Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

পাঁজি বনাম পুজো! বর্ষাসুরে কাঁটা রাজ্যবাসী

প্রকৃতির কাছে অসহায় পাঁজি! বর্ষা এখনও দক্ষিণবঙ্গ ছেড়ে বিদায় নেয়নি। ইতিমধ্যে চলে এসেছে পুজো। ফলে পুজোয় এ বার উৎসব বনাম বৃষ্টির লড়াই বাধবে বলেই আশঙ্কা আবহবিজ্ঞানীদের একাংশের। এ হেন পরিস্থিতিতে অনেকেই মনমরা হয়ে পড়েছেন। যদিও বিজ্ঞানীদের একাংশের বক্তব্য, ভরা বর্ষায় যদি পুজোর আয়োজন করা হয়, তা হলে বৃষ্টির কী দোষ!

বাদলভেজা আশ্বিন। পুজোর আনন্দও মাটি হবে কি না, সেই আশঙ্কায় ভুগছে রাজ্য। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

বাদলভেজা আশ্বিন। পুজোর আনন্দও মাটি হবে কি না, সেই আশঙ্কায় ভুগছে রাজ্য। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৩২
Share: Save:

প্রকৃতির কাছে অসহায় পাঁজি!

বর্ষা এখনও দক্ষিণবঙ্গ ছেড়ে বিদায় নেয়নি। ইতিমধ্যে চলে এসেছে পুজো। ফলে পুজোয় এ বার উৎসব বনাম বৃষ্টির লড়াই বাধবে বলেই আশঙ্কা আবহবিজ্ঞানীদের একাংশের। এ হেন পরিস্থিতিতে অনেকেই মনমরা হয়ে পড়েছেন। যদিও বিজ্ঞানীদের একাংশের বক্তব্য, ভরা বর্ষায় যদি পুজোর আয়োজন করা হয়, তা হলে বৃষ্টির কী দোষ!

বর্ষাকালের নিয়ম মেনেই বঙ্গোপসাগরে দানা বেঁধেছিল একটি নিম্নচাপ। শনিবার তা ওড়িশা-বাংলা উপকূল দিয়ে স্থলভূমিতে ঢুকেছে। তার জেরেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে এমন বৃষ্টি। শনিবার বিকেল পর্যন্ত শুধু কলকাতাতেই ৫১.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “রবিবারও রাজ্যে বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। উত্তরবঙ্গে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।” দিনভর এমন বৃষ্টির জেরে এ দিন মার খেয়েছে পুজোর প্রস্তুতি। সপ্তাহান্তের বাজারেও তেমন ভিড় হয়নি। বিশেষ করে ফুটপাথে পসার সাজিয়ে বসা দোকানিদের মাথায় হাত পড়েছে। ব্যাহত হয়েছে মণ্ডপ কিংবা প্রতিমা গড়ার কাজ।

আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, সোমবার থেকে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির দাপট কমতে পারে। মহালয়ায় মিলতে পারে রোদ্দুরও। কিন্তু তার ছ’দিন পর ফের নতুন করে নিম্নচাপ হাজির হবে কি না, তা নিয়ে এখনই পূর্বাভাসে নারাজ আবহাওয়া দফতর। কারণ, নিয়ম মেনে বর্ষা বিদায় নেওয়ার দিন ৮ অক্টোবর। তার আগে নিম্নচাপ দানা বাঁধা অস্বাভাবিক নয়। তা ছাড়া গত বছরের স্মৃতিও মানুষের মনে টাটকা। ২০১৩ সালে পুজোর সময় হাজির হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় ‘পিলিন’। ওড়িশার গোপালপুরে আছড়ে পড়লেও তার প্রভাবে ধুয়ে গিয়েছিল অষ্টমী-নবমীর রাত।

বাড়ির পথে। শনিবার শুভাশিস ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

পুজো অক্টোবরের গোড়াতে বলেই কি এই বৃষ্টির আশঙ্কা?

আবহবিদদের অনেকেই বলছেন, পুজো অক্টোবরের গোড়াতেই পড়ুক বা মাঝামাঝি, বৃষ্টির আশঙ্কা থেকেই যায়। কারণ, গত কয়েক বছরে বর্ষার চরিত্রে বদলেছে। নিয়ম মেনে বিদায় নেওয়ার বদলে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা এখন প্রায় অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত চলে। ওই সময় বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ-ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে শেষ লগ্নে বর্ষার দাপটও বাড়ে। গত বছরেই অক্টোবরে পিলিনের দাপটে স্বাভাবিকের থেকে ১৭৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছিল। এ সবের প্রেক্ষিতে এক আবহবিজ্ঞানী বলছেন, “ছোটবেলায় জানতাম, শরৎকালে পুজো হয়। এখন তো সেটা বর্ষাকালে এসে দাঁড়িয়েছে!”

তা হলে উপায় কী? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুগত হাজরার মতে, বর্ষাকালের বদল দেখে যে ভাবে কৃষি-ক্যালেন্ডারে বদল এসেছে, তেমনই পুজোর ক্যালেন্ডারেও বদল আনা উচিত। পুরাকালের মতো ফের বসন্তকালে দুর্গাপুজো করলে বৃষ্টি এড়ানো সম্ভব। তবে এই সব ভুলে আপাতত বৃষ্টির সঙ্গে যুঝতে কোমর বেঁধেছেন প্রতিমাশিল্পী থেকে পুজোকর্তা সবাই।

দক্ষিণ কলকাতার শিবমন্দিরে পুজো মণ্ডপের কাজ এ দিনই শুরু করার কথা ছিল। সকাল থেকে বৃষ্টি নামতে দেখে মাথায় হাত পুজোকর্তা পার্থ ঘোষের। উত্তরের একটি পুজোয় আবার জল জমে মাঠময় কাদা হয়ে গিয়েছে। স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় কুমোরটুলি, কালীঘাটকোথাও প্রতিমার রং ঠিক মতো শুকোচ্ছে না। তড়িঘড়ি রং শুকোতে কেউ ব্লো-ল্যাম্প জ্বালছেন। কেউ বা চড়া আলোর হ্যালোজেন লাগিয়েছেন।

আসলে লোকে এখন চতুর্থী থেকেই পথে নামেন। ভিআইপিদের দিয়ে উদ্বোধন করাতে দ্বিতীয়াতেই খুলে দেওয়া হয় মণ্ডপ। তাই কাজ শেষ করতে হাতে আর দিন কয়েকই পড়ে রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE