Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
নিশানায় নেতা

সাইকেলে ছিলেন, গলার নলি ফুঁড়ে চলে গেল গুলি

দু-দিকে চাষের জমি। মাঝখান দিয়ে চলে গিয়েছে মোরামের রাস্তা। সেই রাস্তা দিয়েই প্রতিদিন রাতে বাড়ি ফিরতেন সূর্যমোহন। তার আগে বাজারের চায়ের দোকানে বসে চলত দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে গল্প, কর্মপন্থা ঠিক করা।

সূর্যমোহন বিশ্বাস। ডান দিকে, সেই রাস্তা।  নিজস্ব চিত্র

সূর্যমোহন বিশ্বাস। ডান দিকে, সেই রাস্তা। নিজস্ব চিত্র

সৌমিত্র সিকদার
চাকদহ শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:২৫
Share: Save:

আচমকা পর-পর কয়েকটি গুলির শব্দ! আশপাশের মানুষ ছুটে এসে দেখলেন, মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন সূর্যমোহন। হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও সে দিন বাঁচানো যায়নি প্রবীন কংগ্রেস নেতাকে।

দু-দিকে চাষের জমি। মাঝখান দিয়ে চলে গিয়েছে মোরামের রাস্তা। সেই রাস্তা দিয়েই প্রতিদিন রাতে বাড়ি ফিরতেন সূর্যমোহন। তার আগে বাজারের চায়ের দোকানে বসে চলত দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে গল্প, কর্মপন্থা ঠিক করা।

২০০২ সাল। অগস্ট মাসের ২০ তারিখ। অন্য দিনের মতোই রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ ওই রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন বছর ৬৫-র সূর্যমোহন বিশ্বাস। রাস্তার পাশে একটি খেজুর গাছের ধারে দাঁড়িয়ে ছিল দুষ্কৃতীরা। সূর্যমোহন একটু কাছে আসতেই তারা এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। একটি গুলি তাঁর গলার নলি ফুঁড়ে করে চলে যায়। তিনি সাইকেল থেকে পড়ে যান। গুলির শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। পাশে একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মাথায় জল দেওয়া হয়। তখনও তিনি বেঁচে। তাঁকে প্রথমে চাকদহ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ও পরে শারিরিক অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে কল্যাণী জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। পরদিন ভোরে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

রাজনৈতিক মহল সূত্রের খবর, বাম জমানাতেও মানুষ প্রয়োজনে তাঁর কাছ ছুটে আসতেন। তিনি কখনও দল দেখতেন না। কেউ সমস্যার কথা জানালে সমাধানের জন্য ছোটাছুটি শুরু করে দিতেন। তিনি পেশায় ছিলেন তাঁত শ্রমিক। এলাকার তাঁত শ্রমিকদের নিয়ে বিভিন্ন আন্দোলন করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের মতে, বাম নেতাদের একাংশ এটা ঠিক মেনে নিতে পারেননি। তাঁদের অনেকেরই পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। খুনের ঘটনায় দু’জন গ্রেফতার হলেও শেষমেশ কারও সাজা হয়নি।

শুধু রাজনৈতিক নেতা নয়, এলাকায় ভাল ফুটবলার হিসাবেও পরিচিত ছিল সূর্যমোহন। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “শুধু তাঁর খেলা দেখতে বিভিন্ন জায়গায় ছুটে গিয়েছি। একা বল নিয়ে ছুটে যেতেন। দুর্দান্ত গতিতে সবাইকে কাটিয়ে গোল দিতেন”

চাকদহ ব্লকের হিংনাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মেঠোপাড়ায় বাড়ি সূর্যমোহনের। মাটির দেওয়ালের সেই বাড়িতে এখন রয়েছে রাজীব গাঁধীর দুটি ছবি। পাশে তাঁর ছবি। তাঁর দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে। বড় ছেলে শ্যামল বিশ্বাস বলেন, “বাবার কিছু একটা হয়েছে শুনে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি, বাবার মাথায় জল দেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মারা যান। বাবা কখনও কারও কোনও ক্ষতি করেননি। বাবার জনপ্রিয়তার জন্যই তাঁকে খুন করা হয়েছিল।”

চাকদহ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ অনুপ কুমার সরকার বলেন, “হিংনাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত সিপিএম ক্ষমতায় থাকলেও সূর্যদার জন্য তারা অনেক কিছু করতে পারত না।’’ তাঁর কথায়, “সূর্যদার গুলি লেগেছে শুনে চাকদহ হাসপাতালে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি একটা ট্রলির উপরে বসে হাঁপাচ্ছেন। আমাকে দেখে বললেন, ‘আমার খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।’ ডাক্তারকে জানাই। তাড়াতাড়ি কল্যাণীতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আর তাঁকে বাড়ি ফেরানো গেল না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Political Murder Murder Chakdah Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE