ট্র্যাফিক আইন ভাঙার ক্ষেত্রে কাগজের চালানের মাধ্যমে জরিমানা আদায়ের বদলে ১ জুন থেকে অনলাইনে সংযোগ পোর্টালের মাধ্যমে জরিমানা আদায় চালু হতে চলেছে। ওই ব্যবস্থার আওতায় কলকাতা থেকে জেলা— সর্বত্র একই পোর্টালের মাধ্যমে জরিমানার হিসাব রাখা হবে। জরিমানা না মেটালে পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত গাড়ির মালিকেরা দূষণ মাত্রা পরীক্ষা সংক্রান্ত এবং গাড়ির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও শংসাপত্র পাওয়ার আবেদন করতে পারবেন না। গত ৫ মে পরিবহণ দফতরের এই নির্দেশিকার জেরে বেসরকারি পরিবহণ শিল্পের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়েই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ।
কলকাতায় ট্র্যাফিক আইন ভাঙলে মামলা যে ভাবে হয়, তা নিয়ে আপত্তি রয়েছে প্রায় সব পরিবহণ সংগঠনেরই। বহু ট্র্যাফিক সিগন্যালে উপযুক্ত টাইমার, হলুদ আলো, রাস্তায় নির্দিষ্ট সাঙ্কেতিক বোর্ড না থাকার একাধিক অভিযোগ তুলছেন তাঁরা। যে পদ্ধতিতে ওই জরিমানা আদায় হয়, সেখানে প্রমাণ যাচাই করা বা অভিযোগ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে না পারার অভিযোগও করছেন বেসরকারি বাস, ট্যাক্সি এবং অ্যাপ-ক্যাব মালিকদের একাংশ। তাঁরা এই ভাবে যথেচ্ছ জরিমানার হাত থেকে বাঁচতে লোক আদালতের মাধ্যমে এককালীন ছাড়ের সুবিধা চাইছেন।
ইতিমধ্যেই এ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সরকারকে চিঠি দিয়েছে অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস
সমন্বয় সমিতি, অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড এবং বাস, ক্যাব এবং স্কুলগাড়ির যৌথ মঞ্চ জয়েন্ট ফোরাম অব ট্রান্সপোর্ট অপারেটর্স। দৈনিক ৫০০ থেকে হাজার টাকা জরিমানার ধাক্কা ধুঁকতে থাকা গণপরিবহণ সইতে পারবে না বলেই মনে করেন বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায়। একই মত এআইটিইউসি-র পরিবহণ শ্রমিক সংগঠনের সর্বভারতীয় নেতা নওলকিশোর শ্রীবাস্তবেরও। তাঁর কথায়, ‘‘জরিমানা আদায় মুখ্য হয়ে উঠলে রাস্তায় পরিবহণ আর থাকবে না।’’
জরিমানা না মেটালে বাস, ট্যাক্সি, অ্যাপ-ক্যাবের শংসাপত্র পাওয়ার কাজ আটকে যাওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যাবতীয় জরিমানা মিটিয়ে শংসাপত্র নিতে যাওয়ার পথে ফের আচমকা জরিমানা হলে তো শংসাপত্রই মিলবে না। অনেক ছোটখাটো খুঁটিনাটি সমস্যা আছে, যা নিয়ে ভাবা প্রয়োজন।’’ বেসরকারি বাস মালিক সংগঠন সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলেন, ‘‘এককালীন জরিমানা মেটানোর সুযোগ ফেরানো হোক। জরিমানা না মেটালে শংসাপত্র আটকে যাওয়ার বিষয়টি কত দূর পরিবহণ আইনকে সমর্থন করে, তা-ও ভেবে দেখতে হবে।’’
পুলিশ ও পরিবহণ দফতর অবশ্য নতুন পোর্টালের মাধ্যমে সার্বিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনার কথা বলছে। তারা জানাচ্ছে, গাড়িচালক সতর্ক হয়ে গাড়ি চালালে জরিমানার কোপে পড়তে হবে না। পাশাপাশি, বেসরকারি পরিবহণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের মতামত শুনে কী ভাবে সার্বিক ব্যবস্থাপনা যথাযথ করা যায়, তা-ও দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দফতরের আধিকারিকদের একাংশ।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)