Advertisement
E-Paper

চাপের মুখে ৮ দিনেই ইস্তফা দিলেন অধ্যক্ষ

শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের চাপে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ৮ দিনের মাথায় মালদহ কলেজের অধ্যক্ষ ইস্তফা দিতে বাধ্য হলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁর নাম আব্দুল কালাম মহম্মদ আনুয়ারুজ্জামান। এই কলেজের ছাত্র সংসদ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দখলে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৫ ০৩:৩০
অধ্যক্ষ আব্দুল কালাম মহম্মদ আনুয়ারুজ্জামান

অধ্যক্ষ আব্দুল কালাম মহম্মদ আনুয়ারুজ্জামান

শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের চাপে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ৮ দিনের মাথায় মালদহ কলেজের অধ্যক্ষ ইস্তফা দিতে বাধ্য হলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁর নাম আব্দুল কালাম মহম্মদ আনুয়ারুজ্জামান। এই কলেজের ছাত্র সংসদ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দখলে। একটি অনুষ্ঠানের জন্য তারা কলেজ তহবিল থেকে ১০ হাজার টাকা চেয়ে অধ্যক্ষকে চাপ দেওয়ার পরেই শুক্রবার দুপুরে তিনি ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেন পরিচালন সমিতির সভাপতি মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর কাছে।

অধ্যক্ষর দাবি, ব্যক্তিগত কারণেই তিনি পদত্যাগ করতে চেয়েছেন। কিন্তু কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই টিএমসিপি তাঁর উপরে বারবার চাপ দিচ্ছিল। এ ক’দিনে বেশ ক’বার তাঁকে ঘেরাওয়ের মুখে পড়তে হয়। এর পরে মঙ্গলবার ওই অনুষ্ঠানের জন্য টাকা দাবি করা হয়। অধ্যক্ষ জানিয়ে দেন, এই ধরনের অনুষ্ঠানে তাঁর টাকা দেওয়ার এক্তিয়ার নেই। তার পরেই তাঁর উপরে চাপ বাড়তে থাকে।, তাঁকে গালিগালাজও করা হয় বলে অভিযোগ। ইস্তফাপত্রে অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘অনেক আশা নিয়ে এই কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছিলাম। কলেজের উন্নয়নই লক্ষ্য ছিল। তবে বুঝলাম, এই পদে থাকা সম্ভব নয়।’’

এই কলেজেই ১৭ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন ওয়েবকুটার সদস্য আনুয়ারুজ্জামান। শিক্ষকতাতেই ফিরে যেতে চান তিনি। অথচ রীতিমতো পরীক্ষা দিয়ে অধ্যক্ষের পদ পেয়েছিলেন। অন্য কলেজেও তিনি অধ্যক্ষ হতে পারতেন। কিন্তু যে কলেজে এত দিন পড়িয়েছেন, সেই কলেজেই দায়িত্ব নিতে চেয়েছিলেন। তাঁকে অধ্যক্ষের পদে পেয়ে খুশি হয়েছিলেন ছাত্রছাত্রীরাও। ছাত্রদরদী বলে পরিচিত আনুয়ারুজ্জামানকে ছাত্র সংসদের চাপে পড়তে দেখে অসন্তুষ্ট অন্য শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরাও। আনুয়ারুজ্জামান অবশ্য বলেছেন, ‘‘আমি কারও চাপে পড়ে ইস্তফা দিচ্ছি না। এটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়।’’

আনুয়ারুজ্জামান এখন থাকেন মালদহ শহরে। ২ জুলাই কলেজের স্থায়ী অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। তার পর শুক্রবারের মধ্যে দু’দিন তিনি কলেজে আসতে পারেননি। বাকি ছ’দিনের মধ্যে তিন দিন তাঁকে ঘেরাও করা হয়েছে। ছাত্র সংসদের একটি দাবি ছিল, ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয়ে কমপক্ষে পাঁচটি করে আসন ছাত্র সংসদের জন্য ছেড়ে দিতে হবে। যাতে পরে তারা সেই আসনগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করাতে পারে। এ বছর থেকে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করে। এতেই ছাত্র সংসদ বিপাকে পড়ে। সেই দাবিও অধ্যক্ষ মানেননি।

ওয়েবকুটার জেলা আহ্বায়ক সৌহাব আলি বলেন, ‘‘ভদ্র মানুষটিকে পেয়ে তৃণমূলের ছাত্র সংসদ যা খুশি তাই দাবি করতে শুরু করেছিল। কিন্তু আনুয়ারুজ্জামান নীতিগত ভাবে মাথা নোয়াবার মানুষ নন। তাই শাসক দলের ছাত্র সংসদের চাপে তিনি ইস্তফা দিয়ে সরে যেতে চেয়েছেন।’’

মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ অবশ্য বলেন, ‘‘আনুয়ারুজ্জামান পণ্ডিত মানুষ। ওঁর ইস্তফাপত্র গ্রহণ করা হবে না।’’ মালদহ কলেজের ছাত্র সংসদের জেনারেল সম্পাদক আবু তালাহর দাবি, ‘‘অধ্যক্ষ কেন ইস্তফা দিতে চাইছেন, বলতে পারব না। তবে আমরা তাঁকে চাপ দিইনি। যদিও কেউ এমন অভিযোগ করেন, তা ভিত্তিহীন।’’ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ দাসও জানান, অধ্যক্ষকে ইস্তফা না দেওয়ার অনুরোধ করা হবে। তিনি বলেন, ‘‘ছাত্র সংসদের বিরুদ্ধে যা অভিযোগ উঠছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখবে।’’ অধ্যক্ষের ইস্তফার বিষয়ে আলোচনা করতে আজ, শনিবার সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ কলেজ পরিচালন সমিতির বৈঠক ডাকা হয়েছে।

শাসক দলের সদস্যদের হাতে উত্তর দিনাজপুরের পূর্বতন রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলীপ দে সরকারকে ২০১২ সালে মারধর পর্যন্ত খেতে হয়েছিল। অভিযুক্ত ছিলেন জেলা তৃণমূল নেতা তিলক চৌধুরী ও টিএমসিপি-র তৎকালীন জেলা পর্যবেক্ষক প্রিয়ব্রত দুবে। ২০১৩ সালে ইটাহারের ডক্টর মেঘনাদ সাহা কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষা স্বপ্না মুখোপাধ্যায়কেও মারধরের অভিযোগ ওঠে জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি গৌতম পাল ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে।

appointment Principal malda tmcp trinamool
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy