E-Paper

‘বর্বর’ শক্তিকে রুখতে হবে, বসু-স্মরণে ডাক কারাটের

সংসদীয় ব্যবস্থায় সিপিএমের ভূমিকা কী হবে, তা নির্ধারণে ই এম এস নাম্বুদিরিপাদদের পাশাপাশি বড় ভূমিকা ছিল জ্যোতিবাবুর। সেই প্রসঙ্গও উঠে এসেছে কারাটের বক্তব্যে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ০৬:১২
নিউ টাউনে জ্যোতি বসুর নামে গবেষণা কেন্দ্রের প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধনে প্রকাশ কারাট, বিমান বসু ও সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব।

নিউ টাউনে জ্যোতি বসুর নামে গবেষণা কেন্দ্রের প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধনে প্রকাশ কারাট, বিমান বসু ও সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব। —নিজস্ব চিত্র।

প্রয়াত জ্যোতি বসুর উক্তিকে মনে রেখেই আরএস-বিজেপির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াইয়ের ডাক দিলেন প্রকাশ কারাট। সিপিএমের শীর্ষ নেতার মতে, দেশের গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামো যারা ধ্বংস করতে চাইছে, তাদের বিরুদ্ধে শুধু নির্বাচনের ময়দানে নয়, মতাদর্শগত লড়াইকে শক্তিশালী করা জরুরি।

নিউ টাউনে শুক্রবার ‘জ্যোতি বসু সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সোশ্যাল স্টাডিজ়’-এর প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধন করেছেন সিপিএমের পলিটব্যুরোর কো-অর্ডিনেটর কারাট। ওই কেন্দ্রে গ্রন্থাগার এবং একটি প্রদর্শনীরও সূচনা হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে দু’টি গবেষণাপত্র। কেন্দ্রের উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কথা উদ্ধৃত করেই কারাট বলেছেন, ‘‘বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে জ্যোতিবাবু এই শক্তিকে ‘অসভ্য, বর্বর’ বলেছিলেন। তারা এখন রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছে। হিন্দুত্বকে রাষ্ট্রের দর্শনে পরিণত করার চেষ্টা করছে। কেবল নির্বাচনেই নয়, মতাদর্শের লড়াইও করতে হবে এই শক্তির বিরুদ্ধে।’’ সাম্প্রতিক কালে প্রয়াত এ রাজ্যের আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির কথাও এ দিন স্মরণ করেছেন কারাট।

সংসদীয় ব্যবস্থায় সিপিএমের ভূমিকা কী হবে, তা নির্ধারণে ই এম এস নাম্বুদিরিপাদদের পাশাপাশি বড় ভূমিকা ছিল জ্যোতিবাবুর। সেই প্রসঙ্গও উঠে এসেছে কারাটের বক্তব্যে। তাঁর কথায়, ‘‘জ্যোতি বসু মানে কমিউনিস্ট এবং বাম আন্দোলনের অগ্রগতির প্রতীক। রেলে ট্রেড ইউনিয়ন নেতা। কী ভাবে সংসদীয় কাঠামোয় কমিউনিস্টরা কাজ করবে, তার উদাহরণ জ্যোতি বসু। সংসদীয় ব্যবস্থার মধ্যে শ্রমজীবী, বঞ্চিত মানুষের কথা তুলে ধরা, তাঁদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যাওয়া, দেখিয়ে গিয়েছেন তিনি।’’ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যখন কোনও বিষয়েই পূর্ণ তথ্য দিতে অস্বীকার করছে, সেই সময়ে গবেষণামূলক কাজের গুরুত্ব অনেক বেশি বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্য, ‘‘পশ্চিম এশিয়ায় যখন গণতন্ত্রকে শেষ করা হচ্ছে, উগ্র দক্ষিণপন্থা সর্বত্র সেই প্রয়াস চালাচ্ছে, আমাদের আরও গভীরে যেতে হবে। জানতে হবে সমাজের চিত্র। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের লড়াইয়ের সঙ্গে জ্যোতি বসু সমাজবিজ্ঞান ও গবেষণা কেন্দ্র সে কারণেই জরুরি।’’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে এসে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন বাংলাদেশি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। সিপিএমের আমন্ত্রণ পেয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের পলিটব্যুরো সদস্য কার্তিক পাল প্রমুখ। আমন্ত্রিত হলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য থাকতে পারবেন না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। নিজের রাজ্যে বিধানসভার অধিবেশনে রাজ্যপালের ভাষণ থাকায় অনুষ্ঠানের সময়ে কলকাতায় আসতে পারেননি কেরলের মুখ্যমন্ত্রী এবং সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য পিনারাই বিজয়ন। রাতে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে তিনি শহরে পৌঁছেছেন।

জ্যোতিবাবুর জীবনের শিক্ষা ও নবনির্মিত কেন্দ্রের ভূমিকা ব্যাখ্যা করেছেন গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান বিমান বসু। কেন্দ্রের উপরে সিপিএমের দলীয় পতাকার পরিবর্তে জাতীয় পতাকা লাগানো হয়েছে। শহরে নির্মীয়মাণ মেট্রো পথে কোনও স্টেশনের নাম জ্যোতিবাবুর নামে করার দাবি তোলা হয়েছে। দলের তরফে সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য এই দাবি জানিয়ে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে চিঠিও দিয়েছেন। হাওড়ার বি গার্ডেনে সিপিএমের কোলে বাজার শাখার উদ্যোগে এ দিনই দলের বি গার্ডেন এরিয়া কমিটির নেতৃত্বের উপস্থিতিতে স্মৃতিচারণ করা হয়েছে জ্যোতিবাবুর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জীবনের।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPIM prakash karat

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy