Advertisement
১৮ মে ২০২৪

রাজনীতির আলু সস্তা হচ্ছে, বাজারের আলু নয়

বাজারে আলু সেই বাইশেই। কিন্তু রাজনীতির আলুর দর নেমে এল দশে! টাস্ক ফোর্সের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ঘন ঘন বৈঠক কিংবা ভিন্রাজ্যে আলু পাঠানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারির পরে শনিবারেও কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে ২২ টাকা কেজি দরেই জ্যোতি আলু কিনলেন আমজনতা। খুব তাড়াতাড়ি যে এই দাম কমছে না, তা-ও জানিয়ে দিলেন আলু ব্যবসায়ীরা।

মিলনমেলা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আলুর বস্তা। শনিবার। ছবি: শৌভিক দে

মিলনমেলা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আলুর বস্তা। শনিবার। ছবি: শৌভিক দে

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৪ ০১:৫৭
Share: Save:

বাজারে আলু সেই বাইশেই। কিন্তু রাজনীতির আলুর দর নেমে এল দশে!

টাস্ক ফোর্সের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ঘন ঘন বৈঠক কিংবা ভিন্রাজ্যে আলু পাঠানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারির পরে শনিবারেও কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে ২২ টাকা কেজি দরেই জ্যোতি আলু কিনলেন আমজনতা। খুব তাড়াতাড়ি যে এই দাম কমছে না, তা-ও জানিয়ে দিলেন আলু ব্যবসায়ীরা।

তবে রাজনীতির আলুর দাম কমেছে। রাজ্য সরকার ১৪ টাকা কিলোয় আলুর দর বেঁধে দিয়েছে। সরকারকে পাল্টা চাপে রাখার কৌশল হিসেবে শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামে ১০ টাকা দরে আলু বেচল বিজেপির কিষাণ মোর্চা। বাঁকুড়া জেলার ছাতনা ব্লকের খড়বোনাতেও শনিবার সকালে বিজেপি কর্মীরা একই দরে আলু বিক্রি করেন। বিজেপি বেচলে শাসক দলই বা বাদ যায় কেন? তৃণমূল যুবা’র নর্থ সিয়ারশোল কোলিয়ারি শাখার কার্যালয় থেকেও ওই ১০ টাকা কেজি দরেই এ

দিন ২৫০ কেজি আলু বেচার দাবি জানানো হয়েছে।

এ দিন সকালে ঝাড়গ্রাম শহরের পাঁচ মাথার মোড়ে মাইকে ঘোষণা করে দশ টাকা দরে আলু বিক্রি শুরু করেন বিজেপির কর্মীরা। ক্রেতারাও ভিড় জমান। প্রত্যেককে এক কিলোর বেশি আলু অবশ্য দেওয়া হয়নি। বিজেপির দাবি, আধ ঘণ্টার মধ্যেই দু’কুইন্ট্যাল আলু উড়ে যায়। খবর পেয়ে ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশ এসে মাইকটি বাজেয়াপ্ত করে। তবে আলু বিক্রিতে বাধা দেয়নি তারা। পুলিশের বক্তব্য, অনুমতি ছাড়া এ দিন মাইক বাজাচ্ছিল বিজেপি। তাই মাইকটি আটক করা হয়েছে।

ঝাড়গ্রামের বিজেপি নেতা সুখময় শতপথী বলেন, “দলের কিষাণ মোর্চার কর্মীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে অনুদান হিসেবে দু’কুইন্ট্যাল বাছাই আলু সংগ্রহ করেছিলেন। সেই আলুই এ দিন দশ টাকা কিলো দরে বিক্রি করা হয়েছে।” বাঁকুড়ার বিজেপি অবশ্য কিলোয় ৬ টাকা লোকসান করেই আলু বেচেছে। কারণ তাঁরা ১৬ টাকা দরে আলু কিনে ১০ টাকায় বেচেছেন বলে জানিয়েছেন বাঁকুড়ার বিজেপি নেতা অজয় ঘটক। কিন্তু এই কর্মসূচির ফলে বাজারে আলুর দাম কি কমেছে? সে প্রশ্নের জবাবে বিজেপি নেতারা বলছেন, দাম কমানোর দায়িত্ব সরকারের। প্রশাসনের অকর্মণ্যতার প্রতিবাদেই তাঁদের এই সস্তায় আলু বিক্রির কর্মসূচি।

প্রশ্ন উঠেছে বাজারে দামই যখন কমল না, তখন জেলা-শহরে সরকারি দোকান লাগিয়ে ১৪ টাকা দরে আলু বেচে কী লাভ হল? এ দিনও বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, যে হারে বস্তায় কাটা বা দাগি আলু পাঠানো হচ্ছে, তা কম দামেও কিনতে চাইছেন না কেউ। ফলে ‘সরকারি আলু’ পড়েই পচছে দোকানে। সপ্তাহখানেক আগে খুচরো দেকানিদের ১৪ টাকায় আলু বিক্রি করতে বাধ্য করার চেষ্টা চালিয়েছিল কলকাতা পুরসভা। কিন্তু প্রথম দিনের অভিযানেই তা ভেস্তে যায়। পুরকর্তারা বুঝতে পারেন, পাইকারি বাজারেই এর চেয়ে বেশি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। খুচরো ব্যবসায়ীরা তা হলে ১৪ টাকা দরে আলু বেচবেন কী ভাবে? শনিবারেও বড়বাজার ও কোলে মার্কেট-সহ কলকাতার বড় বড় বাজারে ১৭-১৮ টাকা পাইকারি দরে আলু বিক্রি হয়েছে।

তবে এই পাইকারি দর যে সব সময় বাজারের নিয়ম মেনে নির্ধারিত হচ্ছে না, তা মানছেন কৃষি বিপণন দফতরের কর্তাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, এক শ্রেণির বড় ব্যবসায়ী পাইকারি দামটাকে কিছুতেই নামতে দিচ্ছে না। খুচরো দোকানিরা বাধ্য হচ্ছেন পাইকারদের ঠিক করে দেওয়া দামে আলু কিনতে। এর খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। দমদমের এক খুচরো ব্যবসায়ীর কথায়, “সরকার এখন যে দরেই আলু দিক, বছরভর পাইকারের কাছ থেকেই আলু-পেঁয়াজ কিনে আমাদের ব্যবসা করতে হয়। অসময়ে তাঁরাই পাশে থাকবেন, সরকার নয়।”

এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের চাপে ভিন্রাজ্যে আলু পাঠানোর উপরে নিষেধাজ্ঞাও শিথিল করেছে রাজ্য সরকার। আজ, রবিবার থেকে ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডে আলু পাঠানো শুরু হবে। ২৩ অগস্ট পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা ওই দুই রাজ্যে আলু পাঠাতে পারবেন বলে সরকার জানিয়েছে। প্রতিদিন ওড়িশায় ৫০০০ টন এবং ঝাড়খণ্ডে ৫০০ টন করে আলু যাবে এই রাজ্য থেকে। তবে এর ফলে রাজ্যের বাজারে আলুর ঘাটতি হবে না বলেই দাবি ব্যবসায়ীদের। তাঁদের বক্তব্য, হিমঘরে যত আলু মজুত রয়েছে, তা রফতানির পরেও উদ্বৃত্ত থাকবে। তা হলে বাজারে আলুর দাম কমছে না কেন, সে প্রশ্নে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন তাঁরা।

পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বরেন মণ্ডল এ দিন বলেন, “সরকার আপাতত পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা ও আসানসোল সীমানা দিয়ে আলু পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু সমস্যায় পড়েছেন দূরবর্তী জেলার ব্যবসায়ীরা। নিজের জেলা থেকে ওই দুই সীমানায় আসার পরিবহণ খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তাই আলু পাঠানোর জন্য সব সীমানা-পয়েন্ট খুলে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছি আমরা।” সরকার ভিন্রাজ্যে আলু পাঠানোর অনুমতি দেওয়ায় তাঁরাও ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বরেনবাবু।

তবে মিলনমেলায় ছবিটা এ দিন কিছুটা হলেও ভিন্ন। দু’দিনের চেষ্টায় সেখানকার আলুভর্তি হ্যাঙারে বাতানুকূল যন্ত্র লাগিয়ে চালু করা গিয়েছে। শনিবার মিলনমেলায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, দুর্গন্ধের মধ্যেই পচা আলু বাছাইয়ের কাজ চলছে। ছোট ট্রাকে চাপিয়ে সেগুলোই পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন বাজারে।

এরই মধ্যে বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ জানিয়েছেন, বাজেয়াপ্ত আলুর ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য আলু ব্যবসায়ীরা আদালতে গেলে তাঁর দল পাশে থাকবে। শনিবার গাঁধী মূর্তির পাদদেশে দলের একটি সভায় রাহুলবাবু বলেন, “আলু বাইরে যেতে পারে এই নির্দেশ সরকার আগে দিলে সঙ্কট হতো না। এখন পচা আলুর দাম সরকারকেই দিতে হবে। আলু ব্যবসায়ীরা ক্ষতিপূরণ চাইতে কোর্টে গেলে বিজেপি সঙ্গে থাকবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

potato politics in potato selling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE