Advertisement
E-Paper

নিজের বই কেনা মুশকিল, তবু বৃত্তির টাকা স্কুলে

নাতি নভোনীলের কথা বলতে গিয়ে ফোনে কেঁদে ফেললেন বৃদ্ধা। বললেন, ‘‘দাদুভাই মানুষের মতো মানুষ হোক। ওর দাদু বেঁচে থাকলে খুশি হতেন।’’

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:২৫
নভোনীল। —নিজস্ব চিত্র।

নভোনীল। —নিজস্ব চিত্র।

দাদুভাই কবে এত ব়ড় হয়ে গেল? ঘোর কাটছে না বছর পঁচাত্তরের কাননবালা দাসের। নাতি নভোনীলের কথা বলতে গিয়ে ফোনে কেঁদে ফেললেন বৃদ্ধা। বললেন, ‘‘দাদুভাই মানুষের মতো মানুষ হোক। ওর দাদু বেঁচে থাকলে খুশি হতেন।’’

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথির বাদলপুর বিদ্যাভবন হাইস্কুলের শিক্ষকেরাও অবাক তাঁদের ছাত্রের সিদ্ধান্তে। যার নিজের বই কেনারই টাকা নেই, সে এক কথায় এত টাকা দিয়ে দিচ্ছে! তাঁরা জানাচ্ছেন, নভোনীলের বাবা ফোটোকপি করার দোকান রয়েছে। রয়েছে সামান্য চাষের জমি। তাতেই বাবা, মা এবং ঠাকুমাকে নিয়ে নভোনীলদের সংসার চলে। অথচ, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী নভোনীল তার বৃত্তির ২৪ হাজার টাকা দান করতে চায় নিজের স্কুলে। তার ইচ্ছে, ওই টাকায় লাইব্রেরির জন্য বই কিনুক স্কুল।

স্কুলের শিক্ষক রত্নদীপ সামন্ত বলছেন, ‘‘নভোনীল দারুণ ছাত্র। নবম থেকে দশম শ্রেণিতে ওঠার সময়েও স্কুলে দ্বিতীয় হয়েছে। ও বৃত্তি পাবে জানতামই। ওদের পারিবারিক অবস্থা তো আমরা জানি। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এই সিদ্ধান্ত ভাবাই যায় না।’’ প্রধান শিক্ষক সুবোধকুমার করণের কথায়, ‘‘ছাত্র হিসেবে ওর উদ্যোগে আমরা গর্বিত।’’

অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের ‘ন্যাশনাল মিনস-কাম-মেরিট স্কলারশিপ’ পরীক্ষা দেয় নভোনীল। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে সেই পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। বৃত্তি পায় নভোনীল। গত নভেম্বরে সেই বৃত্তির টাকা পেয়ে প্রধান শিক্ষককে চিঠি দিয়ে তা স্কুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় নভোনীল।

নভোনীলের বাবা দেবব্রতবাবু জানান, তাঁর বাবা বাণীব্রত ছিলেন বাদলপুর বিদ্যাভবন হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলে একদিন বৃত্তির টাকা স্কুলে দিয়ে দেওয়ার কথা বলল। অবাক হয়েছিলাম। বাবা ওই স্কুলের জন্য অনেক কিছু করেছেন। মনে হল, যেন আমার বাবাই কথা বলছেন। সংসারে সমস্যা তো আছেই। ওরও প্রচুর বই লাগছে। কী করে ব্যবস্থা করব জানি না। তবে ওকে স্কুলে টাকা দিতে বারণ করিনি।’’ মা গায়ত্রী বলেন, ‘‘শ্বশুরমশাই যে কাজ শুরু করেছিলেন, নভোনীল সেটাকেই হয় তো এগিয়ে নিতে যেতে চাইছে।’’

গল্পের বই পড়া আর ক্রিকেটই নেশা নভোনীলের। স্বপ্ন দেখে, কোনও দিন স্কুল দেখতে আসবেন তার ‘হিরো’ মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ছাত্রের কথায়, ‘‘সিঙ্গল নিয়েই বড় রান হয়। আমরা সকলে যদি কিছু কিছু করে দিতে পারি, স্কুলের সমস্যাগুলি সমাধান করা সম্ভব। যখন বৃত্তির পরীক্ষা দিই, দাদুভাই বেঁচে ছিলেন। তাই টাকা পেয়ে দাদুভাইয়ের ভালবাসার স্কুলকেই দিতে চাইছি।’’

Contai Poor Student Donation Scholarship
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy