Advertisement
E-Paper

শান্তি ফেরার নাম নেই উত্তপ্ত মাখড়ায়

সাত মাসেও ঘরে ফিরতে পারেননি ওঁরা। সোমবার আরও এক বার সেই চেষ্টা শুরু হতেই নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল এলাকা। ফের শুরু হল সংঘর্ষ, বোমাবাজি। বোমার ঘায়ে জখম হলেন এক অন্তঃসত্ত্বা বধূ এবং তাঁর শিশুকন্যা-সহ তিন জন। আর এই নিয়ে ফের চাপানউতোরে নেমে পড়ল তৃণমূল এবং বিজেপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৫ ০৩:৪৪
মাখড়ায় বোমায় জখম অন্তঃসত্ত্বা বধূ। মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র।

মাখড়ায় বোমায় জখম অন্তঃসত্ত্বা বধূ। মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র।

সাত মাসেও ঘরে ফিরতে পারেননি ওঁরা। সোমবার আরও এক বার সেই চেষ্টা শুরু হতেই নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল এলাকা। ফের শুরু হল সংঘর্ষ, বোমাবাজি। বোমার ঘায়ে জখম হলেন এক অন্তঃসত্ত্বা বধূ এবং তাঁর শিশুকন্যা-সহ তিন জন। আর এই নিয়ে ফের চাপানউতোরে নেমে পড়ল তৃণমূল এবং বিজেপি।

এবং দিনের শেষে পাড়ুই দেখিয়ে দিল, সাত মাসে তারা একটুও বদলায়নি। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠে গেল এলাকায় শান্তি ফেরানোর ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে।

রাজ্য-রাজনীতির ব্যাপারে যাঁরা ওয়াকিবহাল, তাঁদের বক্তব্য, বাম আমলে কেশপুর-গড়বেতা বা নন্দীগ্রাম-খেজুরি পর্বে এমন ঘটনা বহু বার দেখা গিয়েছে। ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানো নিয়ে যুযুধান দু’পক্ষের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে তুঙ্গে উঠে যেত তরজা। সেই একই ছায়া দেখা যাচ্ছে পাড়ুইয়ের মাখড়া গ্রামেও। গ্রামটি বিজেপি প্রভাবিত। সেখানে নিজেদের সমর্থকদের ঘরে ফেরাতে গিয়ে বারবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে তৃণমূল। তাদের অভিযোগ, তাদের লোকজনকে নিজেদের বাড়িতে ফিরতে দিচ্ছে না বিজেপি। আর বিজেপির অভিযোগ, ঘরছাড়াদের ফেরানোর নাম করে আসলে এলাকা দখলের চেষ্টাই করছিল তৃণমূল।

গত অক্টোবরে শেষ চেষ্টা হয়েছিল এই ঘরছাড়াদের ফেরানোর। তখনও তীব্র সংঘর্ষ হয়। নিহত হন তৃণমূলের দুই এবং বিজেপির এক জন কর্মী। সোমবার রাতের ঘটনা সেই স্মৃতি উস্কে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি করল এলাকায়। এ বারের সংঘর্ষে আহতেরা বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নতুন করে কোনও সংঘর্ষ দেখা না দিলেও ঘটনার জেরে মঙ্গলবার দিনভর মাখড়া এবং আশপাশের এলাকা তেতে থাকল। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে মাখড়ায় থাকা ক্যাম্পের পাশাপাশি এলাকায়ও পুলিশ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। র‌্যাফ, কমব্যাট বাহিনী দিনভর উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলিতে চিরুনি তল্লাশি চালিয়েছে। তবে, এখনও পর্যন্ত কোনও পক্ষই অভিযোগ দায়ের করেনি। পুলিশ কাউকে আটক বা গ্রেফতারও করেনি। যোগাযোগ করা হলেও বীরভূমের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার মন্তব্য করেননি।


মাখড়ায় পুলিশি টহল। মঙ্গলবার বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।

আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। অনেকেই বলছেন, পাড়ুই তথা মাখড়া এলাকা দীর্ঘদিন ধরে উত্তপ্ত। এমনকী, মাখড়ায় পুলিশ শিবিরও রয়েছে। তা সত্ত্বেও এলাকায় পাকাপাকি শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা কখনও করেনি পুলিশ-প্রশাসন। বাম আমলে কেশপুর-গড়বেতা বা নন্দীগ্রাম-খেজুরিতেও একই ভূমিকায় দেখা যেত তাদের। এই পরিস্থিতিতে এলাকায় যারা শক্তিশালী, তারা ধীরে ধীরে এলাকার পূর্ণ দখলদারি নিয়ে বিরোধীদের কার্যত মুচলেকা লিখিয়ে ঘরে ফেরাত।

পাড়ুইয়ে অবশ্য এখনই এমন কোনও সম্ভাবনা নেই। শাসক দল তৃণমূলের ভূমিক্ষয় যেমন এখনও প্রবল ভাবে শুরু হয়নি, তেমনই দু’একটি বিক্ষিপ্ত এলাকা ছাড়া বিজেপির জোরের জায়গাও বিশেষ নেই। এই পরিস্থিতিতে দু’পক্ষের মধ্যে রফাসূত্র বার করে এলাকায় শান্তি ফেরানোর চেষ্টা করাই যেত বলে স্থানীয়দের একাংশের অভিমত। তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, বাড়ির লোকেরা এ ভাবে দিনের পর দিন ঘরে ফিরতে না পারলে কারই বা ভাল লাগে! আবার অন্যরা বলছেন, রাজ্য জুড়ে পুলিশ নিজের পিঠ বাঁচাতেই ব্যস্ত। তারা শান্তি ফেরাবে কী করে!

ফলে যা হওয়ার, সোমবার সেটাই হয়েছে, বক্তব্য প্রশাসনের একাংশের। কী হয়েছিল সে দিন? স্থানীয় সূত্রে খবর, দীর্ঘদিন ধরে পাড়ুই থানার একাধিক এলাকায় বিজেপি-তৃণমূল দু’দলেরই বহু কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া। বিশেষ করে মাখড়ায় তৃণমূলের প্রায় গোটা সতেরো পরিবারের পুরুষেরা গ্রামছাড়া হয়ে রয়েছেন। তৃণমূলের দাবি, সোমবার রাতে শেখ দুলাল, শেখ দোলনের নেতৃত্বে জনা ২৫ ঘরছাড়া তৃণমূল কর্মী-সমর্থক মাখড়ায় ঢোকার চেষ্টা করেন। তখনই সংঘর্ষ বাধে। এ দিন সকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তৃণমূল সমর্থক পরিবারের ওই অন্তঃসত্ত্বা বধূ জরিফা বিবি অভিযোগ করেন, “সন্ধ্যার পরে বাড়ির পুরুষেরা গ্রামে ফেরার চেষ্টা করছিলেন। খবর পেয়ে বিজেপির দুষ্কৃতীরা বাড়িতে চড়াও হয়। আমাকে শাসায়। ছোট মেয়েকে মারধর করে। উঠোনে বোমা ছোড়ে। কোনও মতে ছুটে প্রাণে বেঁচেছি।” তাতেই তিনি হাতে চোট পান। তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসা পড়শিকেও বিজেপির লোকজন বেধড়ক মারধর করে বলে তাঁর দাবি।

বিজেপি অবশ্য মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মাখড়ার বিজেপি সমর্থক শেখ জিয়ার আলি, শেখ রিপন, শেখ শাহজাহানদের পাল্টা দাবি, ঘরছাড়াদের ফেরানোর নামে তৃণমূলই বহিরাগত দুষ্কৃতীদের দিয়ে ফের গ্রাম দখলের চেষ্টা করেছিল। বাসিন্দারা রুখে দাঁড়িয়ে তা প্রতিরোধ করেছেন। তাঁরা বলেন, ‘‘তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা বোমা ছুড়তে ছুড়তে এলাকায় ঢুকে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে লুঠপাটের চেষ্টা করে। ওদের ছোড়া বোমায় আমাদের একাধিক কর্মী-সমর্থক জখমও হয়েছেন।’’

মাখড়ায় সংঘর্ষের খবর ছড়াতেই সোমবার রাতে লাগোয়া বেলপাতা-সহ কিছু গ্রামেও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তৃণমূল-বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বোমাবাজি হয়। বেলপাতার তৃণমূল সমর্থক সোয়াদা বিবি, শেখ সুজিতদের অভিযোগ, ‘‘বিজেপি বহিরাগত দুষ্কৃতীদের এনে বোমাবাজি ও লুঠপাট চালিয়েছে। আমরা প্রাণের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে মাঠে আশ্রয় নিয়েছি।’’ ঘটনা হল, সোমবার বেলপাতায় এক বিজেপি কর্মী আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে পাড়ুইয়ের এই অঞ্চলে।

এ দিন বীরভূমের আরও একটি এলাকা দিনভর উত্তপ্ত ছিল। বোলপুরের বড়শিমুলিয়া গ্রামে অবশ্য বিজেপির সঙ্গে নয়, সংঘর্ষ হয়েছে শাসকদলেরই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। ঘটনায় দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। জখম তিন মহিলাও। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তিনটি বাড়ি। চলেছে লুঠপাটও। ওই ঘটনায় দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে কট্টর অনুব্রত-বিরোধী হিসাবে পরিচিত নানুরের তৃণমূল নেতা কাজল শেখের গোষ্ঠী।

makhra trinamool tmc bjp cpm vandalism police gun
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy