প্রশাসনে আর্জি জানিয়েও কাজ হয়নি। নিয়মের গেরোয় আটকে গিয়েছে ভাতা। তাই দুঃস্থ বিধবাকে ভাতা দেওয়ার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিল এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
ময়ূরেশ্বরের রসুনপুর গ্রামের বছর আটত্রিশের ওই বিধবার নাম সোহাগী মণ্ডল। বছর খানেক আগে তাঁর স্বামী শত্রুঘ্ন মণ্ডল ক্যানসারে মারা যান। তারপর থেকেই কার্যত আকাশ ভেঙে পড়ে সোহাগীদেবীর মাথায়। কারণ স্বামী ছিলেন প্রান্তিক চাষি, সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর জীবদ্দশাতেই একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিতেই নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল তাঁর যাবতীয় সঞ্চয়, সম্বল। তার উপরে ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ঘটিবাটি পর্যন্ত বিকিয়ে যায়। তারপর থেকেই কার্যত কোনওরকমে দিন চলছে সোহাগীদেবীর।
স্থানীয় পঞ্চায়েতে ভাতার আবেদন করেও কোনও কাজ হয়নি নিয়মের গোরোয়। সরাসরি পঞ্চায়েতে সাধারণত ইন্দিরা গাঁধী জাতীয় বিধবাভাতা প্রকল্পে আবেদনপত্র জমা নেওয়া হয়। নিয়মানুযায়ী, বিপিএলের স্থায়ী অপেক্ষামান তালিকাভুক্ত ৪০ বছর বয়স্ক বিধবারাই ওই প্রকল্পে ভাতা পাওয়ার অধিকারী বলে বিবেচিত হন। কিন্তু দুটি শর্তই সোহাগীদেবীর ক্ষেত্রে পূরণ হয়নি। বয়সের পাশাপাশি আটকে গিয়েছে অন্য শর্তটিও। স্বামী বেঁচে থাকাকালীন সরকারি সমীক্ষায় সোহাগীদেবীদের যে আর্থিক স্থিতি ধরা পড়েছিল তাতে বিপিএল তালিকায় তাঁদের ঠাঁই হয়নি। কিন্তু স্বামী মারা যাওয়ার পরে সেই স্থিতি তলানিতে পৌঁছলেও সোহাগী আজও এপিএল তালিকাভুক্তই রয়েছেন। তাই তাঁর ভাতা মঞ্জুর হয়নি বলে অভিযোগ।
সেই খবর শোনার পরই সোহাগীদেবীর পাশে দাঁড়ায় স্থানীয় ষাটপলশা রাঙামাটি পল্লি উন্নয়ন সমিতি। প্রতি মাসে ৫০০ টাকা হারে ভাতা দেওয়ার দায়িত্ব নেয় তারা। এ দিনই সংশ্লিষ্ট ঢেকা পঞ্চায়েতের প্রধান মিঠু গড়াইয়ের মাধ্যমে ৫০০ টাকা এবং একটি শাড়ি তুলে দেন সোহাগীদেবীর হাতে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এ হেন সহমর্মিতায় আপ্লুত সোহাগীদেবী। তিনি জানান, পঞ্চায়েতে আবেদন করেও ভাতা মেলেনি। তাই চরম অর্থকষ্টে দিন কাটছিল তাঁর। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় তা কিছুটা লাঘব হবে। মিঠুদেবী বলেন, ‘‘নিয়মের বিধি নিষেধের জন্যই আমরা সোহাগীদেবীর জন্য ভাতার ব্যবস্থা করতে পারিনি। তবে বিকল্প কিছু করা যায় কিনা তা দেখার জন্য বিডিও-কে জানাব।’’
এই সহমর্মিতা অবশ্য ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রথম নয়। এর আগেও টানা এক বছর ধরে ওই পঞ্চায়েতেরই কুলিয়ারা গ্রামের এক বৃদ্ধাকে একই হারে প্রতি মাসে ভাতা দিয়েছে তাঁরা। পঞ্চায়েত বার্ষিক রিপোর্টে ওই বৃদ্ধাকে মৃত দেখানোয় তাঁর ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। তারপরের থেকেই তাঁর ভাতার ব্যবস্থা করে ওই সংস্থা। সম্প্রতি তাঁর ভাতা চালু হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক হলধর মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই বৃদ্ধার ভাতা চালু হওয়ার পরেই আমরা সোহাগীদেবীকে সেই টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। যতদিন না তাঁর সরকারি ভাতা চালু হয় ততদিন সংস্থার তরফ থেকেই তা দেওয়া হবে।’’ ময়ুরেশ্বের ২ নং ব্লকের বিডিও সৈয়দ মাসুদুর রহমান বলেন, ‘‘ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে ধন্যবাদ। ওই বিধবা আবেদন করলে সমাজকল্যাণ দফতরের বিধবাভাতার ব্যবস্থা করা হবে। ওই দফতরের ভাতায় ১৮ বছর বয়স হলেই হবে। বিপিএল তালিকাভুক্ত না হলেও চলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy