জমি দখল নিয়ে বিবাদের জেরে এক যুবককে নৃশংস ভাবে কুপিয়ে খুন করার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল ১০ জনের। বৃহস্পতিবার এই সাজা ঘোষণা করেন পুরুলিয়া আদালতের ফাস্ট ট্র্যাক ২ আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক প্রশান্তকুমার শীল।
মামলার সরকারি আইনজীবী অজিত সিংহ জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের ৩ জানুয়ারি খুনের ঘটনাটি ঘটেছিল। বাঘমুণ্ডি থানার গাগি গ্রামের বাসিন্দা প্রকাশ কুইরী নিজের সব্জি চাষের জমিতে ট্রাক্টর চালাচ্ছিলেন। পাশে তাঁর দাদা ধ্রুবেশ্বর কুইরী দাঁড়িয়ে কাজের তদারকি করছিলেন। হঠাৎ ওই গ্রামের জনা দশেক লোক কুড়ুল, লাঠি ও অন্যান্য ধারাল অস্ত্র নিয়ে ধ্রুবেশ্বরকে আক্রমণ করে। প্রকাশ দাদাকে বাঁচাতে ছুটে যান। কিন্তু আক্রমণকারীরা তাঁকে ও ধ্রুবেশ্বরকে ধারাল অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। দু’জনকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে আক্রমনকারীরা পালিয়ে যায়। বাড়ির লোকজন ওই দু’জনকে প্রথমে পাথরডি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় তাঁদের ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরের দিন ভোরবেলায় ধ্রুবেশ্বরের মৃত্যু হয়। কিছুদিন চিকিৎসার পরে বেঁচে ফিরে আসেন প্রকাশ।
এ দিকে ঘটনার দিনই জখম দুই সহোদরের এক আত্মীয় ১০ জন হামলাকারীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্তেরা হল: মেঘ সিং মুড়া, যুগল সিং মুড়া, রোহিন সিং মুড়া, নারাণ ওরফে নারায়ণ সিং মুড়া, গুরুপদ সিং মুড়া, বাণেশ্বর সিং মুড়া, ঘাসিরাম সিং মুড়া, রামেশ্বর সিং মুড়া, শ্যামল সিং মুড়া ও বিশ্বম্ভর সিং মুড়া। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে। সেই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আদালতে পুলিশ চার্জশিট পেশ করে। মামলার বিচার শুরু হয় ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।
অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী পুরুলিয়া আদালতে অভিযুক্তদের হয়ে জামিন প্রার্থনা করলে সেই আবেদন মঞ্জুর হয়নি। পরে হাইকোর্ট মামলায় অভিযুক্ত ১০ জনের মধ্যে পাঁচ জনের জামিন মঞ্জুর করে। বাকি পাঁচজনের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানালেও জামিন মেলেনি।
অজিতবাবু জানান, ওই জমি দখল নিয়েই গণ্ডগোলের সূত্রপাত। যদিও জমিটি দুই ভাইয়েরই। কিন্তু অভিযুক্তেরা সেই জমি দখল নেওয়ার চেষ্টা করায় বিরোধ বাধে। সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আদালত অভিযুক্ত সকলকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করেন। সঙ্গে প্রত্যেকের তিন হাজার টাকা করে জরিমানা। এ দিন আদালতে এসেছিলেন ধ্রুবেশ্বরের মা বিশাখা দেবী। রায় শুনে তিনি ছলছল চোখে বলেন, ‘‘আদালতের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে। কিন্তু আমার ছেলেটাকে যে রকম নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছে, তাতে ওঁদের আরও কড়া সাজা হলে তৃপ্তি পেতাম।’’