Advertisement
E-Paper

প্রতিবাদের মাসুল, নিগ্রহে একাকার বিশিষ্ট ও সাধারণ

শব্দ-তাণ্ডবের প্রতিবাদ করায় রাতবিরেতে হামলা প্রবীণ শিল্পী দম্পতির বাড়িতে। তাঁরা এখনও আতঙ্কে। মেয়েদের নিগ্রহের প্রতিবাদ করায় ফেলে মার দুই যুবককে। তাঁদের এক জন কোমায় আচ্ছন্ন। সরস্বতী পুজোকে কেন্দ্র করে এমনই লাগামছাড়া নৈরাজ্যের সাক্ষী থাকল এ রাজ্য। দু’টি ঘটনাতেই পুলিশের বিরুদ্ধে চরম অসহযোগিতার অভিযোগও উঠে এসেছে। নিগৃহীত শিল্পী দম্পতি হলেন পার্থ ঘোষ ও গৌরী ঘোষ। দ্বিতীয় ঘটনায় আক্রান্ত ও আহত দুই যুবকের নাম অরূপ ভাণ্ডারী ও অভিজিৎ ঘোষ। প্রতিবাদের মাসুল দিয়ে নিগ্রহের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতায় মিলেমিশে গেলেন প্রবীণ শিল্পী এবং সাধারণ নাগরিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৭

শব্দ-তাণ্ডবের প্রতিবাদ করায় রাতবিরেতে হামলা প্রবীণ শিল্পী দম্পতির বাড়িতে। তাঁরা এখনও আতঙ্কে।

মেয়েদের নিগ্রহের প্রতিবাদ করায় ফেলে মার দুই যুবককে। তাঁদের এক জন কোমায় আচ্ছন্ন।

সরস্বতী পুজোকে কেন্দ্র করে এমনই লাগামছাড়া নৈরাজ্যের সাক্ষী থাকল এ রাজ্য। দু’টি ঘটনাতেই পুলিশের বিরুদ্ধে চরম অসহযোগিতার অভিযোগও উঠে এসেছে।

নিগৃহীত শিল্পী দম্পতি হলেন পার্থ ঘোষ ও গৌরী ঘোষ। দ্বিতীয় ঘটনায় আক্রান্ত ও আহত দুই যুবকের নাম অরূপ ভাণ্ডারী ও অভিজিৎ ঘোষ। প্রতিবাদের মাসুল দিয়ে নিগ্রহের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতায় মিলেমিশে গেলেন প্রবীণ শিল্পী এবং সাধারণ নাগরিক।

দমদম বরফকল এলাকায় থাকেন বাচিক শিল্পী পার্থবাবু ও গৌরীদেবী। পার্থবাবুর বয়স ৭৫ এবং গৌরীদেবীর ৭৪। সঙ্গে থাকেন তাঁদের ছেলে অয়ন। দমদম থানা থেকে আক্ষরিক অর্থেই ঢিল ছোড়া দূরত্বে ফ্ল্যাটবাড়িটি। পড়শিরা জানাচ্ছেন, শব্দমাত্রার তোয়াক্কা না করেই সরস্বতী পুজো উপলক্ষে গত চার দিন ধরে তারস্বরে মাইক বাজছিল পাড়ায়। বুধবার মাঝরাতে বিসর্জনের নামে শুরু হয় ‘ডি জে মিউজিক’। তুমুল আওয়াজের চোটে ঘুমোতে পারছিলেন না অসুস্থ গৌরীদেবী এবং তাঁর পরিবার। পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে উঠলে প্রতিবাদ জানান তাঁরা। অভিযোগ, সেই ‘অপরাধে’ই বাড়িতে চড়াও হয় জনা তিরিশেক ছেলে। গালিগালাজের পাশাপাশি ইটবৃষ্টি করে জানলার কাচ ভেঙে, দরজায় লাথি মেরে, এমনকী ওই দম্পতির ছেলে অয়নকে খুনের হুমকি দিয়ে ঘণ্টা তিনেক ধরে তাণ্ডব চালায় তাঁরা। শিল্পী দম্পতির অভিযোগ, রাত পৌনে একটা থেকে বারবার থানায় ফোন করা সত্ত্বেও রাতভর পুলিশের দেখা মেলেনি!

দ্বিতীয় ঘটনাটি হাওড়ার সালকিয়ার। সেখানে অবশ্য বিসর্জনকারীরাই হামলার শিকার। বুধবার রাতেই স্থানীয় একটি সরস্বতী পুজোর বিসর্জন দেখতে রাস্তার দু’ধারে ভিড় জমিয়েছিলেন এলাকার মানুষ। অভিযোগ, সেখানেই কয়েকটি মেয়েকে উত্ত্যক্ত করছিল কয়েক জন যুবক। তাদের আচরণের প্রতিবাদ করেন বিসর্জনের দলের সঙ্গে আসা অরূপ এবং অভিজিৎ। তখনকার মতো গোলমাল থামলেও বিসর্জন দিয়ে ফেরার সময়ে ওঁদের উপরে চড়াও হয় কয়েক জন। সরু গলির পাশে নর্দমায় ফেলে অভিজিৎকে মারধর করা হয়। অরূপ বাঁচানোর চেষ্টা করলে তাঁকেও ঘিরে ধরে ওই যুবকেরা। লোহার রড দিয়ে তাঁর মাথায় একাধিক বার আঘাত করা হয়। গুরুতর জখম অরূপবাবু এখন হাসপাতালে কোমায় আচ্ছন্ন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, হামলাকারীরা সকলেই তৃণমূল সমর্থক। এবং এ ক্ষেত্রেও পুলিশের ভূমিকায় দমদমের সঙ্গে সালকিয়ার ফারাক নেই। নিগৃহীতদের দাবি, হামলার অভিযোগই নিতে চায়নি থানা। প্রতিবাদে স্থানীয় বাসিন্দারা পথ অবরোধ করলে পুলিশ তাঁদেরই গ্রেফতার করেছে বলে অভিযোগ! সিপিএমের মহম্মদ সেলিম এবং কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া একই সুরে অভিযোগ করেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী চান, শাসক দলের পক্ষের লোক হলে তাদের কেশাগ্রও স্পর্শ করা যাবে না! পুলিশ তাই চাকরি বাঁচাতে ব্যস্ত।” বিরোধীদের প্রশ্ন, শাসক দল না হয় নিজেদের আড়াল করবে। কিন্তু মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব বা ডিজি-র মতো প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিরা কি এর পরেও দায়িত্ব পালন করবেন না?

জবাব মেলেনি! অস্বস্তিতে পড়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি শাসক দলের নেতৃত্বও। একান্ত আলাপচারিতায় এক মন্ত্রী শুধু মেনে নিয়েছেন, ঘটনাপ্রবাহ ভাল ইঙ্গিত নয়!

পার্থবাবু-গৌরীদেবীরা সমাজে পরিচিত মুখ বলে তাঁদের ঘটনাটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে সংবাদমাধ্যমে। এই ঘটনাতেও তৃণমূল-ঘনিষ্ঠদের হাত আছে বলে অভিযোগ করে বিজেপি নেতা তথাগত রায়ের মন্তব্য, “পার্থ ঘোষ, গৌরী ঘোষের মতো মানুষ খবর দেওয়া সত্ত্বেও পুলিশ নীরব দর্শক! এ জিনিস কল্পনা করা যায়!” সোশ্যাল সাইটেও ভূরি ভূরি মুখ প্রশ্ন তুলেছে, শহরের বিশিষ্ট দম্পতিরই যদি এই হাল হয়, তা হলে সাধারণ মানুষের সুরক্ষা কোথায় দাঁড়িয়ে?

তখনও অনেকেরই জানা ছিল না, সেই প্রশ্নের উত্তর রয়েছে সালকিয়ায়। নৈরাজ্যের রাজ্যে আমজনতা আর বিশিষ্ট সবাই একই পংক্তিতে।

protest noise pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy