নামেই ‘সুপার স্পেশালিটি’। অথচ জনস্বাস্থ্যের গুণগত মাপকাঠিতে কার্যত ‘অকৃতকার্য’ বাঁকুড়া স্বাস্থ্য-জেলার আওতায় থাকা ঝাঁ চকচকে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালগুলি! খোদ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সমীক্ষায় তিনটি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের প্রাপ্ত ‘নম্বর’ কার্যত লজ্জায় ফেলেছে স্বাস্থ্যকর্তাদের। খাতড়া মহকুমা হাসপাতালের অবস্থাও তথৈবচ।
বাঁকুড়া স্বাস্থ্য-জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শ্যামল সরেনের তবে দাবি, “হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির মানোন্নয়নে নানা পরিকল্পনা নিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। ধাপে ধাপে সেগুলি বাস্তবায়িত হবে। এমনিতে ওই হাসপাতালগুলি থেকে বহু রোগীই ভাল পরিষেবা পাচ্ছেন। তবে গুণগত মান আরও বাড়ানোর লক্ষ্য নেওয়া হচ্ছে।”
সূত্রের খবর, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে একটি বিশেষজ্ঞ দল গড়ে বিভিন্ন সুস্বাস্থ্যকেন্দ্র, ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, মহকুমা বা জেলা হাসপাতালের পরিকাঠামো ও পরিষেবা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে ভারতীয় জনস্বাস্থ্য মানের মাপকাঠিতে যাচাই করা হয়। বাঁকুড়া স্বাস্থ্য-জেলার আওতায় তিনটি সুপার স্পেশালিটি ও একটি মহকুমা হাসপাতাল রয়েছে। সেখানে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে ওন্দা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল (৪৪.৭৪ শতাংশ)। তার পরে রয়েছে যথাক্রমে ছাতনা সুপার স্পেশালিটি (৪৩.৪০ শতাংশ) ও খাতড়া মহকুমা হাসপাতাল (৪০.১ শতাংশ)। সব চেয়ে নীচে রয়েছে বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল (৩৬.৫ শতাংশ নম্বর)। সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, তিনটি সুপার স্পেশালিটি ও খাতড়া মহকুমা হাসপাতালে ৫০ শতাংশ পরিষেবাও সচল নেই। সমীক্ষা চলাকালীন হাসপাতালগুলিতে মজুত ওষুধ যথেষ্ট ছিল না। পরিকাঠামো ও রোগী পরিষেবার মাপকাঠিতেও খুব নিম্ন মান ধরা পড়েছে।
ঘটনা হল, বাঁকুড়া মেডিক্যালের উপরে রোগীর চাপ কমাতে ও সাধারণ মানুষকে নিজের এলাকার কাছাকাছি পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালগুলি গড়েছিল রাজ্য সরকার। এত বছর পার করেও কেন ওই হাসপাতালগুলির পরিষেবার মান বাড়ানো গেল না, প্রশ্ন উঠছে। ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। বাঁকুড়ার প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার রাজ্য সরকারের নীতিকে তোপ দেগে প্রশ্ন তুলছেন, “পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শুধু বেহাল নয়, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। হাসপাতালগুলি ডাক্তার, নার্স, চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর অভাবে ধুঁকছে। কোনও নিয়োগ নেই। এ ভাবে আর কত দিন চলবে!” তাঁর আরও দাবি, অবিলম্বে রাজ্য সরকারের উচিত স্বাস্থ্য দফতরের জন্য এক জন পূর্ণ মন্ত্রী নিয়োগ করা।
যদিও তাঁর মন্তব্যকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবি করেছেন বাঁকুড়ার তৃণমূল সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র—সব ক্ষেত্রেই আমূল সংস্কার হয়েছে। সর্বত্র রোগীদের চিকিৎসার পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। বহু প্রান্তিক মানুষদেরই আর চিকিৎসার জন্যবাঁকুড়া মেডিক্যালে আসতে হয় না। পরিকাঠামোর উন্নয়ন ক্রমানুযায়ী হয়েই চলেছে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)