দার্জিলিং ম্যালে অনুষ্ঠান-মঞ্চে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
এক জন বললেন, প্রণবদা রাষ্ট্রপতি। কিন্তু আমি ওঁর অনুমতি নিয়েই ওঁকে দাদা বলে ডেকেছি।
অন্য জন বললেন, মমতা আমার ছোট বোনের মতো। আমরা এক সময় অনেক দুঃখ-কষ্ট একসঙ্গে সয়েছি।
এক জন বললেন, উনি দেশকে জানেন, চেনেন। তাই আমরা সকলে মিলে ওঁকে রাষ্ট্রপতির পদে বসিয়েছি।
অন্য জন মুক্তকণ্ঠে মমতার পাহাড়ে বিভিন্ন বোর্ড গড়াকে সমর্থন করলেন।
এক জন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য জন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দার্জিলিং ম্যালে যে বিরাট মঞ্চ বেঁধে রাষ্ট্রপতিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল, সেখানে এ ভাবে নিজেদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বোঝাপড়ার বার্তা দিলেন দু’জনই। যা শুনে হাততালি দিয়ে উঠেছেন পাহাড়ের মানুষ।
এ দিন বাগডোগরা হয়ে সড়ক পথে দার্জিলিং পৌঁছন রাষ্ট্রপতি। তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে বৃষ্টিভেজা বিকেলে রাজভবনে পৌঁছে যান মমতা। তখন থেকেই হাসি-ঠাট্টায় আড্ডা জমে যায় দু’জনের। তার পরে সাড়ে পাঁচটায় সংবর্ধনা মঞ্চে। সেখানে প্রণবকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমার তো মনে হয়, সারা দেশে ওঁর মতো অভিজ্ঞ, বিচক্ষণ মানুষ আর পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ।’’ মুখ্যমন্ত্রী যত ক্ষণ বক্তৃতা করেছেন, প্রণব তাকিয়ে ছিলেন হাসিমুখে। তিনি ফিরে এসে আসনে বসতেই তাঁকে কাছে টেনে ফের কথা শুরু হয় দু’জনের।
প্রণব-মমতার এই সখ্য দেখার পরেই দার্জিলিঙে শুরু হয়েছে অন্য আলোচনা। চার বছর আগে প্রণববাবু যখন রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হয়েছিলেন, মমতার সমর্থন জোগাড় করতে তাঁকে বেশ কিছু দিন ধরেই আলাপ-আলোচনার পথ নিতে হয়। কয়েক দফা কথার পরে, কিছুটা নিমরাজি হয়েই তখন মমতা জানিয়েছিলেন, তাঁর দল প্রণবকে সমর্থন করবে। তৃণমূলের অনেকেই বলেন, এর আগে যখন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ছিলেন প্রণববাবু, সে সময়ে তৃণমূলের বারবার অনুরোধেও বাম আমলে নেওয়া ঋণ মেটানোর উপরে তিন বছরের মোরাটোরিয়াম ঘোষণা করেননি। তাতেই ক্ষুব্ধ ছিলেন মমতা।
তার পরে অবশ্য অনেক জল গড়িয়েছে। বিস্তর বদলছে রাজনৈতিক অঙ্কও। রাজ্যে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেছেন মমতা। প্রণববাবুর রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ ফুরোতে আর ঠিক এক বছর বাকি। এই অবস্থায় দু’জনের মধ্যে ভাব, দাদা-বোনের সম্পর্ক তুলে মঞ্চেই পরস্পরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠা, এবং বিশেষ করে ‘ওঁর মতো অভিজ্ঞ মানুষ আর পাওয়া যাবে না’ বলে মমতার মন্তব্য কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলেই মনে করছেন অনেকে। বলছেন, সত্যিই যদি নতুন কোনও ঘোষণা আসে পরবর্তী দিনগুলিতে, তা হলে মঙ্গলবার তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সাক্ষী থাকল বৃষ্টিভেজা কুইন অব হিলস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy