E-Paper

মৃত, ভুয়ো ভোটারের তালিকা ধরে বিরোধীদের এসআইআর-প্রস্তুতি

রাজ্যে মৃত তথা অস্তিত্বহীন ভোটার এখন কত আছে তালিকায়, দলীয় স্তরে সিপিএম ও বিজেপি তার প্রাথমিক হিসেব করে রাখছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৪৬
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ভোটের ময়দানে লড়াইয়ের আগে ভোটার তালিকার হিসেব নিয়ে তৈরি হচ্ছে বাংলায় বিরোধী শিবির।

বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ আমূল সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ায় বাদ গিয়েছে ৪৭ লক্ষের বেশি নাম। নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী, এসআইআর-এর প্রথম পর্বে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্‌ম পূরণের সময়ে সে রাজ্যে ২২ লক্ষ মৃত ভোটার পাওয়া গিয়েছিল। বাংলায় মৃত ও অস্তিত্বহীন ভোটার নিয়ে বিতর্ক বহু দিনের। এসআইআর এখানে শুরু হওয়ার আগে তাই সেই তালিকায় সমীক্ষা করে ঘর গোছাচ্ছে বিজেপি, সিপিএমের মতো বিরোধী দলগুলি।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জানিয়ে দিয়েছেন, এসআইআর-এ প্রকৃত ভোটারের নাম যাতে বাদ না যায়, সে দিকে নজর রেখে নভেম্বরে এলাকাভিত্তিক সহায়তা শিবির খুলবে বামপন্থীরা। প্রকৃত ভোটারদের নাম বাদ না দেওয়া-সহ বেশ কিছু দাবি নিয়ে আগামী ২৯ অক্টোবর বিবাদী বাদে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরের কাছে ধর্না-জমায়েতেরও ডাক দিয়েছে তারা। এরই পাশাপাশি সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের তরফে সব জেলায় দলের এরিয়া কমিটিগুলিকে বলা হয়েছে ভোটার তালিকা পর্যালোচনা করে মৃত, স্থানান্তরিত বা অস্তিত্বহীন ব্যক্তিদের নাম চিহ্নিত করে রাখতে। যাতে এসআইআর-এ কমিশনের প্রতি‌নিধিরা অস্তিত্বহীন নাম ছেড়ে রেখে প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ দিচ্ছেন কি না, তা ধরতে সুবিধা হয়। বিহারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই এমন সিদ্ধান্ত। বুথ লেভল এজেন্ট (বিএলএ) নিয়োগের আগেই এই প্রস্তুতি সেরে রাখা সম্ভব।

রাজ্যে মৃত তথা অস্তিত্বহীন ভোটার এখন কত আছে তালিকায়, দলীয় স্তরে সিপিএম ও বিজেপি তার প্রাথমিক হিসেব করে রাখছে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘প্রাথমিক ভাবে যা হিসেব আছে, তাতে আমাদের রাজ্যে এক একটা বুথে ৫০-৬০ জন করে, কোথাও আবার ৭০-৮০ জন করে মৃত এবং যাদের কেউ চেনে না, এমন ভোটারের নাম আছে। গ্রামে একটু কম, শহরে বেশি। প্রায় ৯০ হাজার বুথে এই অস্তিত্বহীন ভোটারদের নাম কাটলেই প্রায় ৫০ লক্ষ নাম বাদ যাবে! বছর বছর কমিশন কেন এই কাজটা করেনি, তারাই বলতে পারবে!’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমরা একাধিক বার কমিশনে তালিকা জমা দিয়েছি। মৃত ও ভুয়ো ভোটারের নাম বাদ দেওয়া উচিত। কিন্তু বিজেপি চাইছে এসআইআর করে প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ দিতে, তৃণমূল কংগ্রেস চাইছে ভুয়ো ভোটারের নাম রেখে দিতে। এর কোনওটাই চলবে না।’’

নন্দীগ্রামে কালীপুজোর উদ্বোধনে গিয়ে সোমবারও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘‘মৃত ভোটার, ভুয়ো ভোটার বাদ যাবে। ‘ডাবল এন্ট্রি’, ‘ট্রিপল এন্ট্রি’ বাদ যাবে। অনুপ্রবেশকারী বাদ পড়বে। ভারতীয় মুসলিম বা কারও কোনও ভয় নেই। আমাদের লোকজনকে সজাগ থাকতে হবে।’’ এসআইআর-এর কাজ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে করার জন্য সাংগঠনিক স্তরে নির্দেশ দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যও।

কোনও মৃত ব্যক্তির নাম ভোটার তালিকায় থেকে গেলে তা বাদ দেওয়ার জন্য আগে বিএলএ-২ (বুথ লেভেল এজেন্ট)-কে নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাতে হত। প্রমাণ হিসাবে নথিও দিতে হত অভিযোগকারীকে। এসআইআর-এর সময়ে কমিশনের প্রতিনিধিরই ভোটারের বাড়ি গিয়ে তথ্য নেওয়ার কথা। পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘সমস্ত বুথে আমাদের দলের বিএলএ-২’রা এই ক্ষেত্রে নিয়মমাফিক শুধু অভিযোগ করবেন। বাকি প্রমাণ খোঁজার দায়িত্ব কমিশনের।’’

প্রদেশ কংগ্রেসও এসআইআর সংক্রান্ত বিশেষ কমিটি গড়ে প্রস্তুত থাকতে চাইছে। তবে কমিশনের উপরে তারা চাপ সৃষ্টি করলেও নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে নানা প্রশ্ন এখনও আছে। কংগ্রেসেরই একটি সূত্রের বক্তব্য, গত ১০ বছরে সংগঠনের হাল এমন হয়েছে যে, এলাকা ধরে ধরে ভোটার তালিকা সংগ্রহের কাজও সর্বত্র ঠিক ভাবে হয় না।

এমতাবস্থায় শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস নানা জায়গায় নাগরিক কমিটি গড়ে এসআইআর-প্রশ্নে পাল্টা চাপ তৈরি করতে চাইছে কমিশনের উপরে। দলের নেতাদের দাবি, কোনও বৈধ নাম বাদ গেলে ছেড়ে দেওয়া হবে না। একই সঙ্গে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলে বার্তা দিয়ে রেখেছেন, ভোটার তালিকা থেকে এক কোটি নাম কেটে দিয়েও তৃণমূলকে হারাতে পারবে না বিজেপি! তবে তাই বলে এসআইআর-এ সাংগঠনিক দায়িত্বে ফাঁক রাখা চলবে না।

প্রদেশ কংগ্রেসও এসআইআর সংক্রান্ত বিশেষ কমিটি গড়ে প্রস্তুত থাকতে চাইছে। তবে কমিশনের উপরে তারা চাপ সৃষ্টি করলেও নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে নানা প্রশ্ন এখনও আছে। কংগ্রেসেরই একটি সূত্রের বক্তব্য, গত ১০ বছরে সংগঠনের হাল এমন হয়েছে যে, এলাকা ধরে ভোটার তালিকা সংগ্রহের কাজও সর্বত্র ঠিক ভাবে হয় না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SIR

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy