Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
WBSEDCL

জোড়া মৃত্যুর পরে উঁচু হচ্ছে তার

ধান কাটার যন্ত্র নিয়ে ফেরার পথে রাস্তার উপরে থাকা ১১ হাজার ভোল্ট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎবাহী তারের সংস্পর্শে এসে দুই যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় রবিবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল সদাইপুরের রেঙ্গুনি গ্রাম।

WBSEDCL

তার উঁচু করার কাজ চলছে। সোমবার রেঙ্গুনি গ্রামে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সদাইপুর শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২৩ ০৭:৪৪
Share: Save:

একদিকে পুলিশকে হেনস্থা ও কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করল পুলিশ। অন্য দিকে, পুলিশি পাহারায় রাস্তার উপরে থাকা উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎবাহী তার উপরে তোলার কাজ শুরু করল বিদ্যুৎ দফতর।

রবিবার সদাইপুর থানা এলাকার রেঙ্গুনি গ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় পর এটাই ছিল সোমবারের ছবি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নাম না করে ২০০-২৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হলেও কেউ গ্রেফতার হননি। পুলিশি পাহারায় বিদ্যুৎকর্মীরা শন্তিপূর্ণ ভাবে তাঁদের কাজ করতে পেরেছেন।

ধান কাটার যন্ত্র নিয়ে ফেরার পথে রাস্তার উপরে থাকা ১১ হাজার ভোল্ট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎবাহী তারের সংস্পর্শে এসে উত্তরপ্রদেশেদের দুই যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় রবিবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল সদাইপুরের রেঙ্গুনি গ্রাম। স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল, বিদ্যুৎ দফতরকে বহুবার বলা সত্ত্বেও নীচু হয়ে ঝুলে থাকা তার সরায়নি দফতর। দেহ উদ্ধারে গিয়ে স্থানীয়দের হেনস্থার মুখে পড়ে পুলিশ। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে থাকে উত্তেজিত জনতা। ইটের ঘায়ে এবং পড়ে গিয়ে দুই পুলিশ কর্মী জখম হন।

এ দিন পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়, তদন্তে নেমে ওই ঘটনার পিছনে ভিন্ন সমীকরণ পেয়েছে পুলিশ ও বিদ্যুৎ দফতর। বিদ্যুৎ দফতরের কর্তাদের দাবি, ওই এলাকায় বিদ্যুৎ চুরিতে ঘটনায় একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে ক্ষোভ ছিল। পুলিশ মনে করছে ওই এলাকায় কয়লা পাচারে ধরপাকড় চলছিল। সেই ক্ষোভ থেকে পুলিশকে নিশানা করা হয়েছে। স্থানীয়দের অবশ্য দাবি, ঝুলে থাকা তার দীর্ঘদিন না সরানো নিয়ে নিজেদের গাফিলতি ঢাকতে এ সব কাল্পনিক যুক্তি সাজাচ্ছে বিদ্যুৎ দফতর ও পুলিশ। বিদ্যুৎ বা কয়লা চুরি হলেও তা দিয়ে দুই যুবকের মৃত্যুতে বিদ্যুৎ দফরের গাফিলতি ঢাকা যায় না বলে স্থানীয়দের দাবি।

রবিবার অবশ্য তার ঝুলে থাকার কথা মানতে চাননি জেলা বিদ্যুৎ দফতরের আঞ্চলিক অধিকার্তা কৃষ্ণকুমার মিশ্র। সোমবারও সেই একই দাবি করছেন দফতরের আরেক কর্তা। ওই কর্তার দাবি, ‘‘নিয়ম অনুয়ায়ী বিদ্যুতের খুঁটি গুলি ২০ ফুট উচ্চতার থাকে। দু’টি খুঁটির মাঝের তারের অংশ চার পাঁচ ফুট নেমে যায়। এখানেও তাই ছিল। রাস্তা সংস্কারের ফলে উচ্চতা বেড়ে যাওয়া তার নিচু মনে হচ্ছে।’’ ওই কর্তার আরও দাবি, ‘‘লরির উপর ধান কাটার যন্ত্রটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে তার উচ্চতা অনেকটাই বেশি হয়ে ছিল। অসাবধানতায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।’’ বাসিন্দারা তার সরানোর আবেদন করেননি বলেও দাবি তাঁর।

রেঙ্গুনি গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, সালুঞ্চি থেকে ওই গ্রামের রাস্তা যে কিছুটা উঁচু হয়েছে তা অস্বীকার করা যাবে না। তবে তা হলেও দায় এড়াতে পারে না বিদ্যুৎ দফতর। বিদ্যুৎ দফতরকে সে কথা জানানো হয়েছিল বলেও পাল্টা দাবি স্থানীয়দের। বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘দুর্ঘটনার পর আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের লোক জমায়েত হয়। দাবি উঠতে থাকে দেহ উদ্ধারের আগে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্তাদেরকে আসতে হবে। পুলিশকে হেনস্থা করার পরিকল্পনা ছিল না। হতে পারে পুলিশ আসতে ভিড়ের মাঝে কেউ প্ররোচনা দিতেই অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে যায়। তবে রেঙ্গুনি গ্রামের কেউ পুলিশি হেনস্থায় যুক্ত নন।’’ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘দুই যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় কোনও ভাবেই দায়ী ছিল না পুলিশ। তা সত্ত্বেও যে ভাবে পুলিশকে হেনস্থা করা হয়েছে সেটা আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার শামিল। সেই দৃশ্য মোবাইলে বন্দি হওয়ায় দোষীদের চিহ্নিত হয়েছে। তা দেখেই দোষীদের খোঁজ চলছে।’’

গ্রাম সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্যুৎ দফতর ও পুলিশকে কাজ করতে না দিলে আরও সমস্যা হবে বুঝতে পেরে রবিবার রাতেই আলোচনা হয়। তারপরই সোমবার সকাল থেকে কাজ শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ দফতর জানিয়েছে, গোটা এলাকায় যেখানে রাস্তা উঁচু হয়েছে, বা মাটি সরে যাওয়ায় খুঁটি হেলে তার ঝুলে পড়েছে তা ঠিক করতে লাগাতার কাজ হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

WBSEDCL Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE