Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

প্ররোচনা ঠেকাতে সহমত মমতা-বাম-কংগ্রেস, একঘরে বিজেপি

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবারহুমকির রাজনীতি বন্ধ করার জন্য কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার হুমকির রাজনীতি বন্ধ করার জন্য কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। —ফাইল চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার হুমকির রাজনীতি বন্ধ করার জন্য কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:০৮
Share: Save:

দেশপ্রেমের জিগির তুলে কিছু মহলের অতি সক্রিয়তার প্রেক্ষিতে আড়াআাড়ি ভাগ হয়ে গেল রাজ্যের রাজনৈতিক শিবির। এক দিকে বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবার। তাদের বিরোধিতায় এক বিন্দুতে তৃণমূল, কংগ্রেস এবং সিপিএম।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার হুমকির রাজনীতি বন্ধ করার জন্য কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। একই অবস্থান নিয়ে বিরোধী দুই দল কংগ্রেস এবং সিপিএমও বুঝিয়ে দিয়েছে, এই প্রশ্নে শাসক তৃণমূলের সঙ্গে তাদের কোনও ফারাক নেই। তিন পক্ষই সঙ্ঘ তথা গেরুয়া পরিবারের রাজনৈতিক অভিসন্ধির নিন্দা করে কড়া প্রশাসনিক ব্যবস্থার পক্ষে সওয়াল করেছে। বিরোধীদের এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়ে সরকার পক্ষও বলেছে, এই মনোভাবই বাংলার ঐতিহ্য। রাজ্যের সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার যে কোনও অপচেষ্টা রুখতে এখানে সকলে সহমত এবং সক্রিয়। বিজেপি অবশ্য ভাবাবেগের দোহাই দিয়ে সুরক্ষার দায়িত্ব নাগরিকদেরই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছে।

কাশ্মীরের ঘটনার প্রেক্ষিতে সামাজিক মাধ্যমে নিজস্ব মত দেওয়ার ‘দায়ে’ রাজ্যের নানা জায়গায় একাধিক ব্যক্তির বাড়িতে চড়াও হয়ে হামলা এবং নিগ্রহের অভিযোগ এসেছে। কাউকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, কোথাও কোথাও আবার বেশি রাতে পাড়া কাঁপিয়ে ‘ভারতমাতা কি জয়’ স্লোগন দিয়ে জাতীয় পতাকা নিয়ে বাইক বাহিনী ঘুরে যাচ্ছে। গত দু’দিনে একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা এ দিন বলেছেন, ‘‘অনেকের বাড়িতে ঢুকে হুমকি দিচ্ছে, গোলমাল করছে খবর পেয়েছি। রাস্তায় আতঙ্ক তৈরি করছে। বেহালা, বনগাঁয় এমন ঘটেছে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট অভিযোগ,‘‘আরএসএস প্রচারকেরা বহিরাগত। বিজেপি, আরএসএস, বিশ্বহিন্দু পরিষদ নানা ধরনের গুজব, খবর ছড়াচ্ছে। উত্তেজনা তৈরি করতে চাইছে। এই সুযোগে ওরা সাম্প্রদায়িক অশান্তি বাধিয়ে দিতে চাইছে।’’ পুলিশকে এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের মানুষের কাছে তাঁর আবেদন, ‘‘কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না। শান্তি বজায় রাখুন।’’

মুখ্যমন্ত্রীর আগেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘‘দেশপ্রেমের ঠিকা তো কেউ নিয়ে রাখেনি! সঙ্ঘ পরিবার ভারতকে আর একটা পাকিস্তান বানাতে চায়, যেখানে রাষ্ট্র আর ধর্মনিরপেক্ষ থাকবে না, গণতন্ত্রও থাকবে না।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘রাজ্যে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি। রাজনৈতিক ভাবে এদের মোকাবিলা করতে হবে।’’ একটি ঘটনায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সুজনবাবুর কথাও হয়েছে। বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের আব্দুল মান্নানেরও বক্তব্য, ‘‘নাগরিকদের কাউকে কাউকে দেশ-বিরোধী বলে চিহ্নিত করে সঙ্ঘ পরিবার এক দিকে যেমন অশান্তি তৈরি করছে, তেমনই আম্তর্জাতিক মহলেও ভারত সম্পর্কে ভুল বার্তা যাচ্ছে।’’

অ-বিজেপি সব পক্ষের এই সম্মিলিত বক্তব্যের উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, ‘‘অভূতপূর্ব দেশপ্রেমের জোয়ারে গোটা দেশ ভাসছে। আরএসএসের লোকেরাই জাতীয়তাবাদী। তারা জাতীয় পতাকা নেবে, এটাই স্বাভাবিক। যা করেছে, ঠিক করেছে!’’ হামলার পক্ষে যুক্তি সাজিয়ে দিলীপবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘যাঁরা এখন প্রশ্ন তুলছেন, তাঁদের বলছি— আবেগ কোনও যুক্তি-তর্ক মানে না। ভাবাবেগের বিরুদ্ধে গেলে নিজের সুরক্ষার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে!’’

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সংগঠন সম্পাদক (পূর্ব ভারত) শচীন্দ্রনাথ সিংহের দাবি, ‘‘আমাদের এবং বজরং দলের বহু যুবক রাজ্যের দিকে দিকে জাতীয় পতাকা নিয়ে মিছিল করছে। সাধারণ মানুষও যোগ দিচ্ছেন। যাঁরা এর বিরোধিতা করছেন, তাঁরা তো দেশ-বিরোধী!’’

পুলওয়ামায় নিহত জওয়ানদের প্রতি এ দিনই শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে রাজ্য বিধানসভায়। অম্বেডকর মূর্তির নীচে জওয়ানদের ছবিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বিরোধী দলনেতা মান্নান এবং বাম পরিষদীয় নেতা সুজনবাবু। পরে মোমবাতি নিয়ে ভবনের চারদিকে পদযাত্রা করেন তাঁরা। শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে অবশ্য বিজেপির কোনও বিধায়ক ছিলেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE