আসিফ।

সারদার সংবাদমাধ্যমগুলি নিয়েও আসিফের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পেয়েছে সিবিআই। সিবিআই সূত্রের দাবি, সুদীপ্ত ফেরার হওয়ার পরেই সারদার সংবাদমাধ্যমগুলি বাঁচানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় ও তাঁর বিধায়ক-পুত্র শুভ্রাংশু। সুদীপ্ত দু’টি বৈদ্যুতিন-সহ ১৫টি সংবাদমাধ্যম-এর মালিক ছিলেন। ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল সুদীপ্তর মালিকানাধীন ‘কলম’ পত্রিকার দফতরে মুকুল, শুভ্রাংশু, রাজ্যসভার দুই সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরান ও নাদিমুল হক বৈঠক করেছিলেন। সেখানে আসিফও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকেই ঠিক হয়েছিল, সুদীপ্ত না থাকলেও তাঁর সব ক’টি সংবাদমাধ্যমকে সচল রাখতে হবে।

এই বৈঠক প্রসঙ্গে আসিফ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, “প্রথম দিকে মনে হয়েছিল, সারদার সংবাদমাধ্যমগুলি বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। পরে বোঝা যায়, ওই সংবাদমাধ্যমগুলি নিজেদের প্রচারের জন্য দখল করা হচ্ছে। তাই মুকুল রায়ের ছেলে শুভ্রাংশুকে মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।” মুকুল রায় অবশ্য আসিফের দেওয়া এই তথ্য সম্পর্কে কোনও মন্তব্যই করতে চাননি। শুভ্রাংশুকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। এসএমএসেরও জবাব দেননি।

বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের ব্যবসায়ী তথা তৃণমূল নেতা ওয়াইদুল হাসান সিদ্দিকি নিউটাউনে একটি জমি সংক্রান্ত ২০ কোটি টাকার প্রতারণার মামলা করেছেন আসিফের বিরুদ্ধে। সেই সূত্রেই সল্টলেক কমিশনারেটে যাতায়াত করতে হচ্ছে আসিফকে। ইতিমধ্যেই রাজ্য পুলিশ আসিফের পার্ক সার্কাসের বাড়িতে হানা দিয়েছে। তবে ওই তল্লাশিতে প্রতারণা মামলার চেয়েও আসিফের হাতে থাকা সারদার নথিপত্র সরানোই পুলিশের মূল উদ্দেশ্য ছিল কি না, এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল সিবিআইয়ের অন্দরে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর আসিফকে তলব করেছিল কমিশনারেট। আসিফ ২৬ তারিখ হাজিরা দিয়ে জানান, এর পরে ২ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি দেশের বাইরে থাকবেন। ফিরে এসে ফের হাজিরা দেবেন।

সেই মোতাবেক সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে হাজিরা দিতে গিয়েই তাঁকে পুলিশি হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে বলে আসিফের অভিযোগ। এর আগে জেল থেকে ইডি-কে লেখা চিঠিতে পুলিশের বিরুদ্ধে ঠিক এই অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষও। তাঁরও বক্তব্য ছিল, পুলিশ ভয় দেখিয়ে ইচ্ছামতো বয়ান লিখিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

saradha scam sudipto sen debjani asif khan subhasish ghatak kajol gupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy