বেসরকারি বাসমালিকদের দায়ের করা বাসের আয়ু বৃদ্ধি সংক্রান্ত মামলায় বৃহস্পতিবার প্রথম নিজেদের অবস্থানের কথা স্পষ্ট ভাবে জানাল রাজ্য সরকার। এ দিন মামলার শুনানিতে স্বাস্থ্যকেই বাসের আয়ু নির্ধারণের মাপকাঠি করার ক্ষেত্রে কার্যত সহমত পোষণ করে সরকার জানিয়েছে, তারা এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা জারি করবে। সরকারের এই অবস্থান বদলকে গুরুত্বপূর্ণ ‘ইতিবাচক’ সাফল্য হিসাবে দেখছেন বেসরকারি
বাসমালিক সংগঠনের নেতৃত্ব। যদিও এই মামলার শুনানি এখনও সম্পূর্ণ হয়নি।
প্রসঙ্গত, ১৫ বছরের গেরোয় পুরোনো বাস বাতিল হওয়া ঠেকাতে উচ্চ আদালতে গিয়েছিল বেসরকারি বাসমালিকদের ছ’টি সংগঠন। বাসের আয়ু নির্ধারণের ক্ষেত্রে তার স্বাস্থ্যকেই মাপকাঠি করার দাবি জানিয়েছিলেন তাঁরা। বাসমালিক সংগঠনের নেতৃত্ব আদালতে এ-ও বলেছিলেন, রাস্তায় চলার ক্ষেত্রে দূষণ এবং সুরক্ষা সংক্রান্ত নির্দিষ্ট শর্ত কোনও বাস পূরণ করতে পারছে কিনা, তা দেখেই সেটির আয়ু ঠিক করা উচিত। একই মত পোষণ করেছিলেন পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীও।
নেতৃত্বের আরও বক্তব্য ছিল, কলকাতার গণপরিবহণে এখনও দৈনিক প্রায় ৪০ শতাংশ যাত্রী বাসের উপরে নির্ভরশীল। এই অবস্থায় আচমকা বিপুল সংখ্যক বাস বাতিল হলে যাত্রীরা চরম বিপাকে পড়বেন। এই মামলায় বাসমালিকেরা আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানালেও দীর্ঘ দিন ধরে সরকার পক্ষের তরফে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করা হচ্ছিল না।
বাসমালিক সংগঠনের আইনজীবী শঙ্কর মুখোপাধ্যায় এ দিন কোর্টে জানান, গত ১৫ বছরে বাসের ইঞ্জিনের প্রযুক্তিতে ব্যাপক বদল এসেছে। নতুন প্রজন্মের গাড়ির ইঞ্জিনে আগের চেয়ে দূষণের মাত্রা অনেক কম। সংশ্লিষ্ট সব বদলের কথা মাথায় রেখে ২০২১ সালে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক জানায়, দূষণ এবং সুরক্ষা সংক্রান্ত ক্ষেত্রে যদি কোনও গাড়িতে এমন সমস্যা দেখা দেয় যা সংশোধন করা সম্ভব নয়, একমাত্র তা হলেই সেই গাড়ি বাতিল বলে গণ্য হবে। মন্ত্রকের এই বক্তব্যকে হাতিয়ার করেই বয়সের পরিবর্তে গাড়ির স্বাস্থ্যকে মাপকাঠি করার আবেদন জানান বাসমালিক সংগঠনের আইনজীবী।
সেই মত সমর্থন করে এ দিন সরকার পক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি জয়ন্ত মিত্র গাড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সরকারের নিজস্ব পরিকাঠামো তৈরির কথা জানান। বাসমালিক সংগঠনের আইনজীবীর দাবি, এ নিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকাও তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন জয়ন্ত।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে ‘সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিস’-এর সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা এবং ‘অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বিষয়টিকে ‘ইতিবাচক’ হিসাবে দেখছেন। গ্রীষ্মাবকাশের পরে ফের এই মামলার শুনানি হবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)