Advertisement
E-Paper

এ বার বাম জমানার ফাইল খুঁড়বে পুলিশ

বিপর্যয়ের উৎস খুঁজতে ৮ বছর পিছিয়ে গেল পুলিশ। তাতেই দানা বাঁধল নয়া বিতর্ক। প্রশ্ন উঠেছে, প্রশাসনের মাথার সুরে সুর মিলিয়েই কি পুলিশের এই পদক্ষেপ? ২০০৮ সালে, রাজ্যের তদানীন্তন বাম সরকারের আমলে বিবেকানন্দ রোডে উড়ালপুল বানানোর বরাত দেওয়া হয়েছিল হায়দরাবাদের নির্মাতা সংস্থাটিকে। নির্মীয়মাণ সেতুর একাংশ ভেঙে পড়ায় তাদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৪৮

বিপর্যয়ের উৎস খুঁজতে ৮ বছর পিছিয়ে গেল পুলিশ। তাতেই দানা বাঁধল নয়া বিতর্ক। প্রশ্ন উঠেছে, প্রশাসনের মাথার সুরে সুর মিলিয়েই কি পুলিশের এই পদক্ষেপ?

২০০৮ সালে, রাজ্যের তদানীন্তন বাম সরকারের আমলে বিবেকানন্দ রোডে উড়ালপুল বানানোর বরাত দেওয়া হয়েছিল হায়দরাবাদের নির্মাতা সংস্থাটিকে। নির্মীয়মাণ সেতুর একাংশ ভেঙে পড়ায় তাদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। সেই প্রেক্ষিতে লালবাজার এখন যাচাই করতে চায়, বরাত মঞ্জুরির সময়ে নিয়ম-নীতি সব ঠিকঠাক মানা হয়েছিল কি না। তাই আট বছরের পুরনো ফাইলের খোঁজ পড়েছে। বরাত-প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বিচারের সঙ্গে গোয়েন্দারা নক্‌শা-বিতর্কেরও ফয়সালা চাইছেন। তাঁরা দেখবেন, উদ্যোগের সূচনায় উড়ালপুলটির যে নক্‌শা জমা পড়েছিল, তাতেই কোনও গলদ রয়ে গিয়েছে কিনা। থাকলে খতিয়ে দেখা হবে, কী ভাবে ত্রুটিপূর্ণ নক্‌শা অনুমোদিত হল। প্রকল্পটির মূল হোতা তথা তত্ত্বাবধায়ক কেএমডিএ’র তরফে যাঁরা তখন বিষয়টি দেখাশোনা করেছিলেন, প্রয়োজনে তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে লালবাজারের ইঙ্গিত।

আট বছর বাদে আধা তৈরি পথ-সেতুটির একাংশ হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়েছে। গত ৩১ মার্চ ভরদুপুরের ওই ঘটনায় ২৭ জনের প্রাণ গিয়েছে, আহত অন্তত ৯০। এবং বিপর্যযের জন্য নির্মাতা ঠিকাদার কোম্পানি আইভিআরসিএলের পাশাপাশি রাজ্য সরকারি সংস্থা কেএমডিএ’র দিকেও আঙুল উঠেছে। ছোট-বড় মিলিয়ে কেএমডিএ-র মোট ১২ জনকে জেরা করেছে লালবাজার। প্রকল্পটির সঙ্গে সংস্থার কারা কারা জড়িত, সেই তালিকাও প্রস্তুত। বস্তুত পুলিশ-সূত্রের দাবি, বিবেকানন্দ রোড উড়ালপুলের নির্মাণকাজে কেএমডিএ’র তরফে নজরদারির ঘাটতির ব্যাপারটা প্রাথমিক তদন্তে পরিষ্কার। এমনকী রাজ্য সরকারের গড়া উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি ও বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ সংস্থাও প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে কেএমডিএ’র ‘গাফিলতি’কে তুলে ধরেছে।

দোষটা ঠিক কাদের? লালবাজারের দাবি, সে সব ব্যক্তিকে এখনও নির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। তাই কেএমডিএ’র কাউকে এখনও হেফাজতে নেওয়া হয়নি। অন্য দিকে আইভিআরসিএলের দশ জনকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার করেছে লালবাজার। সোমবার কোর্টের নির্দেশে ধৃতদের ফের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। যদিও সেতু-কাণ্ডে নাম জড়ানো রজত বক্সীর নাগাল পুলিশ পায়নি। স্থানীয় এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার আত্মীয় রজত উড়ালপুল প্রকল্পে শ্রমিক সরবরাহ করতেন। কেএমডিএ’কে ‘ছাড়’ দেওয়া ও বারো দিনেও রজতের হদিস করতে না-পারায় পুলিশি তদন্ত নিয়ে পোস্তার বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন। এমতাবস্থায় পুলিশ এখন বাম জমানার ফাইলের দিকে মন দেওয়ায় নতুন করে অনেকের ভুরু কুঁচকেছে। এই মহলের বক্তব্য: সেতু ভেঙে পড়ার দিনই ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ঘটনার দায় বাম সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ছন্দ বজায় রেখেই কি পুলিশ তদন্তের অভিমুখ
বদলাচ্ছে? পুলিশ অবশ্য এ হেন তত্ত্ব ফুৎকারে ওড়াচ্ছে। ‘‘ফ্লাইওভারের কাজ শুরু হয়েছিল আট বছর
আগে। তখনকার ফাইলপত্র না-দেখলে তদন্ত এগোবে কী করে?’’— পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন লালবাজারের এক কর্তা। তাঁর যুক্তি, ‘‘কেন্দ্রের কালো তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানি কী ভাবে বরাত পেল, তা জানতে হলে অতীত খুঁড়ে বার করা ছাড়া উপায় নেই।’’ বিরোধীরা কিন্তু রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন। আট বছর আগে বামফ্রন্ট সরকারের পুর-নগরোন্নয়নমন্ত্রী ছিলেন যিনি, সেই অশোক ভট্টাচার্যের দাবি: ২০০৯-এ উড়ালপুলের কাজ শুরুর সময়ে আইভিআরসিএল কালো তালিকায় ছিল না। মাঝখানে বেশ কিছু কাল নির্মাণ বন্ধ ছিল। ২০১১-য় যখন ফের শুরু হয়, তত দিনে সংস্থাটি ‘ব্ল্যাক লিস্টেড’ হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy