Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শেখ মুস্তফার গাড়িতে ভাঙচুর ফের উত্তপ্ত পাড়ুইয়ের গ্রাম

ফের রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পাড়ুই থানা এলাকা। শুক্রবার সকাল থেকে পাড়ুই থানার বনশঙ্কা পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের বাড়িতে বোমাবাজি-ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

হামলার পরে তৃণমূলের সাত্তোর অঞ্চল সভাপতির গাড়ির হাল।

হামলার পরে তৃণমূলের সাত্তোর অঞ্চল সভাপতির গাড়ির হাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাড়ুই শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ০২:০৭
Share: Save:

ফের রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পাড়ুই থানা এলাকা।

শুক্রবার সকাল থেকে পাড়ুই থানার বনশঙ্কা পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের বাড়িতে বোমাবাজি-ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিকেলে ওই থানারই সাত্তোর এলাকায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের লক্ষ করে পাল্টা বোমাবাজির অভিযোগ উঠল বিজেপির বিরুদ্ধে। এ দিকে ওই এলাকা থেকে এক বিজেপি কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে অভিযোগ তুলে রাস্তা অবরোধ শুরু করে বিজেপি। রমজান মাসেও নতুন করে দু’পক্ষের এই গোলমালে তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেছেন সাধারণ বাসিন্দারা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দিন চারেক ধরেই পাড়ুই থানা এলাকার গোরাপাড়া, পলাশি, তালিবপুর, কচিয়ারা গ্রাম-সহ এলাকার একাধিক গ্রামে শাসকদল তৃণমূল এবং বিরোধী বিজেপি-র মধ্যে বেশ কয়েক বার বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার রাতেও গোলাপবাগ এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে বোমাবাজি হয়। খবর পেয়েই পুলিশ এলাকায় গিয়ে অবশ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছিল। কিন্তু শান্তি ফেরার নয়। এ দিন সকাল থেকেই সিউড়ি ২ ব্লকের অন্তর্গত পাড়ুই থানার বনশঙ্কা পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের বাড়িতে বোমাবাজি-ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। খবর ছড়াতেই লাগোয়া বাতিকার এবং মঙ্গলডিহি পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামেও উত্তেজনা ছড়ায়। এলাকায় বিশাল পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বনশঙ্কা এলাকার বিজেপি নেতা শেখ টুটুলের অভিযোগ, ‘‘এই এলাকায় বিজেপি-র ক্ষমতা বাড়তে দেখে তৃণমূল সহ্য করতে পারছে না। তাই বহিরাগত দুষ্কৃতীদের দিয়ে এলাকায় সন্ত্রাস করছে। শান্ত এলাকাকে বারবার অশান্ত করছে।’’ তাঁর দাবি, গোলাপবাগ গ্রামের শেখ চাঁদ, শেখ রাখাল, শেখ মফিজুর-সহ একাধিক দলীয় কর্মী বুধবার থেকে গ্রামছাড়া। তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তাঁদের এলাকাছাড়া করেছে।

বিজেপি-র স্থানীয় নেতৃত্বের দাবি, রমজান মাসে তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে এলাকার একাধিক গ্রাম পুরুষশূন্য। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এলাকার বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকদের আরও কোণঠাসা করতে এ দিন সকাল থেকেই তেড়েফুড়ে নামে শাসকদল। সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ পলাশি গ্রামের মসজিদ পাড়ায় আচমকা বোমা-বারুদ নিয়ে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক এবং বহিরাগত দুষ্কৃতীরা বোমা ছোড়ে বলে অভিযোগ। শেখ টুটুল বলেন, ‘‘ওরা আমার বাড়িতে লুঠপাট করেছে। শেখ জিয়ার, বাহারউদ্দিন শেখ, জিয়াউদ্দিন শেখ, আসরফ আলি, আবদুল মোতিন-সহ গ্রামের বহু দলীয় কর্মী-সমর্থকের বাড়িতে গিয়ে শাসানি দিয়েছে। যে কোনও সময়ে ওঁদের বাড়ি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’ তাঁর আরও দাবি, দুষ্কৃতীরা তালিবপুরের বাসিন্দা শেখ জালাল, শেখ হারাধনের বাড়িতেও ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে।

এ দিকে, বিকেলে পাড়ুই থানারই সাত্তোর বাজার এলাকা থেকে বিজেপি কর্মী শেখ মিঠুনকে (সাত্তোরের নির্যাতিতার ভাসুরপো) বিনা কারণে পুলিশ তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে। এরপরেই এলাকায় বিজেপি কর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন। কিছুক্ষণ পরে সেখানে বোমাবাজি ও ভাঙচুর শুরু হয়। অভিযোগ তাঁর নির্দেশেই পুলিশ মিঠুনকে ধরেছে সন্দেহ করে বিজেপি কর্মীরা সেখানে থাকা তৃণমূলের অঞ্চল সম্পাদক শেখ মুস্তফা এবং তাঁর অনুগামীদের উদ্দেশ করে বোমা ছোঁড়ে এবং কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। দোকান ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। এরপরেই মিঠুনকে ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে বিজেপি কর্মীরা সন্ধ্যা পৌনে ছ’টা থেকে সাত্তোরে, বোলপুর-সিউড়ি রাস্তার উপর অবরোধ শুরু করেন। এর জেরে, সাত্তোরে সন্ধ্যার পর থেকে ব্যাপক যানজট এবং গণ্ডগোল শুরু হয়। বিজেপি কর্মী মিঠুন শেখ কে অবিলম্বে সাত্তোরে আনার দাবিতে অনেক রাত পর্যন্ত পথ অবরোধ চালিয়ে যান বিজেপি কর্মীরা। ওই নির্যাতিতা এবং তাঁর পরিবার সহ আশেপাশের বহু বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা পথে নামেন।

ওই নির্যাতিতার স্বামীর অভিযোগ, ‘‘দিন তিনেক আগে জামিনে ছাড়া পেয়েছিল আমার ভাইপো শেখ মিঠুন। শুক্রবার বিকেল চারটে নাগাদ বাড়ি থেকে সাত্তোর বাসস্টপের কাছে যেতেই, তাকে পুলিশ তুলে নেয়। কী কারণে পুলিশ ওকে তুলেছে জানতে চেয়ে পাড়ুই থানার ওসি নীলোৎপল মিশ্র থেকে শুরু করে এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষ এবং জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের কাছে জানতে চেয়ে ফোন করি। কিন্তু সকলেই জানাচ্ছে, তাঁরা জানেন না। অথচ ভরা বাসস্টপ থেকে জনা কুড়ি পুলিশ আমার ভাইপোকে তুলে নিয়েছে! কী অপরাধে ওকে তোলা হয়েছে? অবিলম্বে তাকে সাত্তোরে ফিরিয়ে আনতে হবে।’’ তাঁরা তৃণমূল নেতাদের উপর বোমাবাজির অভিযোগ মানতে চাননি।

তৃণমূলের সাত্তোর অঞ্চল সম্পাদক শেখ মুস্তফার পাল্টা দাবি, ‘‘এ দিন বিকেলে আমি সাত্তোর বাসস্টপে চা খাচ্ছিলাম। আমাকে খুন করার উদ্দেশ্যে বিজেপি কর্মী-সমর্থক এবং তাদের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বোমা ছুড়ছে। কোনও মতে প্রাণ বাঁচাই। আমার ছেলের গাড়িতে ভাঙচুর করেছে। তৃণমূলের দুই কর্মীর গাড়িতে ভাঙচুর এবং এলাকায় বোমাবাজি করেছে। পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে।’’

বিজেপি-র পাড়ুই থানা কমিটির সভাপতি শেখ সামাদ বলেন, ‘‘বার বার একাধিক এলাকায় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালাচ্ছে। আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না।’’ বিজেপি-র অভিযোগ মানতে অস্বীকার করেছে শাসকদল। তৃণমূলের পাড়ুই থানা কমিটির চেয়ারম্যান মুস্তাক হোসেনের দাবি, ‘‘বিজেপি দুষ্কৃতীদের জড়ো করে ওই সব কাণ্ড করছে। তারাই সাধারণ বাসিন্দাদের ভীত-সন্ত্রস্ত করছে। শান্ত এলাকায় অশান্তি ছড়াচ্ছে। আমরা এলাকায় শান্তি বজায় রাখার জন্য পুলিশকে বলেছি। ঘটনার সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের গ্রেফতার করুক পুলিশ।’’

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Political Parui Golapbag BJP SDPO
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE