খাস জমি দখলের অভিযোগ তুলে তা পুনরুদ্ধারের আর্জি জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হল কলকাতা হাইকোর্টে।
হিরাপুর থানার শ্যামডিহি মৌজায় বেশ কয়েক একর খাস জমিতে জেলা পরিষদের অনুমতি নিয়ে চাষ শুরু করেছিল আসানসোলের বিবি কলেজ। বায়ো ডিজেল তৈরির কাঁচা মাল হিসেবে এই চাষ হচ্ছিল। কিন্তু দুষ্কৃতীদের সাহায্য নিয়ে স্থানীয় কয়েক জন জমি দখল করেছেন বলে জনস্বার্থ মামলাটি দায়ের করেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
ওই সংস্থার দাবি, আসানসোল পুরসভা ও জেলা পরিষদের অধীনে থাকা ওই জমি ২০০৪ সাল থেকে ধাপে-ধাপে ইজারা পেয়ে বিবি কলেজের গবেষণা বিভাগ ভেরেন্ডা গাছের চাষ শুরু করে। শ্যামডিহি, কেরাডিহি মৌজার আদিবাসী মানুষদের নিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত ২৮ জুন এলাকার প্রভাবশালী কয়েক জন দুষ্কৃতীদের নিয়ে ওই জমিতে চড়াও হন। যন্ত্র দিয়ে কেটে ফেলা হয় বেশ কয়েক একর জায়গা জুড়ে চাষ করা ভেরেন্ডা গাছ। ওই সংগঠনের আইনজীবী উদয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় মঙ্গলবার দাবি করেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ হিরাপুর থানায় জমি দখলের অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু, পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়নি।
ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সূত্রের খবর, বায়ো ডিজেল তৈরির কাঁচা মাল হিসেবে ভেরেন্ডা চাষকে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে ২০০৫ সালে ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কী ভাবে দেশ জুড়ে ওই প্রকল্প চালু করা যায় তা ঠিক করতে একটি কমিটি গড়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল। সেই সময়ে কেন্দ্র জানিয়েছিল, বিদেশ থেকে জ্বালানি তৈরির ‘ক্রুড অয়েল’ আমদানি করতে বছরে ১ কোটি ১৭ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। সারা দেশে আড়াই লক্ষেরও বেশি প়ঞ্চায়েত এলাকায় গড়ে যদি ৫০ একর জমিতে ভেরেন্ডা চাষ হয়, তা হলে ‘ক্রুড অয়েল’ আমদানি খরচ অনেকটাই কমে যাবে।
সূত্রের খবর, বায়ো ডিজেল তৈরির কাঁচা মাল হিসেবে ভেরেন্ডা চাষ নিয়ে বিবি কলেজের গবেষণা বিভাগও কয়েক বছর ধরে চিন্তা-ভাবনা করছিল। খাস জমি পেতে তারা প্রশাসনের নানা স্তরে দরখাস্ত করে। তারা জানায়, কেন্দ্রের আর্থিক সহায়তায় সেখানে চাষ করে বায়ো ডিজেল তৈরির কাঁচামালের জোগান দেওয়ার পাশাপাশি আদিবাসীদেরও আর্থিক বিকাশ ঘটাবে। জমির ইজারা মেলার পরে স্থানীয় আদিবাসীদের নিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে কলেজ কর্তৃপক্ষ ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসেবে চাষ শুরু করেন। অভিযোগ, ২০১৩ সালেও খাস জমি দখলের চেষ্টা হয়।
আইনজীবী উদয়শঙ্করবাবু জানান, মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, ভুয়ো নথি দাখিল করে স্থানীয় কয়েক জন দাবি করছেন, জমির মালিকানা তাঁদেরই। সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া খাস জমি কী করে ব্যক্তি মালিকানাধীন হল, সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
আসানসোলের বিবি কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকার এক বাসিন্দা কলেজে এসে দাবি করেছিলেন, যেখানে ভেরেন্ডা চাষ হচ্ছে, সেখানকার কিছুটা জমি তাঁর। তা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান তিনি। জমির কাগজপত্র নিয়ে দেখা করতে বলা হলে রাতারাতি কিছু গাছ নষ্ট করা হয় বলে অভিযোগ কলেজের অধ্যক্ষ অমলেশ চট্টোপাধ্যায়ের। বিষয়টি হিরাপুর থানাকে জানানো হয়েছিল বলে জানান তিনি। পুলিশ অবশ্য ব্যবস্থা না নেওয়ার কথা মানেনি। তাদের দাবি, অভিযোগ পাওয়ার পরে এলাকায় গিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy