Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Ranibandh

নেই শৌচাগার, পিষে দিল হাতি

বিষ্ণুপুরের চিৎরঙের ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হল রানিবাঁধে।

নিহত ধরণী সর্দার ও বাসন্তী সিং সর্দার।

নিহত ধরণী সর্দার ও বাসন্তী সিং সর্দার।

সুশীল মাহালি
রানিবাঁধ শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২০ ০০:১৮
Share: Save:

বিষ্ণুপুরের চিৎরঙের ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হল রানিবাঁধে। বাড়িতে শৌচাগার নেই। মাঠে যাওয়ার পথে হাতির হানায় মৃত্যু হল এক মহিলা লোকশিল্পীর। বুধবার সকালে রানিবাঁধের বুধখিলা গ্রামে বাসন্তী সিং সর্দার (৩৪) নামে ওই মহিলার পাশাপাশি এক ঘুমন্ত বৃদ্ধকেও দাওয়া থেকে নামিয়ে আছড়ে মেরেছে হাতি। তাঁর নাম ধরণী সর্দার (৬২)।

বন দফতর জানাচ্ছে, দিন সাতেক আগে ঝাড়গ্রাম থেকে কংসাবতী পার হয়ে ৪২টি হাতি দক্ষিণ বাঁকুড়ায় ঢোকে। ওই দলেরই ২৪টি হাতি বুধবার ভোরে বুধখিলায় ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে। ধরণীবাবু বাড়ির বারান্দায় ঘুমোচ্ছিলেন। চৌহদ্দিতে পাঁচিল নেই। অনায়াসেই হাতির দল ঢুকে পড়ে তাঁকে শুঁড়ে তুলে পা দিয়ে থেঁতলে মারে।

ধরণীবাবুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাতিগুলি প্রায় দেড়শো ফুট দূরের একটি জায়গায় ছিল। সেই সময়ে ওই পথ ধরে বাসন্তীদেবী শৌচের জন্য পুকুরে যাচ্ছিলেন। হাতির মুখোমুখি পড়ে যান। তাঁকে শুঁড়ে তুলে আছাড় মারে হাতি। এর পরেই গ্রাম লাগোয়া একটি পাহাড়ে চলে যায় হাতির দলটি। পথে বহু চাষ-জমি পায়ে মাড়িয়ে নষ্ট করেছে।

ধরণীবাবু ছিলেন ক্ষুদ্র চাষি। তাঁর স্ত্রী আদরিদেবী জানান, বারো মাসই বাড়ির দাওয়ায় কাটানোর অভ্যাস ছিল বৃদ্ধের। সেটা যে প্রাণঘাতী হতে পারে, ভাবনাতেও আসেনি। আদরিদেবী বলেন, “আমরা খুবই গরিব। স্বামীর এ ভাবে মৃত্যুর পরে কী করে দিন চলবে জানি না।’’

বাসন্তীদেবী ছিলেন লোকশিল্পী। বাউল এবং ঝুমুরগানে পারদর্শী। বুধখিলা গ্রামের বাড়িতে স্বামী সুধীর সিং সর্দারের সঙ্গে থাকতেন। বছর দু’য়েক আগে রাজ্য সরকারের ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকল্পে তাঁরা পাকা বাড়ি পেয়েছেন। কিন্তু শৌচাগার হয়নি। সুধীরবাবুর আক্ষেপ, “প্রথম থেকেই বাড়িতে শৌচালয় গড়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলাম জনপ্রতিনিধিদের কাছে। তা না হওয়ায় রোজ ভোরে বাইরে যেতে হত। আজ যদি বাড়িতে শৌচালয় থাকত, তা হলে বাসন্তীকে এ ভাবে মরতে হত না!”

এই ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে, গত ৪ জানুয়ারি বিষ্ণুপুরের বাঁকাদহ রেঞ্জের চিৎরঙ এলাকার ঘটনা। বিষ্ণুপুরের ওই ব্লকটি কাগজে-কলমে ‘নির্মল’ হলেও কোনও বাড়িতেই শৌচালয় গড়া হয়নি। গ্রামের বৃদ্ধ অশোক সর্দার (৬০) বাঁশঝাড়ে শৌচ করতে গিয়ে হাতির হানায় মারা যান।

২০১৮ সালের শেষে দিকে বাঁকুড়া জেলায় মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পের কাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ হয়েছে। তার পরেই প্রশাসনের নজরে আসে, জেলার প্রায় ৮৩,২৩৯টি শৌচালয়বিহীন পরিবার রয়ে গিয়েছে। যার মধ্যে রানিবাঁধেই ৫,৫৮০টি পরিবারের কোনও শৌচালয় নেই। গত বছর থেকেই ধাপে ধাপে ওই পরিবারগুলিকে শৌচালয় গড়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। তবে এখনও বেশির ভাগ কাজই বাকি রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

বিডিও (রানিবাঁধ) শুভদীপ পালিত বলেন, “বুধখিলা গ্রামের ৮০ শতাংশ মানুষের বাড়িতেই শৌচালয় রয়েছে। নতুন যাঁরা সংসার পেতেছেন তেমন কিছু পরিবার, আর জমির সমস্যার জন্য কিছু জায়গায় শৌচালয় গড়ে দেওয়া যায়নি। কাজ শুরু হয়েছে।” তৃণমূলের স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য চিত্তরঞ্জন মাহাতো বলেন, “বাসন্তীদেবীরা গীতাঞ্জলি প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছিলেন। ওই প্রকল্পে বাড়ির সঙ্গে শৌচালয় গড়া যায় না। নতুন করে শৌচালয় প্রাপকদের তালিকায় তাঁদের নাম ছিল।” বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার বলেন, “শৌচালয় গড়ার প্রকল্পে জেলা ব্যর্থ, তা বারবার সামনে এসে যাচ্ছে।”

এ দিকে, হাতির হানায় জোড়া মৃত্যুতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে গ্রামে। বাসিন্দাদের দাবি, যে পরিবারগুলিতে এখনও শৌচালয় হয়নি, দ্রুত সেই কাজ শেষ করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ranibandh Elephant Attack Toilet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE