স্কুলের মেধাবী ছাত্র মাধ্যমিকের আগেই পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বসেছিল। শিক্ষকেরা বুঝিয়ে স্কুলে ফেরত আনেন। মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয় সে। তার পরে আবার স্কুলছুট। তখন অভাবের তাড়নায় ভিন্ রাজ্যে কাজে চলে যায় সেই ছাত্র। আবারও ফিরিয়ে আনেন শিক্ষকেরা। ফিরে এসে উচ্চ মাধ্যমিক দিয়ে সম্প্রতি ৭৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে সাগরের কচুবেড়িয়া গ্রামের সুকদেব মাইতি। ফলাফল বেরোনোর পরেই অবশ্য সে ফের ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে কাজের জন্য।
সাগরের ফুলবাড়ি শীতলা স্কুলের ছাত্র সুকদেব পড়াশোনায় বরাবরই ভাল। কিন্তু পরিবারে অভাব চরম। বাবা রিকশা চালাতেন। বর্তমানে শ্রমিকের কাজ করেন। সংসার চালানোই যেখানে প্রতিদিনের লড়াই, পড়াশোনা সেখানে বিলাসিতা। মাধ্যমিকের আগে একটা সময়ে চার মাস টানা স্কুলে আসেনি সে। বই-খাতা ছুঁয়েও দেখেনি। নদীতে মাছ ধরে বেড়াত। স্কুলের শিক্ষক দিব্যেন্দুকুমার ত্রিপাঠী, সমীর মাঝিরা হাল ছাড়েননি। বার বার গিয়ে বোঝান তাকে। শিক্ষকেরা সুকদেবের খোঁজে বাড়িতে গেলে লুকিয়ে পড়ত সে। তবে অবশেষে কাজ হয়। হস্টেলের ব্যবস্থা হয়। স্কুলে ফেরে সুকদেব। স্কুলের পাশাপাশি পড়ত এক সাধারণ কোচিং সেন্টারে। তাতেই ২০২৩ সালের মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয় সে।
তার পরে? আবার হারিয়ে যায় সে। এ বার রোজগারের আশায় কেরলে পাড়ি দেয়। আবারও খোঁজ শুরু করেন শিক্ষকেরা। ফোন, যোগাযোগ, পরিবারকে বোঝানোর পরে শেষমেশ তাকে ফিরিয়ে এনে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। এ বছর সেই ছেলেই ৭৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হল। শিক্ষক সমীর মাঝি বলেন, “আজ ও শুধু আমাদের ছাত্র নয়, আমাদের লড়াইয়ের প্রতীক।” ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ভোলানাথ দাস বলেন, “যখন সবাই নম্বর দেখে ছাত্র বাছে, আমরা বলি— এক জন ছাত্রকে গড়ে তুলতে গেলে আগে তাকে ধরে রাখতে হয়, বুঝতে হয়।” সুকদেবের বাবা শ্রীকৃষ্ণ বলেন, “আমাদের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। দিন আনা, দিন খাওয়া। ছেলেকে কলেজে পড়াব কী করে? সবাই যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, তা হলে ও পড়াশোনা করতে পারবে। না হলে আবার বাইরে কাজে চলে যাবে।” পরিবার সূত্রের খবর, সুকদেবের ছোট ভাইও অষ্টম শ্রেণির পরে পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছে। এক বোন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। বর্তমানে সুকদেব বেঙ্গালুরুতে কাজে গিয়েছে। সেখান থেকেই সে বলে, “ফল বেরোনোর পরে কাজে চলে এসেছি। বাড়ি থেকে পড়াতে পারবে না। কোনও সাহায্য পেলে কলেজে পড়াশোনা করব।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)