প্রতীকী ছবি।
প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় পশ্চিমবঙ্গেরও বিভিন্ন গ্রামে পাকা রাস্তা তৈরি হয়েছে। তৈরির এক বছর পরে সেই সব রাস্তার হাল কেমন, তা দেখতে পরিদর্শক পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। তাঁদের বিপোর্ট বলছে, এ রাজ্যে ওই যোজনায় তৈরি রাস্তার ২০ শতাংশ নির্মাণের পরেই ভেঙেচুরে গিয়েছে। সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। জাতীয় গুণমান বিচারকমণ্ডলীর এমন রিপোর্ট রাজ্যে পাঠিয়ে কৈফিয়ত চেয়েছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের পরেও রাস্তার হাল খারাপ কেন, তা ব্যাখ্যা করতে হবে পঞ্চায়েত দফতরকে।
রাস্তার দুর্দশা নিয়ে রাজনীতির সুযোগ ছাড়ছে বিরোধী শিবির। গ্রামে পাকা রাস্তা তৈরির পরেই ভেঙে যাওয়ার ঘটনার সঙ্গে কাটমানি প্রসঙ্গ জুড়ে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল আমলে চারটে সেতু ভেঙেছে। ঠিকাদারদের কাটমানি দিতেই পকেট ফতুর। ভাল রাস্তা হবে কী ভাবে? সব ভাই-ভাইপোরা খেয়ে নিয়েছে!’’ পাল্টা জবাব দিয়েছেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে রাস্তা ভেঙে গিয়েছে আরও বেশি। বিজেপি-শাসিত অরুণাচল প্রদেশে পরিদর্শকেরা ৮৭টি নতুন তৈরি রাস্তা দেখেছিলেন। তার মধ্যে ৬৪টি ভাঙাচোরা। তা হলে ধরে নিতে হবে, বিজেপি-ও কাটমানি খেয়েছে।’’ পঞ্চায়েতমন্ত্রী জানান, এ রাজ্যে রাস্তা নির্মাণের পরে পাঁচ বছর তার রক্ষণাবেক্ষণের ভার ঠিকাদার সংস্থার। ফলে কেউ ছাড় পাবে না। রাস্তা মেরামত করে দিতে হবে।’’
সরকারি সূত্রের খবর, নীতি আয়োগের বিশেষজ্ঞেরা চেয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার রাস্তা যেন তৈরির পরে পরেই ভাঙতে শুরু না-করে, সেটা নিশ্চিত করা হোক। নীতি আয়োগ মনে করে, যথাযথ গুণমান বজায় রেখে তৈরি হলে ১৫ শতাংশের বেশি রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয় না। এর বেশি সংখ্যক রাস্তা যদি পরিদর্শকদের বিচারে খারাপ তকমা পায়, তা হলে ধরে নিতে হবে, সেই রাজ্যে যথাযথ গুণমান মেনে রাস্তা তৈরি হচ্ছে না।
সেই পরামর্শ মেনে ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে যে-সব রাস্তা তৈরি হয়েছে, তার পরিদর্শন শুরু করেন জাতীয় কেন্দ্রীয় গুণমান বিচারকমণ্ডলীর নজরদারেরা। সারা দেশে ৪৯৮৬টি রাস্তার গুণমান বিচার করে তাঁরা দেখেছেন, ৩১৮৩টি রাস্তার হাল খুব ভাল। কিন্তু তৈরির এক-দেড় বছরের মধ্যে ভেঙে গিয়েছে ৯১৪টি রাস্তা। যা পরীক্ষিত রাস্তার ১৮%। ওই বছর গ্রামাঞ্চলে ৫১ হাজার কিলোমিটার পাকা রাস্তা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। বছর শেষে তৈরি হয়েছে ৪৮ হাজার কিলোমিটার।
দেশের ২৮টি রাজ্যে ১৮% রাস্তা তৈরির হওয়ার এক বছরের মধ্যে ভেঙে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সেই হার আরও বেশি। ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরে রাজ্যে ৩৫০০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তৈরি হয় ৩২১৩ কিলোমিটার। রাজ্যে ২৩০টি রাস্তা পরিদর্শন করেন নরজদারেরা। তার মধ্যে ভাল রাস্তার সংখ্যা ১৩১। ৫৪টি কাজ চালানোর মতো। বাকি ৪৫টির হাল খুবই খারাপ। যা মোট পরীক্ষিত রাস্তার ২০ শতাংশ।
রাজ্যে রাস্তার হাল এমন কেন?
যে-সব ঠিকাদার প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার কাজ করেন, তাঁদের একাংশ জানাচ্ছেন, গ্রামে পাকা রাস্তা তৈরির ‘রেট’ বা খচের হার সারা দেশে এক রকম। কিন্তু নেতা-অফিসারদের ‘খুশি’ রাখার রেট এক-একটি রাজ্যে এক-এক রকম! অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গে ‘ব্যবস্থা’ সচল রাখার খরচ বেশি। ঠিকাদারেরা তো বাড়ি থেকে টাকা এনে রাস্তা তৈরি করেন না। দেওয়াথোয়ার পরে যা থাকে, তা দিয়েই রাস্তা তৈরি হয়। ফলে যথাযথ গুণমান রক্ষা খুবই কঠিন কাজ।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy