বোলপুরের বাঁধগোড়ায় বহুতলে আগুন লাগার ঘটনা মিটার বক্স থেকেই হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে দমকল। মিটার বক্স থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বহুতলের নীচের পার্কিংয়ে থাকা একের পর এক মোটরবাইকেও আগুন ছড়ায়। পেট্রল ট্য়াঙ্ক ফাটতে শুরু করে। বাইক দাউদাউ জ্বলতে থাকে। দেখতে দেখতে বহুতলে ছড়িয়ে পড়ে আগুনের লেলিহান শিখা এবং কালো ধোঁয়া।
পুলিশ জানিয়েছে, সেই আগুনে পুড়েই মৃত্যু হয়েছে আবাসনের প্রবীণ দম্পতি স্বপন কুমার নন্দী (৭৫) এবং অঞ্জু নন্দী সেনের(৬৮)। বেশ কয়েক জনকে আবাসন থেকে উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছিল বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে। তাঁদের মধ্যে দু’জনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার তাঁদের দুর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অল্প আহতদের হাসপাতাল থেকে এ দিন ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অক্ষত আবাসিকদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে দু’টি বেসরকারি অনুষ্ঠান ভবনে। তাঁরা সোমবারের সন্ধ্যার ঘটনা এখনও ভুলতে পারছেন না। একই সঙ্গে আবাসনে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকা এবং ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আবাসিকদের একাংশ। ওই বহুতলের একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন তন্ময় মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমি চাকরির সূত্রে বাইরে থাকি। আমার পরিবার এখানে থাকে। খবর শুনে ছুটে এসেছি। প্রতিটা আবাসনে নিজস্ব ব্যবস্থা আছে, এখানে তা নেই। আগুন লাগলে বা এরকম পরিস্থিতি তৈরি হলে কী করতে হবে, তা আমাদের কেউ দেখিয়ে বা বুঝিয়ে দেইনি।” সুজাতা কোঁড়া নামে এক যুবতী একটি ফ্ল্যাটে গৃহকর্মের সঙ্গে যুক্ত।ওই পরিবারের সঙ্গেই থাকেন। তাঁর কথায়, ‘‘মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। কালো ধোঁয়ায় ভরে গেল চারপাশ। আবাসনে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা নেই।’’ আবাসনের দায়িত্বে থাকা কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করা যায়নি।
সোমবার রাতেই ব্যারিকেড লাগিয়ে বহুতল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার সকাল থেকে আবাসনের সামনে ভিড় জমান শহরের বহু মানুষ।আবাসন থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে ফরেন্সিক দলের আসার কথা থাকলেও তারা এসে পৌঁছয়নি। আজ, বুধবার ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা আসবেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, “কী ভাবে এত বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে আমরা দেখছি, ওই আবাসনের অগ্নি নির্বাপণের সমস্ত ব্যবস্থা ছিল কি না। যদি কোনও গাফিলতি থেকে থাকে, তা হলে আবাসন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গত শুক্রবারই বোলপুরের স্কুলবাগান এলাকার একটি বহুতলে আগুন লেগে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। সেখানেও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল দমকল। ফের একই ঘটনা ঘটল শহরে। এবং চলে গেল দু’টি প্রাণ।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)