Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
ছিনতাইয়ের অভিযোগে মারধর

গণপিটুনি আটকাতে গিয়ে জামুড়িয়ায় আক্রান্ত পুলিশ

পরপর মোটরবাইক আরোহীদের রাস্তা আটকে ছিনতাইয়ের অভিযোগে এক যুবককে পাকড়াও করে মারধর করছিল জনতা। ওই যুবককে উদ্ধার করতে গিয়ে আক্রান্ত হল পুলিশ। জামুড়িয়ার সিদ্ধপুর গ্রামে জনতার ছোড়া ইটে জখম হন কেন্দা ফাঁড়ির আইসি, এক এএসআই এবং তিন সিভিক ভলান্টিয়ার।

ঘটনার পরে গ্রামে তল্লাশি পুলিশের। ইনসেটে, আহত আইসি রাহুল সিংহ।

ঘটনার পরে গ্রামে তল্লাশি পুলিশের। ইনসেটে, আহত আইসি রাহুল সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:২২
Share: Save:

পরপর মোটরবাইক আরোহীদের রাস্তা আটকে ছিনতাইয়ের অভিযোগে এক যুবককে পাকড়াও করে মারধর করছিল জনতা। ওই যুবককে উদ্ধার করতে গিয়ে আক্রান্ত হল পুলিশ। জামুড়িয়ার সিদ্ধপুর গ্রামে জনতার ছোড়া ইটে জখম হন কেন্দা ফাঁড়ির আইসি, এক এএসআই এবং তিন সিভিক ভলান্টিয়ার। ভাঙে পুলিশের গাড়ির কাচ।

রবিবার সকালের এই ঘটনায় পুলিশ ন’জনকে আটক করেছে পুলিশ। ছিনতাইবাজ অভিযোগে প্রহৃত যুবক মহম্মদ সিকন্দরকে বাহাদুরপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ জানায়, তার বাড়ি গিরিডিতে। পুলিশের উপরে হামলার ঘটনায় বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ। ওই গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, তিনি মোটরবাইকে চেপে চিচুড়িয়া যাচ্ছিলেন। সেই সময়ে গ্রামের অদূরে ভাড্ডা মোড়ে রাস্তার পাশে একটি মোটরবাইক নিয়ে জনা চারেক যুবক দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের মধ্যে এক জন তাঁর রাস্তা আটকে দাবি করে, তাদের মোটরবাইকের তেল শেষ হয়ে গিয়েছে। তেল দিয়ে সাহায্য করলে ভাল হয়। ওই বাসিন্দা অভিযোগ করেন, এ কথা শুনে তিনি মোটরবাইক থেকে নামতেই এক যুবক তাঁর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে সঙ্গে থাকা আড়াই হাজার টাকা কেড়ে নেয়। তার পরে তাঁরে রাস্তার পাশে জোর করে বসিয়ে রাখে।


ভাঙচুর হওয়া গাড়ি।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এর পরে একই কায়দায় সিদ্ধপুর গ্রামের আরও দুই বাসিন্দার রাস্তা আটকায় ওই যুবকেরা। তৃতীয় জন প্রতিবাদ করলে তাঁকে মারধর শুরু করে তারা। ছিনতাইকারীদের হাতে আটক প্রথম বাসিন্দার দাবি, সেই সময়ে তাঁরা দু’জন ওই যুবকদের দিকে ঢিল-পাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। তাঁদের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পেয়ে গ্রামের লোকজনও ছুটে আসেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বেগতিক বুঝে ওই দুষ্কৃতীরা পালাতে যায়। তিন জন মোটরবাইকে চেপে পালাতে পারলেও সিকন্দরকে ধরে ফেলে জনতা। তাকে এলাকার একটি স্কুলের কাছে টেনে নিয়ে গিয়ে গণপিটুনি শুরু হয়।

খবর পেয়ে খানিক পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন কেন্দা ফাঁড়ির আইসি রাহুল সিংহ। পুলিশের গাড়ি দেখে ঢিল ছুড়তে শুরু করে জনতা। গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। মাথায় ইট লেগে আহত হন আইসি। এএসআই সুজিত চক্রবর্তীর পিঠে আঘাত লাগে। ইটের ঘায়ে জখম হন তিন সিভিক ভলান্টিয়ারও। এর পরেই বড় বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এসিপি অভিষেক রায়। লাঠি উঁচিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। সিকন্দরকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠায় পুলিশ। আহত পুলিশকর্মীদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ছিনতাইকারীকে জনতা পাকড়াও করে রাখার পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে এসে গ্রামের মানুষের উপরেই লাঠি চালায়। তাতেই খেপে ওঠে জনতা। পুলিশ যদিও সে কথা মানতে চায়নি। পুলিশের পাল্টা দাবি, ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রামবাসীদের বলা হয়েছিল, আইন যেন কেউ হাতে তুলে না নেয়। দুষ্কৃতীকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে বলা হয়। কিন্তু তা না করে পুলিশের উপরেই চড়াও হয় জনা কয়েক বাসিন্দা। পরে ঘটনায় জড়িতদের খোঁজে গ্রামে তল্লাশি চালায় পুলিশ।

ছবিগুলি তুলেছেন ওমপ্রকাশ সিংহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

state news Jamuria police beaten
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE