Advertisement
E-Paper

উড়ালপুলে ভয় বাড়াচ্ছে মামুলি ঘুঁটেই 

জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় সিংহ জানিয়েছেন, সেতুর দেওয়ালে ঘুঁটে তাঁদের নজরে এসেছে।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
ক্ষয়: সেতুর স্তম্ভে। ছবি: সুজিত মাহাতো।

ক্ষয়: সেতুর স্তম্ভে। ছবি: সুজিত মাহাতো।

থামের গায়ে ঘুঁটে। সিমেন্ট-বালি খসে বেরিয়ে পড়েছে লোহার র়ড। দেওয়ালের ফাটল ফুঁড়ে ডালপালা মেলছে আগাছা। পুরুলিয়া শহরে ঢোকার মুখে রেল লাইনের উপরে এমনই হাল উড়ালপুলের।

নীচে পুরুলিয়া-কোটশিলা আর আদ্রা-চান্ডিল রেল লাইন। উপরে সেতু দিয়ে চলে গিয়েছে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া (৬০ এ) জাতীয় সড়ক। সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। তবে তাঁরা জানাতে পারেননি, কবে ওই সেতু তৈরি হয়েছিল। প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, সেতু যখন হয়েছিল তখন ওই রাস্তা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের অধীনে ছিল না। পরে আসে।

শহরের কাউন্সিলর বিভাস দাস বলেন, ‘‘সেতুটি নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি গড়ে উঠেছিল বলে জানি। এখন কী অবস্থায় রয়েছে সেটা দেখার জন্য জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছি।’’

কলকাতার মাঝেরহাটে সেতু ভেঙে পড়ার পরে এই সেতু নিয়েই এখন চিন্তা বেড়েছে এলাকার মানুষজনের। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, গত জুলাইয়ে এই সেতু পরিদর্শন করা হয়েছে। কলকাতার দুর্ঘটনার পরে আরও এক বার পরিদর্শন হয়েছে। কিছু সমস্যা তাঁদের নজরে এসেছে। তবে সে সব খুব গুরুতর নয় বলেই দাবি করা হয়েছে।

এলাকায় গিয়ে চোখে যেটা দেখা গেল, তা হল— ৫৩৩ মিটার দীর্ঘ সেতুটি অনেক গুলি থামের উপরে দাঁড়িয়ে। ওঠার মুখেই ঝোপ। কোথাও আঙুল দিতেই ঝুরঝুর করে খসে প়ড়ছে পলেস্তরা। থামের নীচ ফুঁড়ে মাথা চাড়া দিয়েছে আগাছা। সেতুর গায়ে ফাটল। একাধিক থামের নীচে ঘুঁটে দেওয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, দীর্ঘ দিন ধরেই এমনটা চলে আসছে।

গোবর নেহাত মামুলি ব্যাপার নয়, ঘুঁটে থেকেও সেতুর বড়সড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে বলে মত কেন্দ্রীয় সরকারের জাহাজপুর কল্যাণ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বরিষ্ঠ বিজ্ঞানী মানস ভট্টাচার্যের।

কী ভাবে?

তিনি জানাচ্ছেন, গবাদি পশুর চারটি পাকস্থলী থাকে। তার একটির নাম রুম্যান। অন্য একটি হল অ্যাবোমাসাম। সেলুলোজ জাতীয় খাবার হজম করাতে রুম্যান থেকে অ্যাসিটোঅ্যাসিটিক অ্যাসিড এবং বিটাহাইড্রোক্সি বিউটারিক অ্যাসিড বেরোয়। অ্যাবোমাসাম পাকস্থলীতে তৈরি হয় হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড। গোবরে এই অ্যাসিডগুলির উপস্থিতি থাকে।

সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের শিক্ষক সুব্রতকুমার দে জানাচ্ছেন, ঘুঁটে তৈরির সময়ে গোবরে জল মেশালে একটা আম্লিক মিশ্রণ তৈরি হয়। সেটা সিমেন্টের উপাদানগুলির সঙ্গে বিক্রিয়া করে কংক্রিটের বাঁধন আলগা করে দেয়। দীর্ঘ দিন সিমেন্টের দেওয়ালে ঘুঁটে দেওয়া হলে নির্মাণ দুর্বল হয়ে যেতে পারে বলে তাঁর মত।

জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় সিংহ জানিয়েছেন, সেতুর দেওয়ালে ঘুঁটে তাঁদের নজরে এসেছে। এই ব্যাপারে পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

সেতুর উপরে দু’দিকে ফুটপাত। তার ধার ঘেঁষে মেঝে থেকে আড়াই-তিন ফুট খাড়া কংক্রিটের স্ল্যাব বসানো হচ্ছিল। কিন্তু এই অবস্থায় সেতুর ভার আরও বাড়ানো ঠিক হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, মাঝেরহাটের দুর্ঘটনার পরে সেই কাজ আর হতে দেখা যাচ্ছে না। এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় অবশ্য বলছেন, ‘‘স্ল্যাবগুলি তো এক জায়গায় দেওয়া হচ্ছে না। গোটা সেতু জুড়েই লাগানো হচ্ছে। ফলে পুরো ভারটা ছড়িয়ে থাকবে।’’

সঞ্জয় জানিয়েছেন, ওই সেতুটি নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রয়েছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সেটি নিরাপদ চেহারাতেও ফিের আসুক।

cow dung cake Acid Flyover গোবর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy