Advertisement
১০ মে ২০২৪

যানজটে থমকে বড়জোড়ার গতি

শিল্পাঞ্চলের তকমা মিলেছে। ব্যস, ওইটুকুই প্রাপ্তি বড়জোড়ার। শিল্প-নগরী দুর্গাপুরের কাছে থাকা এই এলাকায় উন্নয়নের চাকাটা কিন্তু বিশেষ গড়ায়নি। বাঁকুড়া ও দুর্গাপুরের মাঝামাঝি থাকা এই অঞ্চলে ‘নেই’-এর তালিকাটা বেশ দীর্ঘ। নাগরিক পরিষেবা নিয়ে যেমন ক্ষোভ রয়েছে বাসিন্দাদের, তেমনই শিক্ষা-স্বাস্থ্য-পরিবহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত প্রচুর সমস্যা রয়েছে এলাকায়।

একে রাস্তা বেহাল। তার উপরে সঙ্গী নিত্য যানজট। বড়জোড়া চৌমাথায়।

একে রাস্তা বেহাল। তার উপরে সঙ্গী নিত্য যানজট। বড়জোড়া চৌমাথায়।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৩৭
Share: Save:

শিল্পাঞ্চলের তকমা মিলেছে। ব্যস, ওইটুকুই প্রাপ্তি বড়জোড়ার। শিল্প-নগরী দুর্গাপুরের কাছে থাকা এই এলাকায় উন্নয়নের চাকাটা কিন্তু বিশেষ গড়ায়নি। বাঁকুড়া ও দুর্গাপুরের মাঝামাঝি থাকা এই অঞ্চলে ‘নেই’-এর তালিকাটা বেশ দীর্ঘ। নাগরিক পরিষেবা নিয়ে যেমন ক্ষোভ রয়েছে বাসিন্দাদের, তেমনই শিক্ষা-স্বাস্থ্য-পরিবহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত প্রচুর সমস্যা রয়েছে এলাকায়। সেই সব সমস্যার মধ্যে প্রথমেই আসে রাস্তাঘাটের কথা।

যানজটে নাকাল: বড়জোড়া ব্লক সদরের ব্যস্ততম চৌমাথা মোড় সব সময়েই যানজট পূর্ণ। সরু, ঘিঞ্জি রাস্তা, দিনভর অজস্র কল-কারখানার গাড়ি চলাচল করে এই রাস্তা দিয়ে। পাশাপাশি দুর্গাপুরগামী বাসগুলিও বড়জোড়ার উপর দিয়ে যায়। পরিকাঠামোর তুলনায় বেশি যানবাহনের চাপে দিনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলিতে যানজটে স্তব্ধ হয়ে পড়ে বড়জোড়ার চৌমাথার গতি। নিত্য নাকাল যাত্রীরা। বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি রাস্তা চওড়া করা ও চৌমাথায় ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করার। সাদা কাগজে লেখা সেই সব দাবিপত্র স্মারকলিপি হিসেবে একাধিক বার জমা পড়েছে প্রশাসনিক দফতরে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। যানজটের সমস্যা আগেও যেমন ছিল, এখনও তেমন রয়েছে। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, চৌমাথার যানজটের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে কোথাও পৌঁছতেই পারা যায় নায়। শুধু বাসযাত্রী নন, অসুবিধায় পড়েন পথচারীরাও।

বড়জোড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র অমৃত চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “যানজটের কারণে রাস্তা পার হতেও সময় লাগে। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলো নিজের মতো এগোতে থাকে। নিয়মকানুনের কেউ পরোয়া করে না।” ট্রাফিক সিগন্যাল থাকলে বেপরোয়া গাড়িগুলি কিছুটা হলেও নিয়ম মেনে চলত বলে মনে করেন এলাকার বাসিন্দারা। বড়জোড়ার বিধায়ক আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের আশ্বাস, মুখ্যমন্ত্রী এই রাস্তাকে শিল্পের করিডর বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দ্রুত এই সমস্যা মিটে যাবে।

বেহাল নিকাশি: জেলার শিল্পাঞ্চল হওয়ায় রুটিরুজির সন্ধানে আসা লোকের সংখ্যা বাড়ছে বড়জোড়ায়। এলাকায় ধীরে ধীরে গজিয়ে উঠছে নতুন নতুন পল্লি। জেলার সদর বাঁকুড়ায় জমি ও বাড়ির দাম অনেকটাই বেশি বলে, বাঁকুড়া লাগোয়া বড়জোড়ায় জমি-বাড়ির চাহিদাও ক্রমে বাড়ছে। বাঁকুড়ায় কাজ করেন, এমন অনেক মানুষই বড়জোড়ায় বাড়ি করেছেন। বসতি এলাকার পরিসর বাড়লেও সেই অনুযায়ী নিকাশি ব্যবস্থা না থাকাটা সমস্যার। এলাকার পালপাড়া, পঞ্চায়েতপাড়া, কেওটপাড়া, ভট্টাচার্যপাড়ার মতো এলাকায় নিকাশি না থাকায় প্রায়ই জল জমে যায়। একই সমস্যা রয়েছে সদ্য গজিয়ে ওঠা সারদাপল্লি, বনশ্রীপল্লি, বিদ্যাসাগরপল্লির মতো এলাকাতেও। যে সব এলাকায় নালা আছে, সেখানেও নিয়মিত পরিষ্কার না হওয়ায় অনেকের বাড়িতে জল ঢুকে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে বলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ। ফৌজদারপাড়ার নন্দ ফৌজদারের ক্ষোভ, “আমাদের এলাকায় নদর্মা থাকলেও নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। তাই অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তার জল অনেকের বাড়িতে ঢোকে।” বড়জোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান অর্চিতা বিদ জানান, সম্প্রতি পঞ্চায়েত সমিতির টাকায় বড়জোড়ার বনশ্রীপল্লি ও কলেজ রোড এলাকায় হাইড্রেন গড়া হয়েছে। এ ছাড়াও নর্দমা ও রাস্তাঘাট গড়তে পঞ্চায়েতের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে জেলা পরিষদ।

ব্লক অফিসের সামনে বাস দাঁড়াবে বলে বোর্ড দিয়েছে প্রশাসন।
কিন্তু, কোনও বাসই সেখানে দাঁড়ায় না।

ইংরেজি মাধ্যম স্কুল: শিল্পাঞ্চল হওয়ায় দেশের নানা প্রান্তের মানুষ বসবাস করেন বড়জোড়ায়। এলাকায় বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রাথমিক ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল থাকলেও মাধ্যমিক স্তরের ইংরেজি মাধ্যম স্কুল নেই। এখানকার ছাত্রছাত্রীদের ছুটতে হয় প্রায় ৩০ কিলোমিটার দুরের দুর্লভপুরে অথবা দুর্গাপুর শহরে। এই দাবিতে বড়জোড়ায় ইংরেজি মাধ্যম স্কুল গড়ার দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে গণস্বাক্ষরিত স্মারকলিপিও তুলে দিয়েছেন বাসিন্দারা। বড়জোড়া বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের সহ-অধ্যক্ষা সোনালি ঘোষ বলেন, “প্রাথমিক স্তরে আমাদের স্কুলে প্রায় ৩০০ জন ছাত্রছাত্রী আছে। প্রাথমিক পাঠ শেষ করলেই মাধ্যমিক স্তরের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল খুঁজতে হিমসিম খেতে হবে তাদের। এখানে অবশ্যই ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল গড়তে সরকারের পদক্ষেপ করা উচিত।” বড়জোড়ার বিডিও ইস্তেয়াক আহমেদ খান বলেন, “ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল না থাকাটা সত্যিই সমস্যার। বিশেষ করে এখানে বহু অবাঙালি মানুষ বসবাস করেন। আমি ব্লক সদরে ওই ধরনের স্কুল গড়ার বিষয়ে প্রশাসনিক মহলে জানাবো।”

বড়জোড়ার ‘নেই’-এর তালিকা এখানেই শেষ নয়। এলাকায় নেই খেলার মাঠ বা পার্ক। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে গেলে পঞ্চায়েত সমিতির হলঘরই ভরসা, কিন্তু সেখানেও সাউন্ড সিস্টেম ভাল নয় বলে অভিযোগ শিল্পীদের। প্রতিবন্ধীদের বহু আন্দোলনের পরে বড়জোড়া ব্লক অফিসের সামনে বাস দাঁড়াবে বলে ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। পোস্টার দিয়ে সেই নির্দেশ লেখা রয়েছে।

কিন্তু বেসরকারি বা সরকারি, কোনও বাসই সেখানে দাঁড়ায় না। বড়জোড়ার বাসিন্দাদের ক্ষোভ, “ভোটের আগে এই সব সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার করেন ভোটবাবুরা। তারপর আর ফিরেও দেখেন না। শিল্পাঞ্চলের দুর্দশা নিয়ে আখেরে কেউই ভাবেন না।”

ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE