Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পর্যটন তিমিরেই, ফের দেহব্যবসা গাদিয়াড়ায়

পর্যটনের প্রসারে এখনও তেমন উদ্যোগ নেই। ফের হাওড়ার অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র গাদিয়াড়ার হোটেলগুলিতে অবাধে শুরু হয়ে গিয়েছে দেহব্যবসা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা মনে করছেন, এলাকার উন্নতি হলে তবেই বন্ধ হবে দেহব্যবসা। অবিলম্বে তাঁরা এলাকার উন্নয়নের দাবি তুলেছেন।

নদীর ধার ঘেঁষে পযর্টকদের হাঁটার রাস্তা।—নিজস্ব চিত্র।

নদীর ধার ঘেঁষে পযর্টকদের হাঁটার রাস্তা।—নিজস্ব চিত্র।

নুরুল আবসার
গাদিয়াড়া শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৫ ০৩:৫৯
Share: Save:

পর্যটনের প্রসারে এখনও তেমন উদ্যোগ নেই। ফের হাওড়ার অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র গাদিয়াড়ার হোটেলগুলিতে অবাধে শুরু হয়ে গিয়েছে দেহব্যবসা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা মনে করছেন, এলাকার উন্নতি হলে তবেই বন্ধ হবে দেহব্যবসা। অবিলম্বে তাঁরা এলাকার উন্নয়নের দাবি তুলেছেন।

বছরখানেক আগে গাদিয়াড়ার একটি হোটেলে হানা দিয়ে ১৮ জন নাবালিকাকে উদ্ধার করেছিল পুলিশ। অভিযোগ, তাদের দিয়ে দেহব্যবসা করানো হচ্ছিল। তার পরেই পুলিশি ধরপাকড়ের ভয়ে বন্ধ হয়ে যায় বেশ কিছু হোটেল। মাসতিনেক আগে হোটেলগুলি ফের খোলে। এক মাস হল চালু হয়েছে একটি পুলিশ ফাঁড়ি। তা সত্ত্বেও পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে হোটেলগুলিতে দেহব্যবসা শুরু হয়ে যায় বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ তুলছিলেন। গত শুক্রবার বিকেলে জেলা গ্রামীণ পুলিশের পদস্থ কর্তাদের উপস্থিতিতে মোট ১২টি হোটেলে অভিযান চলে। পুলিশ একটি হোটেল থেকে মধুচক্রে জড়িত অভিযোগে তিন মহিলা এবং চার যুবককে ধরে।

জেলা গ্রামীণ পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অভিযান চালানো হয়েছিল মূলত নাবালিকা বা যৌনকর্মীদের দিয়ে দেহব্যবসা করানো হচ্ছে কিনা তা দেখতে। তেমন কিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি। যে সাত জনকে ধরা হয়, তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ঢুকলেও প্রমাণ করতে পারেননি।’’

আগেই অবশ্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল, এলাকার পরিকাঠামোগত উন্নতি না হলে শুধু পুলিশের নজরদারিতে দেহব্যবসা কমানো যাবে না। কিন্তু তার পরেও কিছু হয়নি। জেলা পুলিশের কর্তাদের একাংশ বলছেন, ফাঁড়ি বসানো হয়েছে পর্যটনকেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য। বিশেষ করে কুলতলিতে পর্যটকদের উপরে ডাকাতদের হামলার পরে পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে পুলিশি ব্যবস্থা জোরদার করার প্রশ্নটি সামনে চলে এসেছে। হোটেলে দেহব্যবসা হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য পুলিশ ফাঁড়ির প্রয়োজন নেই। তার জন্য পর্যটনকেন্দ্রের পরিকাঠামোগত বিকাশ ঘটানো প্রয়োজন।

রূপনারায়ণ এবং হুগলি নদীর সঙ্গমস্থলে এই পর্যটনকেন্দ্রের পরিকাঠামোগত উন্নতি বলতে গেলে কিছুই হয়নি। নদীর পাড়ে কোনও বসার জায়গা নেই। গুটিকয়েক বেঞ্চ ভাঙা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বাসস্ট্যান্ড থেকে জেটিঘাট পর্যন্ত নদীর পাড় বরাবর রাস্তায় আলো নেই। সন্ধ্যার পরে এলাকা অন্ধকারে ডুবে যায়। পর্যটকেরাও সে ভাবে আসেন না। এমনকী, এখানে পর্যটন দফতরের যে লজটি রয়েছে, সেটিও পর্যটকের অভাবে ধুঁকছে। জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘ইতিমধ্যেই কিছু পরিকল্পনা করা হয়েছে। আমরা কিছু কিছু রাস্তাঘাট করেছি। এ বারে নদীর বাঁধ বরাবর আলো এবং বসার জন্য বেঞ্চের ব্যবস্থা করা হবে।’’

কিন্তু তা কবে হবে তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্বেগ কম নয়। বছরখানেক আগে পর্যন্ত কিছু বেসরকারি হোটেলে বিভিন্ন এলাকা থেকে নাবালিকা এবং যৌনকর্মীদের এখানে এনে রাখা হত এবং তাদের দিয়ে দেহব্যবসা চালানো হতো বলে অভিযোগ। তখনই এলাকায় পুলিশি নজরদারি বাড়ানোর দাবি ওঠে।

নড়েচড়ে বসে পুলিশ-প্রশাসন। হোটেল-মালিকদের সঙ্গে পুলিশের বৈঠকে ঠিক হয়, যাঁরা হোটেলে আসছেন, তাঁদের নাম-ঠিকানা হোটেল-মালিকদের রেজিস্টারে লিখে রাখতে হবে। পুলিশকে সেই খাতা নিয়মিত দেখাতে হবে। সন্দেহজনক কিছু দেখলে পুলিশকে খবর দিতে হবে। এই সব আলোচনার পরে ফের হোটেলগুলিকে ব্যবসা চালু করার অনুমতি দেওয়া হয়। হোটেলগুলিতে বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়, বৈধ পরিচয়পত্র নিয়ে এলে তবেই ঘর ভাড়া দেওয়া হবে। মাসখানেক আগে বাসস্ট্যান্ডের কাছেই পুলিশ ফাঁড়িটি চালু হয়। কিন্তু তার পরেও হোটেল-মালিকদের একাংশের যে বেপরোয়া মনোভাব কমেনি, গত শুক্রবার সাত জনের গ্রেফতারের ঘটনাই তার প্রমাণ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হোটেল-মালিকের দাবি, তাঁরা মহিলা-পুরুষদের বৈধ পরিচয়পত্র দেখেন। তবে, তাঁরা স্বামী-স্ত্রী কিনা, তা যাচাই করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা তো ঘর ভাড়া দেওয়ার জন্য কারও বিয়ের শংসাপত্র দেখতে চাইতে পারি না।’’ এই যুক্তি মেনে নিয়েছে পুলিশও। তবে তারা জানিয়েছে, প্রাপ্তবয়স্ক একজন পুরুষ ও মহিলা ঘরে থাকলে তাদের ধরার আইনত কোনও অস্ত্র নেই। তবে রেজিস্টারে তারা যদি নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দেয় এবং অভিযানের সময়ে সেটা তারা প্রমাণ করতে না পারে তা হলে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে দেহব্যবসা চালানোর অভিযোগে তাদের ধরা যেতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gadiyara nurul absar police hotel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE