পশ্চিমবঙ্গে আছে ১০টি। গোটা দেশে ২১৩টির মতো। মাকড়সার জালের মতো বিদ্যুতের হাইভোল্টেজ তার ওই সাবস্টেশনগুলির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৩২ হাজার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। তার মধ্যে দিয়েই বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে যাচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামেও। এই পরিকাঠামোর মাধ্যমেই বছরের পর বছর ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে এসেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন। কিন্তু এর জন্য কোথাও ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বা পুকুরের মাছ মরে যাচ্ছে বা এলাকায় বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হচ্ছে— এমন ঘটনার কথা কখনও শোনেনি বিদ্যুৎকর্তারা। ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিডের সাবস্টেশনকে ঘিরে স্থানীয় কিছু মানুষ পরিবেশ দূষণের প্রশ্ন তোলায় তাই বিস্মিত সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই। তাঁদের কথায়, ‘‘বিদ্যুতের তার দিয়ে জলও পড়ে না, ধোঁয়াও বেরোয় না। তা হলে দূষণ হবে কী করে!’’
ভাঙড়ে জমি-জীবিকা, বাস্তুতন্ত্র ও জমি রক্ষা কমিটির অভিযোগ, পাওয়ার গ্রিডের সাবস্টেশন চালু হলে ওই এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। ক্ষতি হবে কৃষি-ফসলের। এমনকী, বাস্তুতন্ত্রও নষ্ট হতে পারে। তাই জনবহুল এলাকায় সাবস্টেশন তৈরি বন্ধ হোক।
সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকর্তাদের বক্তব্য, সাবস্টেশন তৈরি থেকে হাইটেনশন লাইন টানার ক্ষেত্রে দেশে নির্দিষ্ট আইন আছে। আইন তৈরির আগে পরিবেশের দিকটি সব সময়েই খতিয়ে দেখা হয়। মাটি থেকে নির্দিষ্ট উচ্চতায়, শক্তিশালী আর্থিং-সহ অন্যান্য সুরক্ষাবিধি মেনেই টাওয়ার পুঁতে হাইভোল্টেজ তার টানতে হয়। ভাঙড়ের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রাক্তন বিদ্যুৎকর্তা অমরেশচন্দ্র সরকারের কথায়, ‘‘আমার দীর্ঘ কর্মজীবনে কখনও শুনিনি, হাইটেনশন লাইনের কারণে পরিবেশ বা মানব দেহে কোনও ক্ষতিকারক প্রভাব পড়েছে।’’
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার একর জমির উপর দিয়ে ১৩২ থেকে ৮০০ কেভি-র হাইভোল্টেজ লাইন গিয়েছে। লাইন ছড়িয়ে রয়েছে ছোট-বড় শহরের গা-ঘেঁষে। সাধারণত ৬০-৭০ মিটার উঁচু টাওয়ারের উপরের দিয়ে লাইনগুলি যায়। তাতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিলে একটা সোঁ-সোঁ শব্দ শোনা যায়। তারটিকে ঘিরে একটি ‘ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড’ তৈরি হয় ঠিকই, কিন্তু তার জন্য জীবজগতের কোনও ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কৌশিক ব্রহ্মচারীও বলেন, ‘‘হাইভোল্টেজ তার থাকায় চাষ-আবাদের ক্ষতি হয়েছে বলে কোনও গবেষণালব্ধ প্রামাণ্য নথি চোখে পড়েনি।’’ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিষদের প্রাক্তন আইনি আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ও জানান, হাইভোল্টেজ লাইনের কারণে পরিবেশের ক্ষতির কথা তিনি শোনেনি। তাঁর পরামর্শ, গ্রামবাসীদের মনে প্রশ্নটা যখন উঠছে, তখন বিজ্ঞানীদের ভাঙড়ে নিয়ে গিয়ে আলোচনায় বসানো উচিত।